—প্রতীকী চিত্র।
করোনার ক্ষত কাজের বাজারে কতটা দগদগে, তার হদিস পেতে শ্রম মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা শুরু করল অর্থ মন্ত্রক।
সূত্রের খবর, করোনার সংক্রমণ রুখতে দেশ জোড়া লকডাউনের সময়ে কত জনের কাজ গিয়েছে, বেতন ছাঁটাই হয়েছে ক’জনের— এই সমস্ত পরিসংখ্যান শ্রম মন্ত্রককে জোগাড় করতে বলেছে অর্থ মন্ত্রক। যাতে এই অতিমারি কাজের বাজারকে কতটা ধাক্কা দিয়েছে, কোপ পড়েছে কত জনের আয়ে, তার ছবি হাতের কাছে পাওয়া যায়। শুধু কল-কারখানা নয়, তথ্যপ্রযুক্তি-সহ পরিষেবা ক্ষেত্র, বিভিন্ন অ্যাপ নির্ভর পরিষেবা সংস্থা, স্টার্ট-আপ সংস্থাকেও এর আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। দরকারে কথা বলতে বলা হয়েছে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সঙ্গেও।
একই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, চরম দুর্দশায় থাকা পরিযায়ী শ্রমিক, কাজ হারানো কর্মী বা দু’বেলা খাবার জোটাতে আতান্তরে পড়া দরিদ্রদের হাতে নগদ টাকা দেওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না তারা। প্রয়োজনে সরাসরি তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর কথা ভাবা হতে পারে।
দেশে কাজের বাজারের ছবি কেমন সে বিষয়ে স্পষ্ট সরকারি পরিসংখ্যান তেমন নেই। বরং আগে এনএসএসও-র বেকারত্ব সংক্রান্ত তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু কাজের বাজারে করোনা ছোবল বসানোর পরে তা একান্ত জরুরি হয়ে উঠেছে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে। প্রশ্ন, সেই কারণেই কি এই উদ্যোগ?
বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে প্রধানমন্ত্রী ২০ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণার পরেও তা নিয়ে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছে কেন্দ্র। অর্থনীতিবিদরা দেখিয়েছেন, এর বেশিরভাগটাই হয় পুরনো বরাদ্দ, নয়তো সহজে ঋণের সুবিধা। অথচ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন— অনেকেই মনে করেন, ওই প্রকল্প অর্থনীতিকে দীর্ঘ মেয়াদে টেনে তুলতে তা-ও কাজে দিতে পারে। কিন্তু চাহিদাকে চাঙ্গা করতে ও দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া দরিদ্রদের এই কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার সুযোগ করে দিতে সবার আগে জরুরি আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষের অ্যাকাউন্টে সরাসরি কিছু টাকা পাঠানো। অন্তত কয়েক মাসের জন্য। কিন্তু কেন্দ্র সে ভাবে সেই পথে হাঁটেনি। তাদের দিকে অভিযোগের তির পরিযায়ী শ্রমিকদের আর্থিক সুরাহা না-দেওয়া নিয়েও।
তা ছাড়া, শুধু ঋণের জলে যে চিঁড়ে ভিজছে না, সম্ভবত তা টের পাচ্ছে কেন্দ্র। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ব্যাঙ্কগুলি যে পরিমাণ ঋণ মঞ্জুরের কথা বলছে, তার তুলনায় অনেক কম তা দেওয়ার অঙ্ক। প্রথমে মনে করা হচ্ছিল, ধার নিতে চেয়েও তা নিতে ব্যাঙ্কে আসতে পারছেন না অনেক গ্রাহক। কিন্তু এখন স্পষ্ট যে, ঋণের প্রকৃত চাহিদা অতখানি নয় তো বটেই, উপরন্তু পরে এনপিএ-র সমস্যা ভেবে দেদার ধার দিতে ভয় পাচ্ছে ব্যাঙ্কও।
এই প্রবল চাপের মুখে অর্থ মন্ত্রক আগামী দিনে নীতির গতিমুখ বদলায় কি না, নজর থাকবে সে দিকেই।