—প্রতীকী ছবি।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের আশা, চলতি অর্থবর্ষে ভারতের জিডিপি বাড়বে ৭%। তবে শুক্রবার উপদেষ্টা সংস্থা ডেলয়েট ইন্ডিয়ার পূর্বাভাস ওই পর্যন্ত পৌঁছল না। থমকে গেল ৬.৬ শতাংশে। আইএমএফ, এডিবি থেকে শুরু করে ফিচ, এস অ্যান্ড পি-র মতো মূল্যায়ন সংস্থার অনুমানের থেকেও যা নীচে। শুধু বিশ্ব ব্যাঙ্ক তাদের মতো ৬.৬% বলেছে। যদিও সাধারণ মানুষের কেনাকাটার খরচে গতি, রফতানি বাণিজ্যের ঘুরে দাঁড়ানো এবং লগ্নি প্রবাহ বৃদ্ধির মতো নানা ক্ষেত্রে ভারতীয় অর্থনীতির উন্নতির সম্ভাবনা সম্পর্কে আশা প্রকাশ করেছে তারা।
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে এ দেশে মাথা তুলতে থাকা আর্থিক বৈষম্যের ছবি। দেখা গিয়েছে, বিত্তবানেরা আরও ধনী হয়েছেন। আর চড়া মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় রোজগার কমে যাওয়া সাধারণ মধ্যবিত্ত বহু মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে সংসার চালাতে গিয়ে। গাড়ি-বাড়ি ঋণ নেওয়া থাকলে চড়া সুদ পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন করেছে। তার উপর অনেকের হাতে কাজ নেই। ফলে সঞ্চয় কমছে। অত্যাবশ্যক ছাড়া বাড়তি খরচ করার সুযোগই থাকছে না একাংশের। পরামর্শ দেওয়া সূত্রে সমস্যাগুলি স্পষ্ট হয়েছে ডেলয়েটের বক্তব্যেও। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পরিকাঠামোয় সরকারের বিপুল খরচের প্রশংসা করলেও, তাদের মন্তব্য— একাংশের সম্পদ বৃদ্ধি, কমতে থাকা সঞ্চয় এবং বর্ধিত ধারের বোঝার মধ্যে দাঁড়িয়ে ধারাবাহিক ভাবে গৃহস্থের খরচ বাড়ানোর জন্য সমস্যাগুলি মেটাতে কিছু পদক্ষেপ করা জরুরি। যার অন্যতম কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং কৃষি থেকে কাজ শিল্পে স্থানান্তরের বন্দোবস্ত। গৃহস্থের বাড়তে থাকা ধারের বোঝায় নজরদারি চালানোতেও জোর দিয়েছে তারা।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ দেশে দ্রুত বৃদ্ধির মুখ দেখছে মাঝারি আয়ের মানুষ। মূলত তাঁদের হাত ধরেই বাড়ছে ক্রয়ক্ষমতা। এই শ্রেণিরই একাংশের মধ্যে দামি বিলাসবহুল পণ্য এবং পরিষেবা কেনার চাহিদা তৈরি হচ্ছে। আর এই প্রত্যাশা থেকেই দেশে মাঝারি থেকে উঁচু রোজগেরে শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির বার্তা দিয়েছে উপদেষ্টাটি। তাদের বক্তব্য, এখন চারটি পরিবারের মধ্যে একটি এই তালিকাভুক্ত। আগামী ২০৩০/৩১ সালের মধ্যে দু’টি মধ্যে একটি হবে মাঝারি থেকে উঁচু রোজগেরে শ্রেণির আওতায় পড়বে। তার পরেও সংখ্যাটা বাড়বে, যা ভোগ্যপণ্যের পিছনের খরচ-খরচা বাড়ানোর ক্ষেত্রে জ্বালানি জোগাতে পারে।
ডেলয়েট ইন্ডিয়ার অর্থনীতিবিদ রুমকি মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘আশা, আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলিকে ঘিরে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা মিটে যাবে এবং এ বছরের শেষ দিকে পশ্চিমী দুনিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি সুদ কমানোর ঘোষণা করতে পারে। ভারতে লগ্নি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে এবং ঘুরে দাঁড়াতে পারে রফতানি।’’ তবে মূল্যবৃদ্ধি এবং ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় খাদ্যপণ্য এবং জ্বালানির দাম বৃদ্ধির আশঙ্কার কথাও বলা হয়েছে রিপোর্টে।