প্রতীকী ছবি
আসছে নিয়ো ব্যাঙ্ক। প্রথাগত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার ধারণাকে ভেঙে তৈরি হচ্ছে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বা মোবাইল অ্যাপ নির্ভর ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা। এদের কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা নিয়ে বিস্তারিত ভাবনা শুরু করে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। যত দিন তা না হচ্ছে তত দিন এই আর্থিক সংস্থাগুলি কাজ করবে প্রথাগত ব্যাঙ্কের সহচর হিসাবেই।
নিয়ো ব্যাঙ্ক বা নয়া ব্যাঙ্কগুলির কোনও প্রথাগত শাখা থাকবে না। কাগজে সই করে অ্যাকাউন্ট খোলারও দায় থাকবে না। এই নতুন ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় সবই হবে নেট নির্ভর। বিশ্ব জুড়ে এই ব্যবস্থা এখনও পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পরীক্ষায় ভারতও পিছয়ে নেই।
যেমন ফ্যামপে। ২০১৮-১৯ সালে আইআইটি থেকে পাশ করা কুশ তানেজা আর সম্ভব জৈনের তৈরি এই সংস্থা ইতিমধ্যেই সংবাদের শিরোনামে। আইডিএফসি ব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কিশোর-কিশোরীদের কাছে প্রথাগত ব্যাঙ্কিংয়ের কাগুজে ঝামেলা এড়িয়ে লেনদেনের সুযোগ করে দিচ্ছে। বাজার থেকে সম্প্রতি ৩ কোটি ৮০ লক্ষ ডলার তুলেছে সংস্থাটি।
নিয়ো বলে অন্য একটি সংস্থা বাজারে নেমেছে কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে। ইয়েলো বলে আর একটি সংস্থা বাজারে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একটি সমীক্ষা বলছে বিশ্ব জুড়ে নয়া জামানার এই ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় গ্রাহকের সংখ্যা ৩ কোটি ৯০ লক্ষ। ফ্যামপে-র দাবি গত ৮ মাসে তাদের গ্রাহক সংখ্যা ৮০ লক্ষ ছাড়িয়েছে!
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর মাসে প্রকাশিত স্টাটাস রিপোর্টে বলা হয়েছে, নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পা মিলিয়ে গ্রাহকদের, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের গ্রাহকদের চাহিদাও বদলাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন চাহিদা, যা প্রথাগত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় মেটানো সম্ভব নয়। এই চাহিদা মেটাতে নজরদারি ব্যবস্থাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। শীর্ষ ব্যাঙ্ক তা নিয়ে পর্যালোচনাও শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন এই সংস্থাগুলিকে প্রথাগত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কাজ করতে হবে যাতে নজরদারি জারি রাখতে অসুবিধা না হয়।
এই সংস্থাগুলি কাজ করবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ফামপে-র উদাহরণই নেওয়া যাক। মাত্র ৪০ জন কর্মী নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে কিশোর-কিশোরীদের অ্যাকাউন্ট খুলছে অনলাইন। অভিভাবকরা টাকা ভরে দিচ্ছেন। কিশোর-কিশোরীরা সেই টাকা খরচ করতে পারবে অনলাইন। থাকবে ডেবিট কার্ডও। কিন্তু এই ডেবিট কার্ডে কোনও নম্বর থাকবে না। যাতে কেউ চুরি করে ব্যবহার না করতে পারে। টাকাও তোলা যাবে।
এই অ্যাকাউন্ট থেকে বিদেশেও টাকা খরচ করা যাবে। খরচের সীমাও বেঁধে দেওয়া যাবে। বিদেশে গিয়ে প্রথাগত ডেবিট কার্ডে খরচ করার জন্য যে সব অনুমতি নিতে হয়ে থাকে ব্যাঙ্ক থেকে তার হ্যাপাও এই নতুন ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় থাকবে না।
এই ব্যবস্থায় ঋণ নেওয়া থেকে শুরু করে গোটা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাই আস্তে আস্তে আপনার ল্যাপটপ এবং মোবাইলেই করতে পারবেন। আর কষ্ট একটাই। প্রথাগত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় অন্তত শাখায় গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। এই ব্যবস্থায় মুখোমুখি বসে বুঝে নেওয়ার সুবিধা থাকবে না। কারণ, কোনও মুখই যে থাকবে না!