প্রতীকী ছবি।
লকডাউনে বাইরে যাওয়া বারণ। বন্ধ গণপরিবহণও। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বা বাড়ি থেকে কাজ করতে হলে ফোন, বিশেষত মোবাইলই ভরসা। কিন্তু গ্রাহকদের অনেকের অভিযোগ, বহু সময়েই হয় ফোনের সংযোগ হচ্ছে না, নয়তো কথা বলার মাঝে তা কেটে যাচ্ছে (কল ড্রপ)। নেট চালু করলে তার চাকা ঘুরেই (বাফারিং) চলেছে। সব মিলিয়ে তিতিবিরক্ত তাঁরা। টেলি শিল্পের অবশ্য দাবি, এই মুহূর্তে ডেটার চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে প্রায় ৫০% বেড়েছে। এই অবস্থায় কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিকাঠামোর অভাবের জন্য সরকারি বাধাকেই নিশানা করছে সংস্থাগুলি। তুলেছে কিছু ক্ষেত্রে কর্মীদের কাজে যেতে পুলিশের বাধার অভিযোগও।
বেশিরভাগ সংস্থাই কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ দেওয়ায় সুষ্ঠু ফোন পরিষেবার প্রয়োজন বেড়েছে। বাইরে থেকে প্রবীণদের খোঁজ নিতেও সেটাই ভরসা। কিন্তু বহু গ্রাহকের অভিযোগ, কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা এলাকায় মাঝে মধ্যেই মোবাইলে সমস্যা হচ্ছে। সব সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও, ভোডাফোন আইডিয়ার ক্ষেত্রে তা কিছুটা বেশি।
গ্রাহক সমস্যা নিয়ে প্রতিক্রিয়া না-দিলেও ভোডাফোন ও এয়ারটেলের দাবি, তারা কম কর্মী নিয়ে পরিষেবা চালাচ্ছে। নজর দিচ্ছে বাড়তি চাহিদায়। রিলায়্যান্স জিয়ো প্রতিক্রিয়া না-দিলেও সূত্রের খবর, তারাও সেই পথে হাঁটছে। একই দাবি বিএসএনএলেরও। টেলি সংস্থাগুলির সংগঠন সিওএআইয়ের ডিজি রাজন ম্যাথুজ় অবশ্য বলেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীর, ছত্তীসগঢ় ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পরিষেবার মান খারাপ হলেও অন্যত্র ট্রাইয়ের বেঁধে দেওয়া মাপকাঠির মধ্যেই রয়েছে।’’
অভিযোগ
• লকডাউনে যোগাযোগের অন্যতম ভরসা ফোন। কিন্তু বাড়ছে কল-ড্রপ।
• বহু ক্ষেত্রে ইন্টারনেট পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছে।
• ফলে সমস্যা হচ্ছে বাড়ি থেকে কাজেও।
শিল্পের দাবি
• টাওয়ার ও এক্সেচেঞ্জের সুইচে যোগাযোগের জন্য জরুরি অতিরিক্ত ‘ব্যাকহল স্পেকট্রাম’ চার বছর ধরে দেয়নি ডট।
• অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল ও নতুন টাওয়ার বসাতে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদনে বাধা।
• বকেয়া ফি মেটানোর অর্থ জোগাতে গিয়ে টান পড়েছে পরিকাঠামো নির্মাণের ভাঁড়ারে।
• বাড়ি থেকে কাজের জেরে হঠাৎ নেটের চাহিদা বৃদ্ধি।
• অধিকাংশ বাড়িতে বেশি গতির তারযুক্ত বা ওয়াই-ফাই পরিষেবা না-থাকায় বাড়ছে মোবাইলের হট স্পটের ব্যবহার।
• ডেটার চাহিদা প্রায় ৫০% বাড়ায় বাড়তি চাপ পড়ছে।
• কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে সেই চাহিদা মেটাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ম্যাথুজ়ের অভিযোগ, পরিকাঠামো তৈরিতে বাধা টেলিকম দফতর ও স্থানীয় প্রশাসনও। যেমন, মোবাইল থেকে টাওয়ারের মধ্যে সংযোগের মাধ্যম অ্যাকসেস স্পেকট্রাম। টাওয়ার থেকে সুইচের ক্ষেত্রে ব্যাকহল স্পেকট্রাম। প্রথমটির নিলাম থমকে। দ্বিতীয়টি চার বছর ধরে সংস্থাগুলিকে দেয়নি কেন্দ্র। টেলিকম দফতর অবশ্য শুক্রবারই সংস্থাগুলির কাছে বাড়তি স্পেকট্রামের বরাত জানতে চেয়েছে।
ব্যাকহল স্পেকট্রাম না-পেলে অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল বসানো যায়। কিন্তু ম্যাথুজ়ের দাবি, ওই কেব্ল বা টাওয়ার বসাতে স্থানীয় প্রশাসনের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। ফলে ধাক্কা খাচ্ছে পরিকাঠামো বৃদ্ধি। তার উপরে লকডাউনে কিছু জায়গায় কর্মীদের পুলিশ কাজে যেতে বাধা দেওয়ায় সমস্যা বাড়ছে। টেলিকম সচিব অংশু
প্রকাশ অবশ্য আগেই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে বিষয়টি দেখার কথা বলেছেন। এই চাপান-উতোরের মধ্যে গ্রাহকদের প্রশ্ন, তাঁদের সুষ্ঠু পরিষেবার কী হবে?