Share Market

চাপের মুখে বাজার, তবে খুলছে শেয়ার কেনার পথও

শুক্রবার বাজার কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও, আশঙ্কার মেঘ কেটে গিয়েছে বলা যাবে না। পশ্চিম এশিয়ার সংঘর্ষ আরও ঘনীভূত হলে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড) ব্যারেল ৯০ ডলারের উপরে উঠতে পারে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

টানা ছ’দিন ৩২৭৯ পয়েন্ট নামার পরে শুক্রবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারতীয় শেয়ার বাজার। যদিও লগ্নিকারীরা নিশ্চিন্ত নন। সে দিন ৬৩৪ পয়েন্ট মাথা তোলার ফলে সেনসেক্স এখন ৬৩,৭৮৩ অঙ্কে। অর্থাৎ, সর্বোচ্চ অবস্থানের (৬৭,৮৩৯) থেকে ৪০৫৬ পয়েন্ট পিছনে। সূচক প্রায় ৬% নামায় মাথা নামিয়েছে বিভিন্ন শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডের ন্যাভও। ফলে পুঁজি খুইয়েছেন বাজারের সব ধরনের লগ্নিকারীরা। যা আশা-আশঙ্কার দোলাচলে রেখেছে তাঁদের। তবে এই পতনের সুযোগেই ভাল শেয়ার কেনার পথ খুলছে।

Advertisement

ইজ়রায়েল-হামাসের সংঘর্ষে ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছিল বিশ্ব বাজার। বড় ধাক্কা এল আমেরিকায় ঋণপত্রের ইল্ড (ঋণপত্রের বাজার দর এবং সুদ বা কুপন রেট ধরে প্রকৃত আয়) ৫ শতাংশে ওঠায়। জুলাই-সেপ্টেম্বরে সে দেশে বৃদ্ধির হারও (৪.৯%) মাথা তুলেছে। ফলে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের বাজার থেকে আমেরিকায়, মূলত সেখানকার বন্ডে চলে যাচ্ছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির পুঁজি। এ মাসে এখনও পর্যন্ত তারা ভারতে নিট ১৭,৪৮৯ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। বিভিন্ন ফান্ড ১৩,৮৭৮ কোটি টাকার শেয়ার কিনলেও বাজারের পতন ঠেকানো যায়নি।

শুক্রবার বাজার কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও, আশঙ্কার মেঘ কেটে গিয়েছে বলা যাবে না। পশ্চিম এশিয়ার সংঘর্ষ আরও ঘনীভূত হলে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড) ব্যারেল ৯০ ডলারের উপরে উঠতে পারে। ডলার আরও তেজি হলে ভারতীয় শেয়ার বাজারে বাড়তে পারে চাপ। তবে দেশের অর্থনীতি এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, তাতে বড় সঙ্কটের আশঙ্কা নেই। তা ছাড়া নভেম্বরে কি‌ছু রাজ্যের বিধানসভা ভোট। তার ছ’মাসের মধ্যে দেশে সাধারণ নির্বাচন। এমন সময়ে আর্থিক বিষয়গুলিতে সরকার জনগণের পাশেই থাকবে এবং সতর্ক পদক্ষেপ করবে বলেই আশা।

Advertisement

এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক ফল মোটের উপরে ভাল। দেশের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের নিট মুনাফা ২৭.৪% বেড়ে হয়েছে ১৭,৩৯৪ কোটি টাকা। মারুতির লাভ ৮০% বেড়ে ৩৭১৬ কোটিতে পৌঁছেছে। সিপলা এবং ডক্টর রেড্ডিজ়ের লাভ বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ১১৫৫ কোটি এবং ১৪৮২ কোটি টাকা। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ৫৮৬৪ কোটি টাকার নিট মুনাফা ঘরে তুলেছে, আগের বছরের চেয়ে ১০% বেশি। ৩২৭% বেড়ে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (পিএনবি) লাভ ১৭৫৬ কোটি টাকা। কানাড়া ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের মুনাফাও বেড়েছে। বাকি ফলের অধিকাংশ ভাল হলে তা সূচকের পতনের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তবে এখনকার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে বাজারের ওঠাপড়া হয়তো চলবে। ভাল শেয়ার কেনার বড় সুযোগ এই ধরনের পতন।

উদ্বেগের খবর অবশ্য আরও আছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গৃহস্থের সঞ্চয়ের হার জাতীয় আয়ের ১১.৫% থেকে নেমেছে ৫.১ শতাংশে। অথচ স্বর্ণ ঋণ এবং ব্যক্তিগত ঋণ বাবদ দায় বেড়েছে। অর্থনীতির জন্য এটা ভাল লক্ষণ নয়। তবে মোট সঞ্চয় কমলেও, তা ভাল রকম বেড়েছে স্বল্প সঞ্চয়ে। প্রবীণদের সিনিয়র সিটিজ়েন্স সেভিংস প্রকল্পে সুদ বেড়ে ৮.২% এবং সঞ্চয়ের ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে ৩০ লক্ষ টাকা হওয়ায় জমা বাড়ছে দ্রুত। অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাস শেষ হওয়ার আগেই তাতে জমা পড়েছে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। মহিলাদের বিশেষ প্রকল্প মহিলা সম্মান সেভিংস সার্টিফিকেটে জমা পড়েছে প্রায় ১৩,৫০০ কোটি টাকা।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement