প্রতীকী ছবি
বিতর্ক দানা বাঁধছিল বেশ কয়েক দিন ধরেই। অর্থনীতির ঝিমুনি ও করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের জেরে ধুঁকতে থাকা অবস্থায় ভারতীয় সংস্থাগুলি বিদেশি, বিশেষত চিনের সংস্থাগুলির অধিগ্রহণের লক্ষ্য হয়ে উঠতে পারে বলে অভিযোগ করছিল বিভিন্ন মহল। তা আরও জোরদার হয় সম্প্রতি গৃহঋণ সংস্থা এইচডিএফসি-তে চিনের শীর্ষ ব্যাঙ্ক পিপ্লস ব্যাঙ্ক অব চায়না অংশীদারি বাড়ানোয়। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী ও সঙ্ঘ-পরিবারের অর্থনীতি বিষয়ক ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। তার পরেই শনিবার তড়িঘড়ি প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি (এফডিআই) নীতি বদলাল কেন্দ্র।
শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য দফতর (ডিপিআইআইটি) জানিয়েছে, যে সব দেশের স্থলসীমান্ত ভারতের সঙ্গে যুক্ত, সেখানকার কোনও সংস্থা বা ব্যক্তিকে এ দেশের সংস্থায় লগ্নি করতে হলে কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হবে। ‘সুযোগসন্ধানী অধিগ্রহণ’ আটকাতেই এই সিদ্ধান্ত। উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত থাকা দেশগুলি হল চিন, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, মায়ানমার, ভুটান ও আফগানিস্তান।
এমনিতে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক ও সংস্থা অন্য দেশের সংস্থা বা সরকারি ঋণপত্র-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে লগ্নি করে। এত দিন পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ছাড়া বাদবাকি দেশের সংস্থা ও ব্যক্তিরাও সরাসরি বা অনুমোদন নিয়ে ভারতীয় সংস্থার অংশীদারি হাতে নিতে পারতেন। কিন্তু করোনার ধাক্কায় ভারতে বিপুল পড়েছে শেয়ার বাজার। বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার দর পৌঁছেছে তলানিতে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, কম দামের সুযোগ নিয়ে ভারতীয় সংস্থাগুলির রাশ হাতে নেবে না তো বিদেশিরা!
আরও পড়ুন: পণ্য পরিবহণ কমে জোর ধাক্কা রেলে
ক’দিন আগেই নিয়ন্ত্রক সেবিও ভারতের শেয়ার বাজারে চিন থেকে আসা লগ্নি নিয়ে বিভিন্ন অছি পরিষদকে প্রশ্ন করেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সে দিক থেকে দেখতে গেলে যে ভাবে দ্রুত কেন্দ্র এফডিআই নীতি বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত, গত কয়েক বছরেই যেখানে ৩০টি প্রথম সারির ভারতীয় স্টার্ট-আপের ১৮টিতেই লগ্নি করেছে চিনা সংস্থাগুলি। যাদের মধ্যে রয়েছে, ওলা, পেটিএম, সুইগি, ফ্লিপকার্ট ইত্যাদি।
এইচডিএফসি-র খবর সামনে আসতেই স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে সতর্ক করেছিলেন। যুক্তি ছিল, কোনও ভাবেই এই সব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা যাতে ভারতীয়দের হাতছাড়া না-হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজনের দাবি ছিল, চিনের শীর্ষ ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপ বিপদ-ঘণ্টা বাজিয়েছে। তাই বিধিনিষেধ জারি ও বিদেশি লগ্নিতে নজরদারিতে ‘ইকনমিক ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি’ তৈরি করতে হবে। রাহুলও বলেন, দেশীয় কর্পোরেট সংস্থাগুলি যাতে বিদেশি দখলে না-যায়, তা দেখা উচিত কেন্দ্রের।
এ দিন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পরে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে ধন্যবাদ জানান মহাজন। তাঁর সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য মোদী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাহুলও।
আরও পড়ুন: ডাকঘরে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা জমা