ছবি: পিটিআই।
লকডাউনের জেরে স্তব্ধ অর্থনীতির চাকা গড়ানোর চেষ্টায় ফের সুদ ছাঁটল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তিন সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় বার।
আজ সকলকে কিছুটা চমকে দিয়েই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানান, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের কাছ থেকে শীর্ষ ব্যাঙ্ক যে-সুদে স্বল্প মেয়াদে টাকা ধার নেয়, সেই রিভার্স রেপো রেট কমছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট (১০০ বেসিস পয়েন্ট=১ শতাংশ)। অর্থাৎ ৪% থেকে নেমে হচ্ছে ৩.৭৫%। ২৭ মার্চ যা এক ধাক্কায় কমেছিল ৯০ বেসিস পয়েন্ট।
রিভার্স রেপো রেট কমিয়ে কী ভাবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার আশা করছে রির্জাভ ব্যাঙ্ক? শীর্ষ ব্যাঙ্ক সূত্রের বক্তব্য, করোনা হানা দেওয়ার আগে থেকেই বাজারে চাহিদা ছিল না। ফলে উৎপাদনও কম হচ্ছিল। নতুন করে ঋণ নিয়ে লগ্নি করছিলেন না শিল্পপতিরা। বাজারে ঋণের চাহিদা না-থাকায়, সব মিলিয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে প্রায় ছয় লক্ষ কোটি টাকা জমা করেছিল সাধারণ ব্যাঙ্কগুলি। শক্তিকান্তের আশা, সুদ আরও কমায় সেই টাকার একটা বড় অংশ তুলে নিয়ে বাজারে ধার দিতে চাইবে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। ঋণের জোগান বাড়ায় চাকা ঘুরবে অর্থনীতির। টুইটে প্রধানমন্ত্রীরও দাবি, “রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আজকের ঘোষণায় বাজারে নগদ এবং ঋণের জোগান বাড়বে।”
পাশাপাশি, ঘরবন্দির জেরে কার্যত বিধ্বস্ত কৃষি ও ছোট শিল্প, আবাসন এবং গ্রামের গরিব মানুষকে ঋণ জোগানোর বন্দোবস্তও করতে চেয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কৃষি ও ছোট শিল্প ঋণের জন্য সাধারণ ভাবে ব্যাঙ্কের থেকে অনেক বেশি নির্ভরশীল এনবিএফসি (ব্যাঙ্ক নয়, এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান)-গুলির উপরে। ঠিক যেমন বহু দরিদ্রের সংসার চলে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা থেকে নেওয়া ধারের টাকায় স্বনির্ভরতার ভিতে দাঁড়িয়ে। সে-কথা মাথায় রেখে ব্যাঙ্কগুলি যাতে এনবিএফসি এবং ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাকে ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণ জোগাতে পারে, এ দিন সেই রাস্তা খুলে দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। গ্রামীণ অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে বাড়তি টাকা দিয়েছে নাবার্ডকে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “এই সমস্ত পদক্ষেপ বহু ব্যবসা, ছোট-মাঝারি শিল্পকে সাহায্য করবে। সুবিধা দেবে চাষি এবং দরিদ্রদের।”
ত্রাতা শীর্ষ ব্যাঙ্ক
• রিভার্স রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে ৩.৭৫%। রেপো রেট অপরিবর্তিত (৪.৪০%)।
• দীর্ঘ মেয়াদি ‘রেপো অপারেশনের’ দাওয়াই। এর মাধ্যমে ৫০ হাজার কোটি টাকা পেতে পারে ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফসি) এবং ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলি।
• নাবার্ড, সিডবি, এনএইচবি-র হাতে নগদের জোগান বাড়াতে বাড়তি ৫০ হাজার কোটি
• শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে রাজ্যগুলির ঋণ নেওয়ার সীমা বাড়ল ৬০%।
• ২০১৯-২০ সালের জন্য ডিভিডেন্ড (মুনাফার অংশ) দিতে হবে না ব্যাঙ্কগুলিকে
• সমস্ত ঋণের কিস্তি তিন মাস না-মেটানোর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তার জন্য অনুৎপাদক সম্পদের (এনপিএ) সংজ্ঞায় বদল
• বাড়তি ৯০ দিন সময় দেউলিয়া বিধিতে সংস্থার ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও
শুধু একা নরেন্দ্র মোদী নন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। যা দেখে অনেকেরই মনে হয়েছে, এই ঘোষণাকে কার্যত নিজেদের সাফল্য হিসেবেই তুলে ধরতে চাইছে কেন্দ্র। যদিও ‘একা কুম্ভ’ শীর্ষ ব্যাঙ্ক দেশের অর্থনীতির ভঙ্গুর দুর্গ রক্ষা করতে পারবে কি না, সেই সংশয় থাকছেই।
আরও পড়ুন: করোনার পর কেমন বৃদ্ধির হার ভারত-সহ বিশ্বের? IMF-এর পূর্বাভাস
বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, ঋণ নিতে সত্যিই কি এগিয়ে আসবেন শিল্পপতিরা? করোনার আবহে প্রবল অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে কেনই বা উৎপাদন বাড়াতে চাইবেন তাঁরা! তা ছাড়া, লকডাউনের জেরে যেখানে বহু কর্মী কাজ খোয়াচ্ছেন বা সেই আশঙ্কায় ভুগছেন, সেখানে নতুন করে
গাড়ি-বাড়ি কিনতেই বা ধার নেবেন কত জন?
এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে দরিদ্র মানুষের অ্যাকাউন্টে সরকারের তরফে সরাসরি টাকা পাঠানোর কথা বলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, আইএমএফের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনরা। তাঁদের যুক্তি, হাতে টাকা এলে তবে কেনাকাটা করবে আমজনতা। চাহিদা বাড়বে। তখন উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহী হবে শিল্পমহল। আর বড় কারখানায় উৎপাদন বাড়লে বরাত পাবে ছোট সংস্থা। তা না হলে শুধু ঋণ সহজলভ্য করে তাদেরও চাঙ্গা করা কঠিন।
আরও পড়ুন: গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে এগরাই মডেল, আরও বেশি কোয়রান্টিনে জোর মুখ্যমন্ত্রীর
কিন্তু মহিলাদের জন-ধন অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা করে দেওয়া ছাড়া বড় মাপের কোনও পদক্ষেপ এখনও মোদী সরকার করেনি। বিরোধীদের প্রশ্ন, ‘‘যে সরকার কর্পোরেট করে ১.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে, দরিদ্রদের অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে তাদের এত গড়িমসি কেন?”
নির্মলা অবশ্য এ দিনই আশ্বাস দিয়েছেন যে, শিল্পমহল এবং গরিবরা যাতে করোনার অভিঘাতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে সে জন্য সরকার শীঘ্রই নতুন আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)