Investment

পরিকল্পনা তৈরি, দরকার মেরামতি

স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে খারাপ রোজগার করেন না। নিজেদের পরিকল্পনা মতো বিভিন্ন খাতে সঞ্চয়ও করছেন। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে সামান্য কিছু খামতি রয়েছে। আর্থিক ভাবে আরও একটু সুরক্ষিত থাকতে সেগুলি মেরামত করার দিকে নজর দিলে ভাল হয়মহীতোষ এবং সুজাতার ছ’বছর আগে বিয়ে হয়েছে। কলকাতার উপকণ্ঠে মা-বাবার সঙ্গে তাঁদের বাড়িতেই থাকেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০ ০৬:২৯
Share:

পরিচিতি: মহীতোষ (৪৬) সুজাতা (৩৭)

Advertisement

কী করেন: মহীতোষ বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। স্ত্রী রাজ্য সরকারি কর্মী। মা-বাবার সঙ্গে তাঁদের বাড়িতে থাকেন। স্ত্রীর নিজের বাড়ি আছে

লক্ষ্য: কলকাতায় ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনা। ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষা। পরিবার পরিকল্পনা

Advertisement

মহীতোষ এবং সুজাতার ছ’বছর আগে বিয়ে হয়েছে। কলকাতার উপকণ্ঠে মা-বাবার সঙ্গে তাঁদের বাড়িতেই থাকেন। মহীতোষ জানিয়েছেন, তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার বিপণন বিভাগে কাজ করেন। অতএব বোঝাই যাচ্ছে পেনশন নেই। অন্য দিকে, সুজাতা রাজ্য সরকারি কর্মী। তাঁর পেনশন থাকার কথা। কাজেই পরিবারের ভবিষ্যৎ অন্তত আংশিক সুরক্ষিত। কিন্তু করোনা আমাদের দু’টো জিনিস শিখিয়েছে— এক, জীবনযাপনের জন্য খুব বেশি কিছু লাগে না। আর দুই, যে কোনও রকম দুর্যোগ সামাল দিতে সঞ্চয় খুব জরুরি। অর্থাৎ অবসর জীবনে শুধু সুজাতার পেনশন দিয়ে দুঃসময় যোঝা কঠিন। আর অবসরের তহবিল হোক বা স্বাস্থ্য বিমা, সন্তানের শিক্ষার খরচ— এই সব ভাবনা শুরু করতে হয় পেশার শুরু থেকে। তার পরে কলকাতায় নতুন ফ্ল্যাট, গাড়ি তো আছেই।

স্বস্তির ব্যাপার হল, মহীতোষ, সুজাতা আজকের বাজারে একসঙ্গে আয় ভালই করেন। তাঁরা নিজেদের মতো করে ভবিষ্যতের তহবিলও তৈরি করছেন। পিএফ তো আছেই। সেই সঙ্গে পিপিএফ, মিউচুয়াল ফান্ডের এসআইপির মতো লগ্নি প্রকল্পে টাকা রাখছেন যতটা বেশি সম্ভব। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের অনেক স্বপ্নই পূরণ করা সম্ভব। তবে মানুষ মাত্রেই খামতি কিছু থাকে। মহীতোষদেরও রয়েছে। তাঁরা তহবিল বাড়ানোর দিকে যতটা যত্নশীল, জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমার মতো জরুরি সুরক্ষার দিকে ততটা জোর দেননি। সেই ফাঁকগুলি ভরাট করাই আমাদের দায়িত্ব। কারণ িহসেবে আবার উদাহরণ দেব করোনার।

জীবন বিমা লাগবেই

জীবন বিমার অঙ্ক হিসেবে ২ লক্ষ টাকা খুবই কম। মাথায় রাখা উচিত, সঞ্চয় ও লগ্নি করতে হবে জীবনের বেশ কিছু ঝুঁকির আশঙ্কাকে হিসেবের মধ্যে রেখেই। আশেপাশে তাকালেই বুঝবেন কথাটা কঠোর হলেও কতটা সত্যি। সে কারণে পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষিত করার জন্য এখনই অন্তত ৫০ লক্ষ টাকার টার্ম প্ল্যান কেনা উচিত মহীতোষের। সঙ্গে থাকুক ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা এবং দুরারোগ্য ব্যাধির রাইডার। তাঁর স্ত্রী-ও রোজগেরে। তাঁর আয়ের উপরেও পরিবার নির্ভরশীল। তাই তাঁরও উচিত টার্ম প্ল্যান কেনা। তবে তাঁর ক্ষেত্রে বিমামূল্য কিছুটা কম হলেও চলবে। আপাতত তিনি ২৫ লক্ষ টাকার বিমা করাতে পারেন।

চিকিৎসা বিমাও

আজকের তারিখে এবং এই বছর বয়সে পরিবারের জন্য ৩ লক্ষ টাকার চিকিৎসা বিমাও যথেষ্ট নয়। চিকিৎসার যা খরচ, তাতে হঠাৎ গুরুতর কিছু হলে এই টাকা খরচ হতে কিন্তু বেশি সময় লাগবে না। এখন মহীতোষের সামনে দু’টি পথ রয়েছে। এক, হয় তিনি এখনকার সংস্থার কাছেই বিমার ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে নিতে পারেন। দুই, অন্য সংস্থার থেকে টপ-আপ কেনা।

আমার মতে, মহীতোষ একটি সুপার টপ-আপ পলিসি কিনতে পারেন। এই পলিসির সুবিধা কী? ধরা যাক একটি নির্দিষ্ট বছরে মূল পলিসির কভারেজ শেষ হয়ে গেল। অতিরিক্ত অঙ্ক এবং নতুন ক্লেমের ক্ষেত্রে এই সুপার টপ-আপ পলিসি ব্যবহার করা যাবে। আবার সাধারণ চিকিৎসা বিমার ক্ষেত্রে রুম, বেড-সহ বিভিন্ন খাতে খরচের নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বসীমা থাকে। তা পার হয়ে গেলেও সুপার টপ-আপ পলিসির মাধ্যমে সেই অতিরিক্ত খরচ দাবি করা যায়। সাধারণ পলিসির মতোই। আবার এই পলিসি কেনার সুবিধা হল, এর প্রিমিয়ামের খরচ সাধারণ চিকিৎসা বিমার চেয়ে কম।

আরও একটা কথা। মাতৃত্বকালীন সুবিধাকে আপনার চিকিৎসা বিমার মধ্যে আনতে ভুলবেন না যেন।

সেই সঙ্গে লগ্নি

বছরে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত পিপিএফে লগ্নি আয়কর মুক্ত। মহীতোষ এবং সুজাতা দু’জনেই ওই অঙ্কের আমানত পিপিএফে জমা করছেন। এটা খুবই ভাল পদক্ষেপ। উঁচু হারে সুদও মেলে, ঝুঁকিও কার্যত শূন্য। সময়সীমার শেষে বড় অঙ্কের তহবিল হাতে আসবে। এসআইপি খাতে মাসে ২৫,০০০ টাকা করে ঢালছেন মহীতোষ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁর ভুল, পুরো লগ্নিই ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে। এতে ঝুঁকি বাড়ে। ফান্ড বা এসআইপির প্রাথমিক শর্তই লগ্নিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেওয়া। লগ্নি করতে হবে ইকুইটি, ঋণপত্র নির্ভর ফান্ড, লার্জ ক্যাপ, মিড ক্যাপ, স্মল ক্যাপ-সহ বিভিন্ন ধরনের ফান্ডে। তবে যে সব ফান্ডে টাকা ঢালবেন, সেগুলির নিম্নলিখিত কিছু বৈশিষ্ট থাকলে ভাল।

• ফান্ডের তহবিল যেন বড় হয়।

• এসআইপির মেয়াদ অন্তত পাঁচ বছর হওয়া উচিত। বেশি হলে ভাল।

• লগ্নি করা উচিত বাজারে সুনাম থাকা সংস্থার ফান্ডে।

• বিভিন্ন ধরনের ফান্ডে ছড়িয়ে বিনিয়োগ করলে ভাল।

• এক্সপেন্স রেশিও কম হওয়া উচিত।

যে কোনও ফান্ড ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার তথ্য নেটে পাওয়া যায়। লগ্নির আগে তা খতিয়ে দেখা কঠিন নয়। মনে রাখবেন, এই টাকার একাংশই সন্তানকে বড় করা ও তার শিক্ষার খরচ জোগাড় করতে কাজে লাগবে। আবার ফ্ল্যাট কেনার পরে ইএমআই চালু হলে এসআইপি এবং পিপিএফ খাতে লগ্নি কিছুটা ছাঁটাই করতে হবে। অতএব এখন যে লগ্নি চলছে, তা করা উচিত যথেষ্ট বুঝে শুনে। হিসেব কষে।

প্রয়োজনের জন্য

এ সবের বাইরে সকলেরই উচিত একটি আপৎকালীন তহবিল তৈরি করা। যেখানে কমপক্ষে ছ’মাসের বেতনের সমান অঙ্কের টাকা জমানো থাকবে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা লিকুইড ফান্ডে সেই টাকা রাখতে পারেন। মহীতোষ জানিয়েছেন, তিনি প্রত্যেক মাসে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৭৫০০ টাকা করে রাখেন। এই দিয়েই সেই তহবিল তৈরি হবে। এই টাকা অনেক কাজেই লাগতে পারে। বিশেষ করে পরিকল্পনা বহির্ভূত খরচের জন্য। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে প্রাথমিক ভাবে কিছু খরচ হতে পারে। চিকিৎসা বিমা থাকলেও এই খরচ হয়। আবার মহীতোষেরা ফ্ল্যাট ও গাড়ি কিনতে চাইছেন। তার ডাউন পেমেন্টও হতে পারে এই টাকা থেকে। পরে বেতন বাড়লে এই তহবিলের অঙ্ক আরও বাড়ানো যেতে পারে।

লেখক শৈবাল বিশ্বাস

(মতামত ব্যক্তিগত)

ছবি: প্রতীকী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement