অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ফাইল ছবি
টানা চার দিন পড়ার পরে মঙ্গলবার সামান্য উঠল টাকার দর। ১৪ পয়সা পড়ে ডলার থামল ৮১.৫৩ টাকায়। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বারবারই বলছেন, অন্যান্য দেশের মুদ্রার তুলনায় টাকা ভাল জায়গায় রয়েছে। এ দিন আর্থিক বিষয়ক সচিব অজয় শেঠ বলেছেন, বিদেশ থেকে লগ্নি আসা কমলেও এবং বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লেও চিন্তার কিছু নেই। পরিস্থিতি সামলানোর মতো যথেষ্ট বিদেশি মুদ্রা রয়েছে ভারতের হাতে। কিন্তু সূত্রের খবর, অর্থ মন্ত্রকের বহু কর্তাই স্বীকার করছেন, টাকা নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে। গত এক বছরে ডলারের নিরিখে টাকা ১২% পড়েছে। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় ডলারের দাম বেড়েছে ২৪ টাকা। টাকার দাম ধরে রাখতে বাজারে টানা ডলার বিক্রি করছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে গত এক মাসে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার ২৬০০ কোটি ডলার কমে নেমেছে ৫৪,৫০০ কোটিতে। এই সব পরিসংখ্যানেই বাড়ছে চিন্তা।
আমদানি খরচ মেটানোর পাশাপাশি অর্থনীতির ঝড়-ঝাপ্টা সামলাতে বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার কাজে লাগে। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, ‘‘যথেষ্ট পরিমাণে ডলার না থাকলে সব থেকে বেশি সমস্যা হবে অশোধিত তেল, শিল্পের কাঁচামাল-সহ বিভিন্ন জরুরি পণ্য আমদানিতে। যা ১৯৯০ সালে দেখা গিয়েছিল। ডলার বেচে টাকার দাম ধরে রাখার চেষ্টা কতটা ফল দেবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, বিশ্ব জুড়ে ডলারের চাহিদা বাড়লে তার দাম বাড়বেই। কোনও দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের পক্ষেই তা রোখা সম্ভব নয়।
এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ অভীক বড়ুয়া বলছেন, আরবিআই-এর এখন ডলারের আমদানি বাড়ানো জরুরি। কিন্তু টাকার দাম ধরে রাখতে ডলার বিক্রি এড়ানোও মুশকিল। তাই অনাবাসীদের দেশে ডলার পাঠানোয় উৎসাহ দেওয়া-সহ আরও কিছু পথ বার করতে হবে। শীর্ষ ব্যাঙ্ককে দেখতে হবে টাকার দাম যেন এতটাই না-পড়ে যা দেশের অর্থনীতিতে সমস্যা তৈরি হয়।
অর্থনীতির সঙ্গে পড়তি টাকা রাজনৈতিক দিক দিয়েও মোদী সরকারের মাথাব্যথা হতে পার বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের। তাদের ব্যাখ্যা, এ বছরের শেষে গুজরাত এবং হিমাচলপ্রদেশে ভোট। সে কথা মাথায় রেখে দেওয়ালিতে তেলের দাম কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু টাকা এতটা দুর্বল থাকলে সেই পরিকল্পনা ধাক্কা খেতে পারে। পাশাপাশি, মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ বাড়ানোয় ঋণের মাসিক কিস্তির খরচ বাড়বে। যা শিল্প এবং সাধারণ মানুষের কাছেও উদ্বেগের।
সম্প্রতি নির্মলা স্বীকার করেছেন, দুর্বল টাকার সুবিধা রফতানিতে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। কারণ, বিশ্ব বাজারে চাহিদা কম। অনেকে বলছেন শেয়ার বাজারও যে ভাবে পড়ছে, তাতে উদ্বেগ বাড়ছে লগ্নিকারীদের।
এই অবস্থায় অর্থমন্ত্রীকে বিঁধে বিরোধী কংগ্রেসের অভিযোগ, ২০১৩ সালে টাকার দর পড়ার সময়ে নির্মলাই বলতেন, অর্থনীতির ভিত যে দুর্বল হয়েছে টাকার পতনই তার প্রমাণ। আর এখন বলছেন, অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় টাকা ভাল করছে! কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতের বক্তব্য, ‘‘মোদীজির দৌলতে টাকা এখন ঐতিহাসিক তলানিতে। ২০১৩ সালে টাকার দাম পড়লেও তখন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন মিলে চার মাসের মধ্যে ফের তাকে টেনে তুলেছিলেন। এ বার অনুরোধ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেন ডলারকে সেঞ্চুরি করা থেকে আটকান।’’