প্রতীকী ছবি।
এখনকার নিয়মে পণ্যের মোড়কের উপরে নির্দিষ্ট ওজন লেখা থাকে। কিন্তু বাজারে মোড়ক ছাড়া পণ্যটির ওজনের নিরিখে তার দামের সঙ্গে তা সব সময় মেলে না। ফলে ৩.৫ কিলোগ্রাম চালের গুঁড়ো হোক কিংবা ৮৮ গ্রামের বিস্কুটের প্যাকেট, জিনিসটি আসলে সস্তা পড়ল না দামি, ক্রেতার কাছে বহু ক্ষেত্রে সেটা স্পষ্ট হয় না সঠিক তথ্যের অভাবে। আগামী এপ্রিল থেকে সেই নিয়মই বদলাচ্ছে। সেখানে মোড়কবন্দি পণ্যের ক্ষেত্রে প্রতি গ্রাম বা কিলোগ্রাম কিনতে কত টাকা খরচ করতে হচ্ছে, তা খুব সহজে প্যাকেটের উপর চোখ রেখেই যাতে ক্রেতা বুঝতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ জন্য মোড়কবন্দি পণ্যের আইন সংশোধন করেছে কেন্দ্র। আইনের পুরনো কয়েকটি ধারা বাতিলও করেছে। ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রকের দাবি, ক্রেতার কাছে পণ্যের নির্দিষ্ট হার (ইউনিট সেল প্রাইস) ভিত্তিক (কেজি বা গ্রাম) দামের আভাস আরও স্পষ্ট করতে এবং সংস্থাগুলির নিয়ম মানার বোঝা সরল করার লক্ষ্যেই এই বদল। কোনও পণ্যের প্রস্তুতকারক সংস্থা সব সময়ে সব রকম ওজনের হিসাব করে মোড়ক তৈরি করতে পারে না। এ বার সেই নিয়মও বদলাচ্ছে।
যেমন, এখন চালু নিয়মে চালের গুঁড়ো বা আটার মোড়ক ১০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম, ১ কেজি, ১.২৫ কেজি, ১.৫ কেজি, ১.৭৫ কেজি, ২ কেজি, ৫ কেজি এবং তার বেশি হলে ৫ কেজি-র গুণিতকে (যেমন ১০, ১৫, ২০ ইত্যাদি) মোড়কবন্দি করা যায়। কিন্তু সংস্থাগুলি এর বাইরে অন্য ওজনে মোড়ক তৈরি করে পণ্য বিক্রি করতে আগ্রহী থাকে। আবার অন্য দিকে, ক্রেতাও যে প্যাকেটটি কিনছেন তার বাইরে অন্য ওজনের হিসাব সম্পর্কে স্পষ্ট আন্দাজ পান না। ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রক সোমবার জানিয়েছে, আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা (শিডিউল) বাতিল করা হবে, যেটির মোতাবেক নির্দিষ্ট ওজন, মাপ বা সংখ্যায় নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে জিনিসপত্র প্যাকেটে ভরা হয়। বদলে আগামী এপ্রিল থেকে এক কেজি-র বেশি পণ্য মোড়কে ভরলে প্রতি কেজি-র দাম এবং সর্বোচ্চ দাম (এমআরপি) ছাপাতে হবে। অর্থাৎ, আড়াই কিলোগ্রামের আটার প্যাকেটে প্রতি কিলোগ্রামের দাম লেখা থাকবে। সরকারি সূত্রের নির্দেশ, ঠিক তেমন ভাবেই পণ্যের ওজন এক কিলোগ্রামের কম হলে সর্বোচ্চ দামের সঙ্গে মোড়কে লিখতে হবে প্রতি গ্রামের দাম। ফলে ক্রেতা সেই হিসেবে মোট ওজনের দামের একটা স্বচ্ছ হিসেব পাবেন। পাশাপাশি সংস্থাগুলিও যে কোনও ওজনের প্যাকেট তৈরি করে বিক্রি করতে পারবে সহজে।
মোড়কে ‘এমআরপি’ ছাপানোর নিয়মও সরল করছে কেন্দ্র। এখন মোট দাম লিখতে হয়, টাকা ও দশমিকের পরে পয়সার হিসাব দিয়ে। যেমন, ২০.৫০ টাকা। দশমিকের পরের হিসাব লেখা না-থাকলে নিয়ম ভাঙার জন্য সংস্থাকে নোটিস দেওয়া হয়। নয়া নিয়মে কোনও নির্দিষ্ট ধরন আর থাকছে না। শুধু টাকার অঙ্ক লিখলেই হবে। সে ক্ষেত্রে পয়সার হিসেব কী ভাবে থাকবে, তা স্পষ্ট হয়নি এ দিন।
তৃতীয় পদক্ষেপে মোড়কের পণ্যের পরিমাণ উল্লেখের নিয়মও সরল করে কেন্দ্রীয় সরকার এ দিন জানিয়েছে, সংখ্যা, ‘ইউনিট’, জোড়া ও টুকরো, সব রকম ভাবেই পরিমাণ উল্লেখ করতে পারবে সংস্থাগুলি।
সর্বশেষ সংশোধনটি হল, পণ্যটি সংস্থা কবে তৈরি করছে, তার দিনক্ষণ উল্লেখ। চালু নিয়মে পণ্যটি কবে তৈরি হয়েছে বা আমদানি করা হয়েছে, তার কোনও একটি উল্লেখ করতে হয়।