Market Price

এখনও মাথাব্যথা সেই খাদ্যপণ্যের চড়া দাম

সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, এই অর্থবর্ষে ৭.৩% আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস নিয়ে ঢাক পেটাচ্ছে মোদী সরকার। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি আর বেকারত্ব যাঁদের রাতের ঘুম কেড়েছে, তাঁদের কী লাভ হচ্ছে?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

উৎসবের মরসুম শেষ। চাহিদা কিছুটা ‘স্বাভাবিক’ জায়গায় নেমেছে। সামান্য হলেও মাথা নামিয়েছে কাঁচামালের দাম। ফলে নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে বাড়িতে নিরামিষ ও আমিষ থালি রান্নার খরচ যথাক্রমে ৩% এবং ৫% কমেছে। মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স রিসার্চের ব্যাখ্যা, মাসের নিরিখে পেঁয়াজ এবং টোম্যাটোর দাম ১৪% এবং ৩% করে মাথা নামানোর কিছুটা সুফল পাচ্ছেন দেশবাসী। কমেছে ব্রয়লার মুরগিও। তবে তাদের সমীক্ষা রিপোর্টে এটাও স্পষ্ট, এক মাসের ব্যবধানের এই হিসাবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার কোনও সুযোগ নেই। কারণ, বছরের নিরিখে এখনও ১২% চড়ে নিরামিষ থালির খরচ। অর্থাৎ, ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধি থেকে নিস্তার মিলছে না সাধারণ মানুষের। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, এই অর্থবর্ষে ৭.৩% আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস নিয়ে ঢাক পেটাচ্ছে মোদী সরকার। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি আর বেকারত্ব যাঁদের রাতের ঘুম কেড়েছে, তাঁদের কী লাভ হচ্ছে?

Advertisement

সম্প্রতি বিভিন্ন সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, অতিমারির ধাক্কা কাটিয়ে ভারতীয় অর্থনীতির চাকায় গতি এসেছে বটে। তবে নিচু আয়ের মানুষের আর্থিক অবস্থা তেমন ফেরেনি। ঘটনাচক্রে রবিবারই আর এক মূল্যায়ন সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চের মুখ্য অর্থনীতিবিদ দেবেন্দ্র কুমার পন্থ বলেন, কম রোজগেরেদের উপরেই মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব এখন অর্থনীতির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই অবস্থায় সোমবার স্টেট ব্যাঙ্কের গবেষণা শাখা তাদের রিপোর্টে দেশে আর্থিক বৈষম্য কমেছে বলে দাবি করেছে। আর লোকসভা ভোটের মুখে বিরোধীদের আক্রমণ সামলাতে এ বার সেই রিপোর্টকেই হাতিয়ার করেছে কেন্দ্র।

এ দিন ক্রিসিলের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিভিন্ন অঞ্চলে খাবারের কাঁচামালের দামের ভিত্তিতে সারা দেশে নিরামিষ ও আমিষ থালি তৈরির খরচের গড় হিসাব কষে তারা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, পেঁয়াজ-টোম্যাটোর মতো আনাজের দর নভেম্বরের তুলনায় সামান্য কমায় থালির খরচও কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম ৫%-৭% কমায় আমিষ থালির খরচ কমেছে খানিকটা বেশি। কারণ সেখানে মুরগির মাংসের গুরুত্ব প্রায় ৫০%। সংশ্লিষ্ট মহলের অবশ্য বক্তব্য, গত এক বছর ধরেই আনাজপাতির দামের ছেঁকায় আমজনতা ব্যতিব্যস্ত। মাঝেমধ্যে তার যৎসামান্য হেরফের হলেও, দীর্ঘমেয়াদি স্বস্তির লক্ষণ নেই। এক দিন একটু দাম কমে তো পরের দিন ফের চড়ে যায়। ক্রিসিলের রিপোর্টে সেটাও স্পষ্ট। সেখানে জানানো হয়েছে, ২০২২-এর ডিসেম্বরের নিরিখে হিসাব কষলে দেখা যাচ্ছে গত মাসে আমিষের খরচ ৪% কমলেও নিরামিষ থালির খরচ বেড়েছে প্রায় ১২%। মূল কারণ যথারীতি পেঁয়াজ (৮২%) এবং টোম্যাটোর (৪২%) অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। ডালের দাম প্রায় ২৪% বেড়েছে। উল্টো দিকে উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে মাংসের দাম ১৫% কমায় আমিষ থালি তৈরির খরচ তুলনায় কম।

Advertisement

এ দিন কলকাতার খুচরো বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩৫-৪০ টাকা। রসুন ৩০০-৩৫০ টাকা, টোম্যাটো ৩৫-৪০ টাকা এবং জ্যোতি ও চন্দ্রমুখী আলু যথাক্রমে ২০ টাকা এবং ২৫ টাকা। মুসুর ও মুগ ডাল ঘোরাফেরা করছে ১০০-১২০ টাকার মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দামেই স্পষ্ট সাধারণ বা স্বল্প রোজগেরেদের জীবনে স্বস্তির লেশমাত্র নেই। রবিবার এক সাক্ষাৎকারে পন্থ বলেন, কম আয়ের মানুষ যে সব পণ্য-পরিষেবা কেনেন, সেগুলির দাম অপেক্ষাকৃত বেশি বাড়ছে। আনাজপাতির বাজার দরেই যা স্পষ্ট। অনিয়মিত বৃষ্টিতে ফলন ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা থাকায় খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে চলেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও। খোদ কেন্দ্রের হিসাবেই দেখা গিয়েছে, এই অর্থবর্ষে কৃষি ক্ষেত্রের বৃদ্ধিই হতে পারে সব থেকে কম (১.৮%)।

যদিও বিভিন্ন মহল থেকে দেশে আর্থিক বৈষম্য বৃদ্ধির যে অভিযোগ উঠছে তাকে তীব্র আক্রমণ করা হয়েছে এসবিআই গবেষণা শাখার রিপোর্টে। সেখানে দাবি, এই ধরনের অভিযোগ ভুল ও কাল্পনিক। আয়ের বৈষম্য আসলে কমছে। ২০১৩-১৪ থেকে ২০২০-২১ অর্থবর্ষের মধ্যে বহু মানুষ আয়করের নীচের স্তর থেকে উচ্চতর স্তরে উঠে এসেছেন। বছরে ১০-২৫ লক্ষ টাকা আয়ের মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ২৯১%।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement