অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
লকডাউন ঘোষণার দেড় দিনের মধ্যে দরিদ্র মানুষের মুখে খাবার আর হাতে টাকা জোগানোর প্রকল্প স্বাগত। কিন্তু খাদের কিনারায় ঝুলে থাকা অর্থনীতিকে টেনে তুলতে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, এখন তার দিকেই তাকিয়ে শিল্প ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মীরা। লকডাউনের জেরে ঝাঁপ বন্ধ হতে বসার জোগাড় যে ছোট সংস্থার কিংবা ছাঁটাই হওয়ায় সময়ে মাসিক কিস্তি গুনতে খাবি খেতে পারেন বড় সংস্থার যে সাধারণ কর্মী, তাঁদের জন্য কেন্দ্র কী ভাবছে, তা স্পষ্ট নয়। বৃহস্পতিবার ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণার পরে এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেও তেমন উত্তর মেলেনি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের থেকে। অর্থমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, পরিস্থিতির উপরে নজরে রাখছেন তাঁরা। আশ্বাস, অসুখ বুঝে ঘোষণা হবে দাওয়াই-ও।
পাঁচ শতাংশের নীচে নামা বৃদ্ধি ও সাড়ে চার দশকে সর্বোচ্চ বেকারত্বের হারকে সঙ্গী করে এমনিতেই বেহাল ছিল দেশের অর্থনীতি। এখন করোনার সুনামি আছড়ে পড়ায় আগামী অর্থবর্ষের (২০২০-২১) শেষ ত্রৈমাসিকের আগে তার ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছেন না প্রায় কেউই। বিশেষত যেখানে এই আঘাত সামলে মুখ তুলতে সময় নিতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি। লকডাউনের জেরে তিন মাস যে অর্থনীতিকে প্রবল ঝড়-ঝঞ্ঝা পোহাতে হবে, এ দিনের সরকারি ঘোষণাতেও সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। আর এই আশঙ্কা থেকেই আগামী অর্থবর্ষের প্রথম দুই ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের নীচে থাকতে পারে বলে মনে করছেন প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন। ২০২০-২১ সালের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.২% থেকে কমিয়ে ৩.৫% করেছে মূল্যায়ন বহুজাতিক ক্রিসিল-ও। এসবিআই ইকোর্যাপের ইঙ্গিতে তা আরও কম, প্রায় ২.৬%। লকডাউনে দেশের শিল্প তথা অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা আরও বহু উপদেষ্টা সংস্থার।
এই আতঙ্ক তাড়া করছে বলেই কেন্দ্রের কাছে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্যাকেজ খুঁজছে শিল্প। এই কঠিন সময়ে খরচ কমাতে সংস্থা ছাঁটাই করলে, ঋণের মাসিক কিস্তি কোথা থেকে জোগাবেন, তা ভেবে উদ্বিগ্ন বহু কর্মী। তাই সেই সব সমস্যা সামাল দিতে কেন্দ্র কোনও দাওয়াই ঘোষণা করছে কি না, তা দেখতে এ দিন টিভির সামনে জড়ো হয়েছিল বহু উদগ্রীব চোখ। কিন্তু আপাতত সে সব প্রশ্নের উত্তর অধরা।
এক ডজন প্রশ্ন
লকডাউন কি ২১ দিনেই শেষ? না কি তার মেয়াদ আরও বাড়াতে হতে পারে?
কত দিন এই স্তব্ধ জনজীবনের মাসুল গুনবে অর্থনীতি?
কাজ খোয়ালে বা বেতন কমলে ঋণগ্রহীতাদের মাসিক কিস্তির (বিশেষত গৃহ ঋণের) কী হবে?
রোখা যাবে এঁদের কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) ছেদ পড়ার সম্ভাবনা? জীবন ও স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামই বা কোথা থেকে দেবেন তাঁরা?
সঙ্কটে বিমান পরিবহণ, হোটেল, পর্যটন শিল্প। তাদের জন্য ত্রাণ প্রকল্পের ভাবনা?
লকডাউনের জেরে বন্ধ হতে পারে বহু ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি সংস্থার। রোখার উপায়?
কী ভাবে বিপদ কাটবে গাড়ি শিল্পের? বিএস-৪ গাড়ি বিক্রির সময়সীমা বাড়বে কি?
চাহিদায় ভাটা আগেই ছিল। এ বার সমস্যা উৎপাদন ও জোগানেও? সঙ্কট কী ভাবে সামলাবে শিল্প?
বহু গুণ বাড়তে পারে ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণ। কী ভাবে সামাল দেবে কেন্দ্র?
নোটবন্দি, তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর পরে এ বার ২১ দিনের ঘরবন্দি। কী ভাবে ফের উঠে দাঁড়াবে অসংগঠিত ক্ষেত্র?
বৃদ্ধি আরও তলিয়ে যেতে পারে। বাড়তে পারে বেকারত্ব। কার্যত আইসিইউয়ে চলে যাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বড় অঙ্কের ত্রাণ প্রকল্প জোগাবে কেন্দ্র?
এই ত্রাণ দিতে গেলে রাজকোষ ঘাটতি মাত্রাছাড়া হওয়ার আশঙ্কা। সেই লক্ষ্য কতটা শিথিল করতে রাজি কেন্দ্র?
ক্রিসিলের মতে, ১.৭ লক্ষ কোটির প্যাকেজ স্বাগত। কিন্তু ছোট সংস্থা ও সাধারণ আয়ের পরিবারের জন্য ঋণের বোঝা কমানোর বন্দোবস্ত করুক কেন্দ্র। বণিকসভা সিআইআইয়ের মতে, অর্থনীতির এমন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সময়ে বিপুল অঙ্কের (জিডিপির ২.৫%-৩%) ত্রাণ জরুরি। একই আশায় কেন্দ্রের পরবর্তী ঘোষণার অপেক্ষায় থাকার কথা জানাচ্ছে ফিকি, অ্যাসোচ্যাম-ও। বণিক মহল, ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশাও তা-ই। এ দিনের প্যাকেজে এই দাওয়াইয়ের খোঁজ মেলেনি বলে, এখন আগামী ঘোষণার অপেক্ষায় শিল্প এবং কর্মীরা।