Reserve Bank of India

ঋণপত্র কিনে রাজ্যের পাশেও দাঁড়ানোর বার্তা

সম্প্রতি অতিমারির জেরে জিএসটি আদায় কমার যুক্তিতে রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৩৮
Share:

ফাইল চিত্র।

কেন্দ্র বাজার থেকে ধার নিতে ঋণপত্র বেচে। আর তাদের পাশে দাঁড়াতে সেই ঋণপত্র কিনতে বিপুল টাকা ঢালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। শুক্রবারের ঋণনীতি ঘোষণায় আবারও সেই পথে হাঁটার কথা বলেছে তারা। তবে এতদিন শুধু কেন্দ্রকে তহবিল জোগানোই এই পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল। এ দিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের বার্তা, রাজ্যগুলিকে আর্থিক সাহায্য করতেও তাদের ছাড়া ঋণপত্র কেনা হবে। রাজ্যগুলিকে অর্থ মন্ত্রকের জিএসটি ক্ষতিপূরণ না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত ও বদলে তাদের বাজার থেকে ধার করার প্রস্তাব দেওয়ার পরে আরবিআইয়ের এই পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের কটাক্ষ, আরও একবার শীর্ষ ব্যাঙ্ককে ঢাল করে নিজেদের খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করল মোদী সরকার।

Advertisement

সম্প্রতি অতিমারির জেরে জিএসটি আদায় কমার যুক্তিতে রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। বদলে ক্ষতি ভরতে তাদের বাজার থেকে ধারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এনিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। তবে ২১টি রাজ্য উন্নয়ন-সহ বিভিন্ন খাতে খরচের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করতে ধারে রাজি। এই অবস্থায় রাজ্যগুলির পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক।

এই অর্থবর্ষে সরকার ধার করবে ১২ লক্ষ কোটি টাকা। প্রথমার্ধে ৭.৬৬ লক্ষ কোটি নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে নেবে ৪.৩৪ লক্ষ কোটি। খোলা বাজার থেকে ২০ হাজার কোটির ওই ঋণপত্র কেনাই লক্ষ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। তা কেনা হবে রাজ্যগুলিকে ধার দেওয়ার জন্যেও। কেন্দ্র ও রাজ্য, দু’পক্ষই ঋণ নেবে বন্ড, বাণিজ্যিক পত্র, ডিবেঞ্চার ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্র বাজারে ছেড়ে। তবে রাজ্যগুলির ছাড়া ঋণপত্র কেনার জন্য কত টাকা বরাদ্দ, তা জানায়নি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। গভর্নর শক্তিকান্ত দাস শুধু বলেছেন, তাঁরা টাকা ঢাললে বন্ডের বাজার চাঙ্গা হবে। অন্য লগ্নিকারীরাও আগ্রহী হবেন।

Advertisement

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি

সুদ ঘোষণা

• রেপো রেট (যে সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ নেয় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক) ৪ শতাংশে অপরিবর্তিত।

• রিভার্স রেপো রেটও থাকছে ৩.৩৫%।

• তবে অর্থনীতির উন্নতির জন্য যত দিন প্রয়োজন (অন্তত চলতি ও পরের অর্থবর্ষে তো বটেই) সুদ ছাঁটাইয়ের পথ খোলা।

• ভবিষ্যতেও বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে সব রকম ব্যবস্থা নেবে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।

সতর্কবার্তা

• দেশে-বিদেশে অতিমারির ধাক্কায় চলতি অর্থবর্ষে (২০২০-২১) ভারতের জিডিপি কমতে পারে ৯.৫%।

• এমনকি পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। অর্থাৎ আরও বেশি সঙ্কোচনের আশঙ্কা।

• খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার গত সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে দাঁড়াতে পারে ৬.৮%, যা বিপদসীমার উপরে। তবে আগামী মার্চে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

পদক্ষেপ

• আগামী ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নতুন গৃহঋণে ব্যাঙ্কে ঝুঁকি স্থির করার মাপকাঠি শিথিল। ফলে ঋণে সুদের হার ঠিক হবে ফ্ল্যাট-বাড়ির (যে সম্পত্তি কেনা হচ্ছে) দামের নিরিখে ক্রেতা কত টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ধার করছেন, তার ভিত্তিতে। অর্থাৎ যত কম ধার, তত কম সুদ। এতে বেশি ঋণ নিতে আগ্রহী হবেন ক্রেতা, তা দিতে উৎসাহ পাবে ব্যাঙ্কও।

• ডিসেম্বর থেকে ২৪ ঘণ্টাই লেনদেন করা যাবে আরটিজিএস মারফত।

• রফতানিকারী সংস্থাগুলিকে বিদেশী ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনার সুবিধা করতে নজরদারির শর্ত শিথিল।

• কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যগুলিকে আর্থিক সাহায্য করতেও বাজার থেকে ঋণপত্র কিনবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

• ৩১ মার্চ পর্যন্ত রেপো রেটে তিন বছর মেয়াদের ১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের সুবিধা ব্যাঙ্কগুলিকে।

এ দিন রেপো রেটে (যে সুদে স্বল্প মেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক) ব্যাঙ্কগুলিকে তিন বছর মেয়াদে মোট ১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু শর্ত, ওই টাকা ঋণপত্রে ঢালতে হবে। আর তা করতে হবে সাধারণ ভাবে ব্যাঙ্কগুলি ওই খাতে যে লগ্নি করে, তার অতিরিক্ত হিসেবে। ঋণের খরার মধ্যে দাঁড়িয়ে এতে খুশি ব্যাঙ্কিং মহল। রেপো রেটের মতো কম সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ঋণ পেয়ে তারা ওই টাকা তার থেকে অনেক বেশি সুদে ঋণপত্রে খাটানোর সুযোগ পাবে। খুশি ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিও। কারণ, তারাও কম সুদে মূলধন সংগ্রহের সুযোগ পাবে।

এ দিন রফতানিকারীদের সুরাহা দেওয়ার চেষ্টাও করেছে আরবিআই। এখন রফতানিকারী বিদেশে পণ্য পাঠানোর পরে ক্রেতা দু’বছরের মধ্যে দাম না-মেটালে, ওই রফতানিকারীর নাম আপনা থেকেই ‘সতর্ক তালিকায়’ ওঠে। তিনি ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেনদেন করতে পারেন না। সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে ব্যাঙ্কের সঙ্গে রফতানিকারী লেনদেন করেন, তারা বললে তবেই তালিকায় নাম উঠবে এ বার। ইইপিসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান রাকেশ শাহ বলেন, অনেক সময় ক্রেতা দাম মেটালেও খবর রাখত না রফতানি দফতর। ফলে তালিকায় নাম উঠে যেত। হয়রানির মুখে পড়তেন রফতানিকারী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement