প্রতীকী ছবি।
সাধারণ মানুষকে বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে উৎসাহ দিতে রাজ্যে তার নিয়ম বদলাল পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। এখন যে কেউ বাড়িতে চাইলে এক কিলোওয়াট উৎপাদনেরও ব্যবস্থা করতে পারবেন। এতদিন সমবায় আবাসনের ছাদ ছাড়া কোনও বাড়ি বা ফ্ল্যাটে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকাঠামো গড়াই যেত না। শপিং মলের মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প সংস্থা ও স্কুল-কলেজ, হাসপাতালের মতো জায়গার ছাদে উৎপাদনের অনুমতি ছিল, তবে ন্যূনতম পাঁচ কিলোওয়াট বা তার বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যবস্থায় গৃহস্থ গ্রাহকেরা উপকৃত হবেন। কারণ, বিদ্যুৎ বিলের খরচ কিছুটা কমতে পারে। পরিবেশ দূষণও কমবে। সৌরবিদ্যুতের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসাগুলির বহর বাড়বে। প্রচুর কর্মসংস্থান হবে।
দূষণ কমাতে সৌরবিদ্যুতের মতো অপ্রচলিত শক্তিতে বহু দিন ধরেই জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের যুক্তি ছিল, এ জন্য জরুরি সকলের বাড়িতে উৎপাদনে ছাড়পত্র। তবে ন্যূনতম পরিমাণ পাঁচ কিলোওয়াটের কম রাখলেই ভাল। না-হলে কম খরচে এই বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ খুলবে না আমজনতার সামনে।
কমিশন সূত্রের খবর, সেই সায়ই দেওয়া হল অবশেষে। ছাদে তো বটেই, ন্যূনতম এক কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্যানেল বসানো যাবে দেওয়াল বা বাড়ির জমিতেও। তবে সেই বাড়িতে সংশ্লিষ্ট বণ্টন সংস্থার যত ‘লোড’ বা সংযোগ-ক্ষমতা রয়েছে, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থাটি তার থেকে বেশি ক্ষমতার হতে পারবে না। আর ওই লোড পাঁচ কিলোওয়াট বা তার কম হলে বিদ্যুৎ ব্যবহার ও জোগানের ফারাকের হিসেবে বিল তৈরি হবে ‘নিট মিটারিং’ পদ্ধতিতে। পাঁচ কিলোওয়াটের বেশি হলে হিসেব হবে ‘গ্রস মিটারিং’ পদ্ধতিতে।
বিলের হিসেব
• বাড়ির পাশাপাশি
গ্রিডের সঙ্গে সংযোগ থাকবে ওই বিদ্যুতের।
• বাড়িতে ব্যবহৃত মোট বিদ্যুৎ এবং গ্রিডে সৌরবিদ্যুতের জোগানের ইউনিট ধরে দুই পদ্ধতিতে— নিট মিটারিং (লোড ৫ কিলোওয়াটের কম), গ্রস মিটারিং (লোড ৫ কিলোওয়াটের বেশি)।
• নিট মিটারিংয়ে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়িতে বেশি
হলে তার ইউনিট থেকে গ্রিডে জোগানের ইউনিট বাদ দিয়ে যা থাকবে, গ্রাহক তার বিল দেবেন বণ্টন সংস্থার মাসুল হার মেনে। উল্টোটা হলে গ্রিডে জোগানের ইউনিট বাড়িতে ব্যবহারের ইউনিটের সর্বাধিক ৯০% পর্যন্তই হিসেবে ধরতে হবে। বাকি ১০% ইউনিটের বিল দেবেন গ্রাহক। তবে ওই বাড়তি ইউনিট বণ্টন সংস্থা পরের মাসের বিলে অ্যাডজাস্ট করবে।
• গ্রস মিটারিংয়ে প্রথমে মোট ব্যবহৃত ইউনিটের খরচের হিসেব হবে বণ্টন সংস্থার মাসুল অনুযায়ী। গ্রিডে জোগানো ইউনিটের দাম কষা হবে নিয়ন্ত্রণ কমিশন নির্ধারিত মাসুল হার মেনে। বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হলে ফারাকের অঙ্কের বিল দেবেন গ্রাহক। আর গ্রিডে জোগান বেশি হলে পরের বিলের সঙ্গে বাড়তি ইউনিট অ্যাডজাস্ট হবে।
সৌরবিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ শান্তিপদ গণচৌধুরির মতে, সাধারণ গ্রাহকের বেশির ভাগের লোড ২-৫ কিলোওয়াট।
ফলে অনেকেই এই ব্যবস্থার সুফল পাবেন। বাড়বে দূষণহীন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনও। এক কিলোওয়াটের পরিকাঠামো গড়তে এখন গড়ে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। জায়গা লাগে ৯০-১০০ বর্গফুট। তাঁর আশা, বাড়িতে বাড়িতে এই ব্যবস্থা শুরু হলে যন্ত্রাংশের চাহিদা যেমন বাড়বে, তেমনই সেই ব্যবস্থা গড়ার সংস্থার চাহিদাও বাড়বে। আবার সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ মিলিয়ে সার্বিক ভাবে প্রচুর কর্মী লাগবে।