প্রতীকী ছবি।
কোন চিকিৎসা কিংবা রোগ পরীক্ষার খরচ কত— হাসপাতাল, নার্সিংহোম, রোগ নির্ণয় কেন্দ্র-সহ স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সব ব্যবসায়িক সংস্থাকে সেই তালিকা নিজেদের চত্বরে বাধ্যতামূলক ভাবে টাঙিয়ে রাখতে বলেছিল কেন্দ্র। এই ব্যবস্থা করতে প্রায় বছর দশেক আগে আইন তৈরি করে তারা। সেই অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১৮টি রাজ্য সে ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তিও দেয়। কিন্তু বিমা এবং গ্রাহক মহল সূত্রের অভিযোগ, কাজ কিছু হয়নি। আজ পর্যন্ত রাজ্যগুলি তা ঠিক ভাবে কার্যকর করতে পদক্ষেপ করেনি। নজরদারির অভাবে বেশিরভাগ স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীই বিষয়টি অগ্রাহ্য করে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে গিয়েছে।
বিমা নিয়ন্ত্রক আইআরডিএ-র পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য বিজন মিশ্রের দাবি, কেন্দ্রীয় আইন মানা হচ্ছে কি না সে দিকে নজর দেয়নি কোনও রাজ্য। ফলে রোগীর স্বার্থহানি ঘটেছে। তাঁর আক্ষেপ, অনেক হাসপাতাল-নার্সিংহোম রোগীর পরিবারকে বেশি টাকা দিতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ ওঠে। প্রকাশ্যে তালিকা থাকলে তার মোকাবিলা করায় সুবিধা হত। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, কেউ কোনও ক্ষেত্রে বেশি টাকা নিলেও তা ধরা পড়ে যেত।
সূত্রের দাবি, বেশ কিছু রাজ্য এ সংক্রান্ত বিধি তৈরি করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা প্রয়োগে উদ্যোগী হয়নি। মিশ্রর ইঙ্গিত, উৎসাহী না হওয়ার কারণ কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চাপ। চিকিৎসা হোক বা রোগ নির্ণয়ের খরচ, স্বচ্ছতা আসলে এবং গ্রাহক সচেতন হলেই তাদের কায়েমি স্বার্থ পূরণ করা কঠিন হবে। সেই চাপের মুখে রাজ্যগুলিও হাত গুটিয়ে রয়েছে।
ক্লিনিকাল এস্টাব্লিসমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী, স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সব ব্যবসায়িক সংস্থাকে বাধ্যতামূলক ভাবে নথিবদ্ধ হওয়া ছাড়াও খরচের ব্যাপারে কিছু বিধি মেনে চলতে হয়। সম্প্রতি বিমা ওম্বুডসম্যান দিবস পালন উপলক্ষে রাজ্য বিমা ওম্বুডসম্যান দফতর আয়োজিত অনুষ্ঠানে মিশ্রবলেন, “বহু ক্ষেত্রে হাসপাতাল বা নার্সিহোম বেশি টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণের আইন এখনও তৈরি হয়নি। ওই ঘাটতি অনেকটা মেটাতে পারে ক্লিনিকাল এস্টাব্লিসমেন্ট অ্যাক্ট।’’ তবে এখনও সেই আইন কার্যকর করে রোগীর স্বার্থ রক্ষা করতে না পারার দায় তিনি মূলত রাজ্যগুলির উপরই চাপিয়েছেন।
মিশ্রের দাবি, “স্বাস্থ্য পরিষেবা রাজ্য-তালিকার অন্তর্গত। তালিকায় থাকা যে কোনও বিষয়ে তাই কেন্দ্র আইন পাশ করলেও রাজ্যগুলিকে তা গ্রহণ করতে হয়। এ জন্য বিধি তৈরি করে কার্যকর করতে নামতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির সেই উদ্যোগ দেখা যায়নি। অনেকে রুল তৈরি করেও চুপচাপ বসে রয়েছে।’’