নির্মলা সীতারামন
সরকারি কাজ চালাতে ১০০ টাকা ধার করলে তার ৯৩ টাকাই যাচ্ছে পুরনো ধারের সুদ মেটাতে! রোজকার খরচ চালানোর জন্য নগদেও টান পড়তে শুরু করেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে ধার করে সংসার চালাতে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। তাই দৈনন্দিন খরচের জন্য বাজার থেকে ধার করার কথা ভাবতে হচ্ছে নির্মলা সীতারামনের অর্থ মন্ত্রককে।
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বামফ্রন্ট সরকারের রেখে যাওয়া ঋণের বোঝা নিয়ে অনুযোগ করছেন। অভিযোগ তুলছেন, আয়ের সব টাকা যদি পুরনো ধারের সুদ মেটাতে যায়, তবে উন্নয়ন কী দিয়ে হবে? ততখানি খারাপ না-হলেও, মোদী সরকারের অবস্থাও সুবিধার নয়।
চলতি অর্থবর্ষে কেন্দ্রের রাজকোষ ঘাটতি ৭.০৩ লক্ষ কোটি টাকা। যা মেটাতে বাজার থেকে ধার করতে হবে। কিন্তু পুরনো ধারের সুদেই লাগবে ৬.৬০ লক্ষ কোটি। বাজেটের হিসেবে, সরকারের এক টাকা খরচে তার ১৮ পয়সাই সুদ মেটাতে লাগছে। অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, গত অর্থবর্ষেও প্রাথমিক অনুমানের তুলনায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বেশি খরচের প্রধান কারণ ছিল ওই সুদই।
নুন আনতে পান্তায় টান
চলতি অর্থবর্ষে ৭.০৩ লক্ষ কোটি টাকা রাজকোষ ঘাটতি মেটাতে ফের ধার করতে হবে বাজার থেকে। কিন্তু পুরনো ধারের সুদ মেটাতে বেরিয়ে যাবে ৬.৬০ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রকে নগদের অভাব মেটাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে করা ধার জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই ছাপিয়ে গিয়েছে ৬৬ হাজার কোটি টাকা। জুনে অর্থ মন্ত্রকে নগদ টাকার অভাবে নর্থ ব্লকের কিছু অফিসারের বেতন মিলতে দেরি হবে বলে নির্দেশিকা জারি হয়েছিল এর মধ্যে নির্মলার চিন্তা বাড়িয়েছে অর্থ মন্ত্রকে নগদের অভাব। এ জন্য মন্ত্রক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে ‘ওয়েজ অ্যান্ড মিনস অ্যাডভান্স’ হিসেবে ধার করে থাকে। জুলাইয়ে তা ৬,০০০ কোটি থেকে বেড়ে ৬৬,০০০ কোটি টাকা পেরিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, এপ্রিল-সেপ্টেম্বর, এই ছ’মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ধার করা সম্ভব নয়। সরকারি সূত্র বলছে, সেই লক্ষণরেখা পেরোলে নগদ জোগাড়ে কেন্দ্রকে ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট বিলের মাধ্যমে ৯১ দিনের জন্য ধার নিতে হবে।
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার দাবি, ‘‘ভোটের বছরে বেশি খরচাপাতি থাকায় কম নগদ নিয়েই কাজ শুরু হয়েছে।’’ সাধারণত বছরের শুরুতে হাতে ১.৫ লক্ষ কোটি থাকে। এ বার ছিল ১.২ লক্ষ কোটি। বুধবারই সব মন্ত্রকের বাজেট বরাদ্দ এক ধাক্কায় ‘গিলোটিন’-এর মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে লোকসভায় ‘অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন বিল’ পাশ হয়েছে। যাতে সরকার কোষাগার থেকে ৯৮.১৮ লক্ষ কোটি টাকা তোলার অনুমতি পাচ্ছে। ফলে আশা, এ বার নগদ সঙ্কটও মিটবে।