রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে স্বাধীনতা দিতে মালিকানা কমাতে চায় কেন্দ্র

ঋণ দেওয়া-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সরকারের নাক গলানো বন্ধ করতে চায় কেন্দ্র। সরকারি মালিকানাও কমিয়ে আনার পক্ষে তারা। সোমবার ব্যাঙ্ক কর্ণধারদের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভায় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, তাঁদের সরকার এটা নিশ্চিত করতে চায় যে, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে যেন কোনও সময়েই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ না-করে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩০
Share:

জেটলির সঙ্গে দুই কর্ণধার। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের ছন্দা কোছর (বাঁ দিকে) ও স্টেট ব্যাঙ্কের অরুন্ধতী ভট্টাচার্য। সোমবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।

ঋণ দেওয়া-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সরকারের নাক গলানো বন্ধ করতে চায় কেন্দ্র। সরকারি মালিকানাও কমিয়ে আনার পক্ষে তারা।

Advertisement

সোমবার ব্যাঙ্ক কর্ণধারদের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভায় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, তাঁদের সরকার এটা নিশ্চিত করতে চায় যে, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে যেন কোনও সময়েই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ না-করে। প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চেয়ারপার্সন নিয়োগে কেন্দ্রীয় সরকার আর মাথা গলাবে না বলে এর আগেই জানিয়েছে। এর জন্য বিচারপতি এ পি শাহের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটিও ইতিমধ্যেই গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাজ হবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে বার করা।

Advertisement

পাশাপাশি জেটলি জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কেন্দ্রীয় সরকারের অংশীদারি ৫২ শতাংশের মধ্যেই রাখতে চান তাঁরা। বর্তমানে এমন ব্যাঙ্কও রয়েছে যেখানে তাঁদের হাতে ৮১.৫% শেয়ার রয়েছে। বহু ব্যাঙ্কেই তা ৬০ শতাংশের বেশি।

তবে জেটলি ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত তা কতটা বাস্তবায়িত হবে, সে নিয়ে সংশয় রয়েছে বেশ কিছু মহলে। যেমন, জেটলি এক দিকে বলেছেন সমস্ত সিদ্ধান্তই ব্যবসায়িক ভিত্তিতে নেওয়া হবে। কিন্তু কৃষি ঋণ-সহ অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে (প্রায়রিটি সেক্টর) কমপক্ষে ৪০% ঋণ দেওয়ার যে-নিয়ম রয়েছে, তা কিন্তু বদলানো হচ্ছে না। অথচ প্রায়রিটি সেক্টরে কৃষি ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা নিয়ে সমস্যা রয়েছে।

এ ব্যাপারে ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, ‘‘দুটি বিষয়ের মধ্যে পরস্পর বিরোধিতা রয়েছে। এটা ঠিক, কৃষি এবং ক্ষুদ্র- মাঝারি শিল্পে (এসএমই) অনুৎপাদক সম্পদ বেশি। তবে প্রায়রিটি সেক্টরে যাতে অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ না-বাড়ে, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

ভাস্করবাবু বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘বন্ধনও গ্রামের কৃষক শ্রেণি এবং এসএমই-কেই বেশি ঋণ দেয়। কিন্তু বন্ধনের অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ অত্যন্ত কম। কারণ, তাদের কর্মীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঋণ দেওয়া এবং তা আদায়ের জন্য তৎপর। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে অসুবিধা হল, বর্তমান নিয়মে একই জায়গায় কোনও কর্মীকে বেশি দিন রাখা য়ায় না। তাই পুরো বিষয়টিই ভাল করে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’’

পাশাপাশি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কেন্দ্রীয় সরকারের অংশীদারি কমিয়ে আনাও সময়সাপেক্ষ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, অনেক ব্যাঙ্কেই তা ৬০ শতাংশের উপর। যেমন সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের ৮১.৫ শতাংশ শেয়ারই রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। তা ছাড়া মালিকানা কমিয়ে আনতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকা শেয়ার বাজারে বিক্রি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে শেয়ার বিক্রি অনেকটাই নির্ভর করবে বাজারের অবস্থার উপর। তাই অরুণ জেটলি বললেও চটজলদি ওই প্রস্তাব কার্যকর করায় সমস্যা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই।

ব্যাঙ্কের উপর থেকে রাজনৈতিক প্রভাব তুলে নেওয়ার ব্যাপারে জেটলির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি দেবব্রত সরকার। তিনি বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক মহল থেকে পরোক্ষ ভাবে ব্যাঙ্কের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। দেখতে হবে সেটাও যেন বন্ধ হয়। সমস্ত সিদ্ধান্ত স্বাধীন ভাবে নেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি।’’

জেটলির দুই প্রস্তাবকেই স্বাগত জানিয়েছেন শিল্প-কর্তারা। সিআইআই-এর প্রেসিডেন্ট সুমিত মজুমদার, ভারত চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট এন জি খেতানের মতেও, ব্যাঙ্কিং শিল্পকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। তাঁদের ইঙ্গিত, অনেক সময়েই শুধু ভোট টানার মতো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ঋণ মকুব ইত্যাদি সিদ্ধান্ত ব্যাঙ্কের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। খেতান বলেন, ‘‘কখনও কখনও ঋণ পরিশোধেও ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ সবের দায় চাপে ব্যাঙ্কের উপরেই।’’ খেতানের বক্তব্য, ব্যাঙ্ককে শুধু স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বললেই হবে না, কী ভাবে তা কার্যকর হচ্ছে, সেটাও সুনিশ্চিত করা জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চেয়ারপার্সন-সহ শীর্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনীতির ভূমিকা থাকে। তা দূর করতে হবে।’’

তবে কেন্দ্রের অংশীদারি কমলেও ব্যাঙ্কে সরকারি নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়া নিয়ে যে-পাল্টা দুশ্চিন্তা রয়েছে, তা ঠিক নয় বলেই মনে করেন খেতান এবং সুমিতবাবু। তাঁদের বক্তব্য, ৫২ শতাংশ অংশীদারি থাকার অর্থ কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ খর্ব হবে না। সিআইআই-এর প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘তা ছাড়া, ভারতে ব্যাঙ্কিং শিল্পের নিয়ম-কানুন বেশ মজবুত। সরকারের মালিকানা কমলেও সেই নিয়ম মেনেই ব্যাঙ্ক পরিচালিত হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement