Coronavirus

নেটে বিক্রি বা সরাসরি? অর্থনীতিবিদরা জোর দিচ্ছেন ভারসাম্য রক্ষায়

সংক্রমণ রোখার প্রশ্নে আপসে নারাজ আইএসআইয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অভিরূপ সরকার ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট-কলকাতার অর্থনীতির অধ্যাপক পার্থ রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০৪:০১
Share:

প্রতীকী ছবি

লকডাউন পর্বে অত্যাবশ্যক তালিকার বাইরের কিছু পণ্য নেট বাজারে বিক্রির অনুমতি দিয়েও শেষে পিছিয়ে এসেছে কেন্দ্র। এক দিকে, ঘরবন্দি ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছতে ও ছোট-মাঝারি বিক্রেতার থমকে থাকা ব্যবসার চাকা গড়াতে অনলাইনে বিক্রির জিনিস বাড়ানোর সওয়াল উঠেছে। অন্য দিকে, এই সুযোগ দিলে দোকান খুলে (অফলাইন) ব্যবসা করা ছোট ব্যবসায়ীর ভাতে টান পড়ার প্রশ্নে বেধেছে পাল্টা বিতর্ক। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই চাপান-উতোরেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত বদল। এর মধ্যে কেন্দ্র শর্তসাপেক্ষে কিছু ক্ষেত্রে দোকান খোলার কথা বললেও, ব্যবসায়ী মহলেই তার দিশা স্পষ্ট নয়। তবে অর্থনীতিবিদদের একাংশের মত, করোনা রুখতে ঘরে থাকা যেমন বাঞ্ছনীয়, তেমনই জরুরি কর্মসংস্থান ও মানুষের চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা। সতর্কতা মেনেই। সেই সূত্রে, প্রয়োজনে ব্যবসার ধরনেও সাময়িক বদলের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার সুযোগ আনছে এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি।

Advertisement

সংক্রমণ রোখার প্রশ্নে আপসে নারাজ আইএসআইয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অভিরূপ সরকার ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট-কলকাতার অর্থনীতির অধ্যাপক পার্থ রায়। তবে অভিরূপবাবু বলেন, ‘‘যাঁদের আয় এখনও নিশ্চিত কিংবা কিছু সঞ্চয় আছে, তাঁরা হয়তো আরও ক’দিন সামলাতে পারবেন। কিন্তু গরিব মানুষ দৈনিক আয় নির্ভর। তাঁদের পক্ষে সেটা কঠিন।’’ তাই ধাপে ধাপে সতর্ক হয়ে কাজের দরজা খোলার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখার কথা বলছেন তাঁরা।

অভিরূপবাবুর মতে, বহু পণ্যের চাহিদা থাকলেও, হাতে টাকা না-থাকায় হয়তো অনেকে তা কিনতে পারছেন না। তাঁর বক্তব্য, লকডাউনে অনেক দোকান বন্ধ থাকায় ব্যবসা বা কাজ খোয়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। তাঁরা নেটে পণ্য বেচে পরিস্থিতির কিছুটা সামাল দিতে পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘একটা নমনীয়তা থাকলে ভাল।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ছয় ফান্ডে তালা, দাওয়াই কই

পার্থবাবুও বলছেন, ‘‘কখনওই বিষয়টি ‘বাইনারি’, অর্থাৎ দ্বৈত নয়। একটি থাকলে অন্যটি থাকবে না বা তার উল্টোটা, তা নয়।’’ তাঁর যুক্তি, সংক্রমণ এড়াতে পারস্পরিক দূরত্ব জরুরি হলেও, দীর্ঘ দিন সর্বত্র লকডাউন অসম্ভব। হটস্পট এলাকার তথ্য সরকারের কাছেই রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দোকানে ভিড় এড়াতে বিক্রেতা ক্রেতাদের পণ্য পৌঁছে দিলে দু’দিকই বজায় থাকে। তবে বিভিন্ন এলাকার অবস্থা বুঝে পরিকল্পনার পক্ষে তিনি।

অনলাইনের পথে ব্যবসায়ীরা

•লকডাউনে ক্রেতার দরজায় সাধারণ দোকান থেকে অত্যাবশ্যক পণ্য পৌঁছতে জাতীয় স্তরের ই-কমার্স পোর্টাল।
•ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিএআইটির দাবি, করোনা সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতেই এই পথে হাঁটছে তারা।
•এতে উপকৃত হবেন ক্রেতা, পাইকারি ব্যবসায়ী, ছোট দোকানদারেরা। জিনিস বিক্রিতে সুবিধা হবে সংস্থাগুলিরও।
•পোর্টালের নকশার কাজ শেষ। পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থা ও স্টার্ট-আপের সঙ্গে কথা চলছে শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য উন্নয়ন দফতর এবং সিএআইটির।

ফ্লিপকার্ট বলছে

•কেন্দ্রের ধাপে ধাপে দোকান খোলার সিদ্ধান্ত স্বাগত।
•অত্যাবশ্যক না-হলেও, অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে, বাড়ি থেকে কাজ করতে বা তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ক্রেতাদের কিছু পণ্য জরুরি।
•সতর্কতার বিধি মেনে সেগুলিরও ধাপে ধাপে ই-কমার্সে বিক্রি চালু হলে মানুষের সুবিধা হবে। বিক্রি বাড়ায় উপকৃত হবে বিক্রেতা ও সংস্থাগুলি।
•সহজ হবে সংস্থাগুলির মজুত ভান্ডার খালি করাও।

সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, নেটে এখন আরও কিছু পণ্য বিক্রিতে সায় দিলে স্বল্পমেয়াদে ক্রেতাদের সুবিধা হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদেও তা চললে, চাহিদার অভাবে স্থানীয় দোকানে সেগুলির জোগান অনিশ্চিত হতে পারে। তখন ক্রেতা পুরো বৃহৎ পুঁজির একচেটিয়া আধিপত্যের উপর নির্ভরশীল হলে, মাথা তুলতে পারে সমস্যা। ভারত চেম্বারের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সীতারাম শর্মারও যুক্তি, নেটে বিক্রি হওয়া পণ্য অফলাইনে না-মিললে সমস্যায় পড়বেন অনেকে। কিছু দিন নেটে কেনাকাটা করলেও, সকলের পক্ষে বরাবর তা সম্ভব নয়। দু’ধরনের ক্রেতার উপস্থিতি মানলেও, অভিরূপবাবুর মতে, প্রতিযোগিতা থাকলে বৃহৎ পুঁজির একচেটিয়া কারবার গড়ে ওঠার আশঙ্কা কম।

এ নিয়ে বিতর্কের আগে উৎপাদন ব্যবস্থায় জোর দিচ্ছেন ব্যাগ, চর্মপণ্য তৈরিতে যুক্ত ছোট শিল্পোদ্যোগী তরুণ মল্লিক। অনলাইন ও অফলাইন, দুই কাঠামোতেই ব্যবসায় অভ্যস্ত তরুণবাবুর কথায়, ‘‘উৎপাদন করতে না-পারলে ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছবে কী করে? বরং সতর্কতা বিধি মেনে কী ভাবে ধাপে তা সুষ্ঠু ভাবে চালু করা যায়, সেটা দেখা জরুরি।’’

আরও পড়ুন: নিশ্চুপে ভাঙছে আইন, তোপ কর্মী ইউনিয়নের

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.i•ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement