চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যে শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারে জমি পাওয়ার বিষয়টি দীর্ঘ দিনের সমস্যা। তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার বেসরকারি সংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরোধী হওয়ায় এখানে বড় শিল্প তৈরি হবে কী করে, সেই প্রশ্নও বহু বার উঠেছে। বিশেষত জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনের নানা শর্তের গেরোয় আটকেও যেহেতু মূলত শহরাঞ্চলের লগ্নিকারীরা খুব বেশি জমি হাতে রাখতে পারেন না। বৃহস্পতিবারের রাজ্য বাজেটে অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সেই সমস্যাই কিছুটা মেটানোর বার্তা দিলেন। জানালেন, শহরে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনটি পুনর্বিবেচনা করবেন তাঁরা। এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল। একই লক্ষ্যে এর আগে লিজ়ে থাকা সরকারি জমিতে মালিকানা (ফ্রি-হোল্ড) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য।
চন্দ্রিমা বলেন, শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯৯-এ শহরে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন বাতিল করেছিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। বহু রাজ্য তা তুলে দিয়েছে। এ বার তাঁরা ওই আইন পুনর্বিবেচনা করবেন। একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার আইনের ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত ধারাগুলির জরুরি বিষয় ফিরে দেখার আশ্বাস দেন তিনি।
এ দিন চন্দ্রিমা জানিয়েছেন, লিজহোল্ডের সরকারি জমিকে ফ্রি-হোল্ড তকমা দেওয়ার নীতি সরকারের সব বিভাগ, সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা, পুর-সংস্থা ও পঞ্চায়েত সংস্থাগুলির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। জমি প্রাপকদের সুবিধার জন্য এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ ক্ষেত্রে চালু হবে একটি অনলাইন ব্যবস্থা।
অর্থ প্রতিমন্ত্রীর এই সব প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারত চেম্বারের প্রেসিডেন্ট এন জি খেতান, আবাসন ক্ষেত্রের সংগঠন ক্রেডাই-ওয়েস্ট বেঙ্গলের চেয়ারম্যান সুশীল মোহতা, আবাসন-উপদেষ্টা সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের অন্যতম কর্তা অভিজিৎ দাস প্রমুখ। সুশীলের দাবি, যে সব আইন পুনর্বিবেচনার কথা বলা হয়েছে বাজেটে, সেগুলি অত্যন্ত পুরনো। ওই আইন তৈরি হওয়ার সময় দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা অনেক আলাদা ছিল। এখন ভারত যখন মজবুত অর্থনীতির পথে এগোচ্ছে, তখন সেগুলির আধুনিকীকরণও জরুরি। তাঁর অভিমত, ঊর্ধ্বসীমা আইনের গেরোয় বড় লগ্নিকারীরা পশ্চিমবঙ্গকে এড়িয়ে চলেন। বড় প্রাতিষ্ঠানিক পুঁজিও আসে না। তাই প্রয়োজনীয় বদল আনলে এক দিকে যেমন রাজস্ব আদায় বাড়বে, অন্য দিকে তেমনই তৈরি হবে আরও বেশি কর্মসংস্থান।
অভিজিতের মতে, শহরে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন বাতিল করা হলে তা হবে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। আর ভূমি সংস্কার আইন পুনর্বিবেচনা করা হলে তা শুধু যে বিপুল জমি শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করবে তাই নয়, রাজ্যে ব্যবসার পরিবেশ আরও সহজ করবে।