বৃদ্ধির নাম জপতে বাধা ঘাটতির ভূত

মোদী সরকার ক্ষমতায় ফিরতেই বণিকসভাগুলির দাবি, আয়করের বোঝা কমানো হোক। কারণ,  দেশের বাজারে চাহিদায় ভাটা। বিশেষত গ্রামের বাজারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯ ০২:৪৩
Share:

চ্যালেঞ্জ: বাজেটে হাঁটতে হবে ভারসাম্যের সরু দড়িতে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। পিটিআই

বৃদ্ধি বেহাল। ভাটার টান কেনাকাটায়। সমস্যার সমাধানে শিল্পমহলের দাবি, আয়করের বোঝা কমুক। যাতে হাতে টাকা বেশি থাকে। কেনাকাটা বাড়ে। চাঙ্গা হয় অর্থনীতি। শিল্পের জন্য পুঁজির ব্যবস্থা করতে ইকুইটিতেও কর কমাক সরকার।

Advertisement

সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে বণিকসভা সিআইআইয়ের কর্তারা যখন এই সমস্ত দাবি তুলছেন, তখন নর্থ ব্লকে ঠিক উল্টো ছবি। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা নতুন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে বোঝাচ্ছেন বাজেটে কোনও উপহারের পথে না হাঁটতে। কারণ, কর ছাড় দিতে গেলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে না। বেড়ে যাবে রাজকোষ ঘাটতি।

মোদী সরকার ক্ষমতায় ফিরতেই বণিকসভাগুলির দাবি, আয়করের বোঝা কমানো হোক। কারণ, দেশের বাজারে চাহিদায় ভাটা। বিশেষত গ্রামের বাজারে। বণিকসভা ফিকি-র দাবি ছিল, বছরে ১০ লক্ষের বদলে ২০ লক্ষ টাকা আয়ের উপরে ৩০% কর চাপানো হোক। আজ সিআইআই প্রেসিডেন্ট বিক্রম কির্লোস্কর বলেন, ‘‘৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত রাখা হোক।’’ সেই সঙ্গে কর্পোরেট করও ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি তুলেছে ফিকি, সিআইআই।

Advertisement

বণিকসভার দাবি
• বৃদ্ধির হার চাঙ্গা করতে আগে বাজারে চাহিদায় ভাটা কাটা জরুরি। তা করতে আয়করের বোঝা কমানো হোক।
• কর্পোরেট কর কমে হোক ২৫%। তাতে প্রয়োজনে তুলে দেওয়া হোক শিল্পকে দেওয়া অন্য সমস্ত ছাড়।
• ইকুইটিতেও কমুক করের বোঝা। তাতে কিছুটা হলেও সহজ হবে শিল্পের জন্য পুঁজি জোগাড়।

শিল্পের আর্জি
• নতুন শিল্প এবং কর্মসংস্থান নীতি।
• শিল্পের জন্য দ্রুত জমি দিতে তার ব্যাঙ্ক।
• শ্রম আইন সংস্কার।

৫ জুলাই বাজেট। সেখানে এক দিকে নির্মলাকে শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে হবে। অন্য দিকে কেনাকাটা বাড়াতে হাতে নগদ বাড়াতে হবে। মুশকিল হল, অন্তর্বর্তী বাজেটে পীযূষ গয়াল আয়কর ও কর্পোরেট কর আদায়ের যে চড়া লক্ষ্যমাত্রা বেঁধেছিলেন, তা এমনিতেই ছোঁয়া মুশকিল। বিশেষত যেখানে জিএসটি-তে সিমেন্টের মতো পণ্যে করের হার কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে। জিএসটি আদায়ও এখনও লক্ষ্য থেকে দূরে।

২০১৮-১৯ সালে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ৩.৩% থেকে বাড়িয়ে ৩.৪% করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু তা ছুঁতেও বিপুল খরচ ছাঁটাই করতে হয়েছিল। অনেকের মতে, তার ফলেই জানুয়ারি-মার্চে বৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশে নেমেছে। কির্লোস্কর বলেন, ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে থাকুক। কিন্তু খরচ কোথায় ছাঁটা হচ্ছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। হবু প্রেসিডেন্ট উদয় কোটাকের ইঙ্গিত, অর্থনীতিতে যখন ভাটা, তখন ঘাটতি নিয়ে সরকারকে কিছুটা ঝুঁকি নিতে হবে। বিপুল ভোটে জিতে আসা সরকার ১০% বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঝাঁপাবে বলে আশা অনেকের।

কিন্তু সমস্যা

• কর ছাঁটাই করলে কঠিন হবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছোঁয়া। বিশেষত যেখানে জিএসটি থেকে আয় এখনও আশানুরূপ নয়।
• তার উপরে চাষিদের বছরে ৬,০০০ টাকা দিতে গিয়ে গুনতে হবে ৮৭,০০০ কোটি টাকা। সঙ্গে রয়েছে এক লক্ষ টাকা সুদমুক্ত ঋণের খরচ।
• মোটা টাকা বরাদ্দ করতে হবে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী, দোকানদারদের জন্য চালু পেনশন প্রকল্পের জন্য।
• সব মিলিয়ে, হাত খুলে খরচ করলে রাজকোষ ঘাটতি লাগামছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, বিপুল ভোটে জিতে এলে তো আর সরকারের রাজকোষে আয় বাড়ে না। কৃষকদের ভাতা, দোকানদারদের পেনশনের মতো প্রকল্পে এমনিতেই বিপুল খরচের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বাজেটের অঙ্ক কষতে হবে সে কথা মাথায় রেখেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement