নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।
সংসদে তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেট পেশের মাত্র দু’সপ্তাহের মাথায় সেই বাজেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বিরোধীদের কটাক্ষের মুখে যুক্তি দিলেন, ‘‘মানুষের কথা শুনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ অর্থনীতিবিদরা অবশ্য প্রশ্ন
তুলেছেন, এর আগেও মোদী সরকার একাধিক বার নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। কর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত যদি দু’সপ্তাহের মাথায় প্রত্যাহার করতে হয়, তা হলে আর বাজেটের বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায় থাকে?
বাজেটে ঘোষণা হয়েছিল, বাড়ি-ফ্ল্যাটের মতো সম্পত্তি বেচায় দীর্ঘমেয়াদি মুনাফার উপরে এত দিন মূলধনী লাভকরের হার ছিল ২০%। তা কমিয়ে ১২.৫% করা হবে। কিন্তু মুনাফা থেকে মূল্যবৃদ্ধি বাদ দিয়ে তার পরে কর হিসাবের সুবিধা (ইন্ডেক্সেশন) মিলবে না। অভিযোগ ওঠে, এত দিন ১ কোটি টাকার বাড়ি কিনে ১.৫ কোটি টাকায় বিক্রি করলে বাড়ির বর্তমান বাজারদর ধরে লাভের অঙ্ক কষা হত। তার উপরে কর চাপত। এখন বাড়ির কেনা ও বিক্রির সময়ে দামের ফারাককেই মুনাফা ধরে কর চাপানো হবে। মন্ত্রক দাবি করেছিল, বাড়ি-ফ্ল্যাট বিক্রিতে মুনাফা হিসাবের সময় মূল্যবৃদ্ধির হার ধর্তব্যের মধ্যে আনা না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমজনতা লাভবান হবে।
বিরোধীরা অবশ্য বাজেট ঘোষণার পরেই অভিযোগ তুলেছিলেন, এতে মধ্যবিত্তদের বিপাকে ফেলা হচ্ছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সংসদে বলেছিলেন, মধ্যবিত্তদের বুকে-পেটে ছুরি বসানো হয়েছে। আজ অর্থ বিল পাশের সময় সংশোধনী এনে সেই বিতর্কিত সিদ্ধান্তই ফেরাল কেন্দ্র। নির্মলা বলেন, ফ্ল্যাট-বাড়ি-জমির মতো স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে পাওয়া দীর্ঘমেয়াদি লাভকরের হিসাব কষার জন্য এত দিন চলে আসা পুরনো নিয়ম এবং এ বারের বাজেটে আনা নতুন নিয়ম— এই দুই বিকল্পই বহাল রাখা হবে। করদাতা চাইলে তার মধ্যে থেকে যেটিতে কম কর দিতে হবে, সেটি বেছে নিতে পারবেন। ২৩ জুলাই বাজেট পেশের আগে কেনা যাবতীয় সম্পত্তিতে এই সুবিধা মিলবে।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘মানুষের কথা শুনেছি। সেটাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীতি। প্রতি বছরই বাজেট পেশের পরে সকলের কথা শোনা হয়। আমি ২০১৯ থেকে গোটা দেশে ঘুরে এই কাজ করছি। সকলের কথা শুনে অর্থ বিলে সংশোধন করা হয়েছে। যাতে মানুষের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়। আমাকে হেনস্থা করলে, ব্যাঙ্গ করলেও এই কাজ করব।’’
রাহুল-সহ বিরোধীদের প্রধান অভিযোগ ছিল, মধ্যবিত্তদের জন্য বাজেটে কিছু নেই। উল্টে করের বোঝা চাপানো হয়েছে। তা নস্যাৎ করার চেষ্টাতেও আজ লোকসভায় অর্থ বিল পাশের সময় নির্মলা বিস্তর সময় ব্যয় করেন। যুক্তি দেন, মধ্যবিত্তের উপরে করের বোঝা চাপানো হয়নি। ২০২৩-এ বেতনভোগী চাকুরিজীবীদের উপরে আয়করের বোঝা ৩৭,৫০০ টাকা কমানো হয়েছিল। এ বার কমেছে ১৭,৫০০ টাকা। স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাড়ানো হয়েছে। যথেষ্ট সুরাহা দেওয়া হয়েছে নতুন আয়কর কাঠামোয়।