প্রতীকী ছবি।
লকডাউনের জন্য দেশে সোনার বাজার বন্ধ। কেনাবেচা হচ্ছে না। তা বলে সোনার চাহিদায় ভাটা পড়ার প্রশ্ন নেই। উল্টে চাহিদা বাড়ছে তরতরিয়ে। এতটাই যে, দেশে আগাম পণ্য লেনদেনের বাজারে প্রতি ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দরের মুখ এখন ৫০ হাজারের দিকে। এই বাজারে সোনা, রুপো, তেলের মতো পণ্যের দাম আগামী দিনে কতটা বাড়তে বা কমতে পারে তা আঁচ করে, সেগুলি কেনা ও বেচার জন্য নির্দিষ্ট দামে আগাম চুক্তি করে রাখেন লগ্নিকারী। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, আর্থিক অনিশ্চয়তা বাড়লে মানুষ নিরাপদ লগ্নির দিকেই ঝোঁকেন। তাই আন্তর্জাতিক পণ্য লেনদেনের বাজারেও সোনার চাহিদা ও দাম বেড়েছে। ভারতের পণ্য বাজারে দাম থাকছে ৪৫-৪৬ হাজারের উপরে।
গত ২১ মার্চ কলকাতায় ১০ গ্রাম পাকা সোনার দর ছিল ৪১,৮৮০ টাকা (জিএসটি ছাড়া)। গয়নার সোনা ৩৯,৭৩০ টাকা। লকডাউনের আগে সেটাই সোনার শেষ হাতে-হাতে লেনদেন। তবে বাজার বন্ধ থাকলেও পরিসংখ্যান বলছে, আগাম লেনদেনের বাজার এমসিএক্সে জুনের বরাতের জন্য ১০ গ্রাম পাকা সোনার দর উঠেছে ৪৫,৭৩৫ টাকা। দিনের মাঝে দর ৪৭,৩২৭ টাকা ছুঁয়ে সেখানে সোনা রেকর্ড গড়েছিল গত বৃহস্পতিবার। পরের দিন তা প্রায় ১৫০০ টাকা নামে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আমেরিকায় ধাপে ধাপে আর্থিক কর্মকাণ্ড শুরুর ইঙ্গিত দেওয়ায় বিশ্ব বাজারেও সোনা শুক্রবার পড়ে দাঁড়ায় আউন্সে ১৭০০ ডলারের নীচে। ভারতে আগাম লেনদেনে অগস্ট ও পরের ফেব্রুয়ারির বরাতের জন্য দাম এখন যথাক্রমে প্রায় ৪৬,০০০ ও ৪৮,০০০ টাকা।
দাম বাড়ছে কেন?
আরও পড়ুন: নজরে চিন, তড়িঘড়ি বদল এফডিআই নীতি
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বিশ্বে আর্থিক পরিস্থিতি টালমাটাল। মন্দার আশঙ্কা চেপে বসেছে। শেয়ার বাজার পড়ছে। ব্যাঙ্কে সুদ কমছে। মূল্যবৃদ্ধির দৈত্যের সঙ্গে লড়তে তাই সোনাকেই নিরাপদ মনে করছেন লগ্নিকারী। আর্থিক বাজারের তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা টিকারপ্ল্যান্ট লিমিটেডের সিইও অরিন্দম সাহার দাবি, ‘‘অশোধিত তেল, শেয়ার, ডলার-সহ বিদেশি মুদ্রার মতো লগ্নির বিভিন্ন ক্ষেত্র যখন চূড়ান্ত অনিশ্চিত, তখন স্বাভাবিক নিয়মেই সোনায় লগ্নিতে ঝোঁক বাড়ে।’’
আগাম লেনদেন কী
• ভবিষ্যতে কোনও পণ্যের দাম বাড়া বা কমা আন্দাজ করে আগে থেকে তা কেনাবেচাকেই বলে আগাম লেনদেন।
• ভারতে এই কেনাবেচা চলে বিএসই ও এনএসই পরিচালিত কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে।
• নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ সোনা কিনতে বা বেচতে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে চুক্তি হয়। সেখানেই বলা থাকে ওই দিনে তার দাম কত টাকা ধরা হবে।
• নির্দিষ্ট দিনে ধাতুটির দাম বাড়লে ক্রেতার লাভ। কমলে বিক্রেতার।
• সাধারণত কমপক্ষে এক কেজি সোনা লেনদেন হয়।
• চুক্তির সময়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে দামের ৫%-৬% মার্জিন মানি হিসেবে এক্সচেঞ্জে জমা রাখতে হয়।
লকডাউন উঠলে সোনা কিনতে কি আকাশছোঁয়া দামই দিতে হবে?
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতে সোনার দাম ঠিক হয় বিশ্ব বাজারের ভিত্তিতে। কারণ, চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশই মেটাতে হয় বিদেশ থেকে কিনে। জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারেখ বলেন, ‘‘এক দিকে বিশ্ব বাজারে সোনার দাম বেড়েছে। অন্য দিকে টাকার নিরিখে ডলার চড়া বলে সোনা আমদানির খরচ বাড়বে।’’ সিংহভাগেরই তাই দাবি, বাজার খুললে সাধারণ ক্রেতাদের গায়েও দামের আঁচ লাগতে পারে।
আরও পড়ুন: ভয়ানক মন্দা, ফের বার্তা আইএমএফের
তবে স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ান মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি দীনেশ কাবরার প্রশ্ন, ‘‘বাজার খুললেও কে সোনা কিনবেন? তার উপরে দাম যদি বেশি থাকে! লকডাউনের জেরে আর্থিক হাল ও রুটিরুজির দশা যা দাঁড়াবে, তাতে সোনার চাহিদা বাড়তে সময় লাগবে।’’ বাবলুবাবু জানান, ব্যবসা বাঁচাতে কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছেন গয়নার কারবারিরা। ত্রাণ তহবিল গঠনের আর্জি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। যাতে ব্যবসায়ীরা সহজ শর্তে ঋণ পান।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)