পিপিএফ মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের কাছে সঞ্চয়ের জনপ্রিয় ঠিকানা। প্রতীকী ছবি।
গত দু’টি ত্রৈমাসিকে সুদের হার বাড়ানো হয়েছিল কিছু স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে। নতুন অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক অর্থাৎ এপ্রিল-জুনে সুদ বাড়ল প্রায় সব ক’টি। তবে গত দু’দফার মতো এ বারও বাদ পড়ল পিপিএফ, বহু দিন ধরে সেখানে সুদের হার ৭.১ শতাংশে স্থির। সুদ বদলায়নি সেভিংস ডিপোজ়িটেও। সেখানে মিলছে ৪%।
শুক্রবার গোটা দেশ তাকিয়ে ছিল স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ নিয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের দিকে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের শেষের এই দিনে অর্থ মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, এপ্রিল-জুনে ১২টি প্রকল্পের মধ্যে ১০টিতে সুদ ১০ থেকে ৭০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের বক্তব্য, এই দফায় বেশি সংখ্যক প্রকল্পে সুদ বেড়েছে বটে। তবে আগের ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল বেশি, ২০ থেকে ১১০ বেসিস পয়েন্ট। এমনকি যে পিপিএফ মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের কাছে সঞ্চয়ের জনপ্রিয় ঠিকানা, তা এ বারও ব্রাত্যই রয়েছে। পুরনো আয়কর ব্যবস্থায় এর লগ্নি ও সুদ, দু’টিতেই কর ছাড় মেলে।
কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সব থেকে বেশি সুদ বেড়েছে জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পে (এনএসসি)। ৭% থেকে বেড়ে হয়েছে ৭.৭%। সুকন্যা সমৃদ্ধিতে ৭.৬ শতাংশের বদলে মিলবে ৮%। প্রবীণদের নিশ্চিন্ত করেছে সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমের বর্ধিত সুদ। আগে মিলত ৮%। বেড়ে হয়েছে ৮.২%। সেখানে সর্বোচ্চ জমাও ১৫ লক্ষ থেকে বেড়ে ৩০ লক্ষ টাকা হয়েছে। পাঁচ বছরের মেয়াদি আামানত, রেকারিং ডিপোজ়িট, মাসিক আয়, কিসান বিকাশ পত্রেও পাওয়া যাবে আগের থেকে বেশি।
তবে পিপিএফে সুদ অপরিবর্তিত থাকায় অনেকে হতাশ। বিশেষত যাঁদের পেনশন নেই কিংবা যাঁরা কর্মস্থলে পিএফের সুবিধা পান না। বিশেষজ্ঞদের দাবি, অবসর জীবনের তহবিল গড়তে পিপিএফ প্রকল্পটির উপরে সবচেয়ে বেশি ভরসা করেন সাধারণ রোজগেরে বহু মানুষ। কারণ, একটু একটু করে দীর্ঘ দিন ধরে এই তহবিল গড়ে তোলা যায়। নির্দিষ্ট সময় ধরে চাইলেও এর থেকে টাকা তোলা যায় না। ফলে মেয়াদ শেষে বড় সঞ্চয় তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকে। সর্বোপরি সেই তহবিলের পুরো সুদ করমুক্ত (নতুন ও পুরনো দুই আয়কর ব্যবস্থাতেই)। পুরনো ব্যবস্থায় জমা টাকাতেও কর বসে না। একাংশের মতে, সম্প্রতি ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে পিএফের সুদের হার নামমাত্র বাড়িয়েছে কর্মী পিএফ সংস্থার কেন্দ্রীয় অছি পরিষদ। এ বার পিপিএফের তহবিলেও তেমন সুবিধা না মেলায় পেশাদারদের অনেকে বেশ ক্ষুব্ধ।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, গত বছর থেকে এ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা ভোট হয়ে চলেছে। তার উপর সামনের বছর দেশ সাধারণ নির্বাচনে যাচ্ছে। তার আগে টানা তিনটি ত্রৈমাসিকে কেন্দ্রের স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ বৃদ্ধি অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। বিশেষত ব্যাঙ্ক আমানতে যেখানে লাগাতার সুদ বাড়ছে। আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত বলেন, ‘‘পিপিএফে সুদের হার কেন বাড়ানো হল না বোঝা যাচ্ছে না। পিপিএফ এবং সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্প ছাড়া বাকি সমস্ত স্বল্প সঞ্চয়ের সুদে আমনাতকারীকে কর গুনতে হয়। সুকন্যা সমৃদ্ধি সকলে করতে পারেন না বলে পিপিএফ করমুক্ত রিটার্ন পেতে বড় ভরসা।’’
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, শ্যামলা গোপীনাথ কমিটির সুপারিশ ছিল সরকারের একই ধরনের মেয়াদি বন্ডের ইল্ড (ঋণপত্রের প্রকৃত আয়) বাড়লে, তার থেকে বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার ২৫-১০০ বেসিস পয়েন্ট বেশি হওয়া উচিত। এ বার সেই বন্ড ইল্ড ভাল রকম বেড়েছে। তাই স্বল্প সঞ্চয়েও সরকারকে সুদ বৃদ্ধির পথে হাঁটতে হচ্ছে।
পটনা আইআইটি-র অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকের বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার বাড়ানোয় এই সিদ্ধান্ত নিতে হল সরকারকে। বিশেষত ব্যাঙ্কে সুদ যেহেতু ঊর্ধ্বমুখী। তবে পিপিএফ এই সুবিধা না পাওয়ায় আমজনতার সঞ্চয়ের প্রবণতায় প্রভাব পড়বে। যদিও একই সঙ্গে তাঁর দাবি, দীর্ঘমেয়াদে পিপিএফে চড়া সুদ রাজকোষের পক্ষে ক্ষতিকর। পাশাপাশি সরকার মনে করছে, দীর্ঘমেয়াদে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে পারবে আরবিআই। তাই এখনই পিপিএফে সুদ বাড়ানো জরুরি নয়।