ফাইল চিত্র।
নোটের ব্যবহার কমিয়ে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানো ও তার হাত ধরে কালো টাকা লেনদেন প্রতিরোধ— নোট বাতিলের অন্যতম যুক্তি হিসেবে এই দুই কারণকে তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অথচ পাঁচ বছর পেরিয়ে দেখা যাচ্ছে ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নগদ লেনদেন ও নোটের সংখ্যাও। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেবই বলছে, এ বছর ২৯ অক্টোবরে বাজারে থাকা নোটের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৯.১৭ লক্ষ কোটি টাকা। নোটবন্দির ঠিক আগে ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বরে ছিল ১৭.৭৪ লক্ষ কোটি।
গত সংসদ অধিবেশনে মোদী সরকারের দাবি ছিল, অর্থনীতিতে ব্যাঙ্ক নোটের সংখ্যা নির্ভর করে জিডিপি-র হার, মূল্যবৃদ্ধি, খারাপ নোট বদলের গতি এবং নগদের বাইরে অন্যান্য পদ্ধতিতে লেনদেন বৃদ্ধির উপরে। গত বছর করোনার কারণে অধিকাংশ মানুষই হাতের কাছে নগদ রাখতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেছিলেন। তার জেরে ২০২০-এর ৩০ অক্টোবর নোটের মূল্য ২০১৯ সালের চেয়ে ৪,৫৭,০৫৯ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছিল ২৬.৮৮ লক্ষ কোটি। অথচ আর্থিক কর্মকাণ্ড শুরু হলেও এ বার সেটা তো কমেইনি, উল্টে গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে এ বার বেড়েছে ২,২৮,৯৬৩ কোটি।
এমনকি, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ব্যাঙ্ক নোটের মূল্য ও সংখ্যা বেড়েছিল যথাক্রমে ১৪.৭% ও ৬.৬%। গত অর্থবর্ষে যথাক্রমে ১৬.৮% ও ৭.২%। পাল্লা দিয়ে এ সময়ে বেড়েছে ডিজিটাল লেনদেনও। ইউপিআই ব্যবস্থায় গত মাসে ৪২১ কোটি লেনদেনের মাধ্যমে হাত বদলেছে ৭.৭১ লক্ষ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, নোটবন্দির পরে প্রথম বছরে অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছিল, তার প্রভাব ইতিমধ্যেই কমে এসেছে। তার উপরে জিএসটি ব্যবস্থা চালু, অর্থনীতির ঝিমুনি এবং করোনা মানুষের খরচের অভ্যাসকে পাল্টেছে। আবাসন উপদেষ্টা অ্যানারকের চেয়ারম্যান অনুজ পুরীর মতে, নগদে লেনদেন একেবারে বন্ধ না-হলেও, আবাসন বিক্রির ক্ষেত্রে তার ভূমিকা কমেছে।
তবে এপ্রিলে প্রকাশিত রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সমীক্ষা অনুসারে, ২০১৮-এর ডিসেম্বর ও ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দেশের ছ’টি শহরের মানুষের মাসে বিভিন্ন লেনদেনের পছন্দের মাধ্যম ছিল ব্যাঙ্ক নোটই। বিশেষত, ৫০০ টাকার কম লেনদেনের ক্ষেত্রে। ফলে এই অভ্যাস খুব দ্রুত বদলাবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।