প্রতীকী ছবি।
টিভি খুললে ক্রিকেটের ফাঁকে, হাতের মুঠোয় ধরা মোবাইলে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে বিটকেনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রায় লেনদেনের বিজ্ঞাপন। মিলছে এক্সচেঞ্জের সন্ধান। যেখানে চাইলেই লেনদেন করা যাবে এই মুদ্রা। যা দেখে চিন্তা বাড়ছে বিভিন্ন মহলে। প্রশ্ন উঠছে, কোনও দেশে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং অধিকাংশ দেশের সরকারের স্বীকৃতি না-থাকা এই মুদ্রা কতটা সুরক্ষিত? এতে টাকা রেখে শেষে লোকসান হলেও অভিযোগ জানানোর সুযোগ নেই। অথচ, বিপুল মুনাফার হাতছানিতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাঙ্ক, শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড বা জমি-বাড়ি, সোনার মতো প্রথাগত লগ্নির বাইরেও নতুন এবং বিকল্প ক্ষেত্র হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে বিটকয়েন, ইথারিয়াম, ম্যাটিকের মতো ডিজিটাল মুদ্রা। এ নিয়ে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞেরাও।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ডিজিটাল মুদ্রাকে স্বীকৃতি না-দিয়ে ২০১৮ সালে ভারতে এর লেনদেনকে বেআইনি বলে ঘোষণা করেছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। যার বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় ওই নির্দেশকে অবৈধ বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট। ফলে অন্তত এ দেশে বিটকয়েনের মতো মুদ্রাকে এক কথায় বেআইনি বলে দেওয়া ঠিক নয়। শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দী বলছেন, ‘‘আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল মুদ্রা দিয়ে পণ্য কেনাবেচাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ভারতে এখনও সেই ব্যবস্থা চালু হয়নি। আলাদা করে শুধু মুদ্রা কেনা বা বিক্রি করা যায়। এতে ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।’’
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ডিজিটাল মুদ্রা লেনদেনে সরকারি হস্তক্ষেপ নেই এবং তার খরচ অনেক কম। তার উপরে এই মুদ্রা লেনদেন নিয়ে আয়কর সংক্রান্ত আইন না-থাকায় মুনাফা হলেও কর দিতে হয় না। তাই এতে লগ্নি টানতেই তার প্রচার বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে, বিটকয়েনের দাম অতি দ্রুত ওঠানামা করে। যেমন, ২০১৮ সালে প্রতিটি বিটকয়েনের দাম যেখানে ছিল ১১-১২ লক্ষ টাকা। সেখানেই ২০১৯ সালে নামে ২.৫ লক্ষে। এখন তা ঘুরছে ৪৩ লক্ষের আশেপাশে। অর্থাৎ, এতটা পতনের ঝুঁকি সব সময়েই থেকে যায়। যদিও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জগুলি।
অন্য অংশ অবশ্য বলছেন, সম্প্রতি সব ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করেছে চিন। অন্যান্য দেশেও তাতে লগ্নিতে রাশ টানা বা নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা আনার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। আবার আমেরিকায় নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে ছাড়া হয়েছে বিটকয়েন ইটিএফ। ভারতেও ডিজিটাল মুদ্রা আনার কাজ করছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। এ নিয়ে বিল আনার প্রস্তুতি শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রকও। অর্থাৎ, ক্রমশ ডিজিটাল মুদ্রাকেও প্রথাগত লেনদেনের আওতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে। ফলে আগামী দিনে তার ব্যবহার বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।