ফাইল চিত্র।
বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে দেশ জুড়ে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি বিলম্বিত করার লক্ষ্য কেন্দ্রের নেই বলে সম্প্রতি দাবি করেছে শ্রম মন্ত্রক। কিন্তু সেই কমিটি তৈরির যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে আরএসএস অনুমোদিত ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ-সহ (বিএমএস) কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। তাদের দাবি, এখনও মজুরি সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য ২০১৮ সালে তৈরি কমিটির রিপোর্টই সামনে আনা হয়নি। তার উপরে এ বার ফের এই বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরির উদ্দেশ্য কী, তা বোঝা যাচ্ছে না।
বর্তমানে বিভিন্ন শিল্প-সহ আরও কিছু ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ন্যূনতম মজুরি রয়েছে। আবার একই শিল্পে বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন অঙ্কের মজুরিও দেখা যায়। এ বার সারা দেশে নতুন শ্রমবিধি চালুর যে লক্ষ্য কেন্দ্র নিয়েছে, তার আওতায় বিভিন্ন শিল্পের ন্যূনতম মজুরির পাশাপাশি ন্যাশনাল ফ্লোর মিনিমাম ওয়েজ স্থির করার কথা বলা হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রেই ন্যূনতম বেতন সেই জাতীয় স্তরের চেয়ে কম হতে পারবে না। ওই দুই মজুরি ঠিক করতে তিন বছরের জন্য ইনস্টিটিউট অব ইকনমিক গ্রোথের অধ্যাপক অজিত মিশ্রকে চেয়ারম্যান করে ছ’সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্র। তবে সেখানে কোনও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি।
বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক বিনয় সিংহ বলেন, ‘‘ন্যূনতম মজুরি ঠিক করতে ২০১৮ সালে শতপথী কমিটি গড়েছিল কেন্দ্র। তারা ২০১৯ সালে রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু সেটি আজ পর্যন্ত ন্যূনতম মজুরির কেন্দ্রীয় পরামর্শদাতা পর্ষদের কাছে পেশ করা হয়নি। তাতে কোনও ত্রুটি ছিল কি না, থাকলে কী, তা জানতে পারিনি। সম্প্রতি শ্রম মন্ত্রক বলেছে, যত শীঘ্র সম্ভব নতুন কমিটি রিপোর্ট জমা দেবে। কিন্তু ‘যত শীঘ্র সম্ভব’ বলতে তারা কী বোঝাতে চেয়েছে, তা বুঝতে পারছি না। ফলে সব মিলিয়ে ফের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।’’
নতুন বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রয়োজনই নেই বলে মত সিটু, ইউটিইউসি, ইনটাক এবং আইএনটিটিউসি-র মতো ইউনিয়নগুলির। সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন এবং ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘দেশের শ্রম সংক্রান্ত সর্বোচ্চ ত্রিপাক্ষিক সম্মেলন ইন্ডিয়ান লেবার কনফারেন্সে ২০১৫ সালেই সর্বসম্মত ভাবে ন্যূনতম মজুরি স্থির করতে ফর্মুলা ঠিক করা হয়। তা অনুসারে যে অঙ্ক দাঁড়াবে, তার সঙ্গে ২৫% যোগ করে ন্যূনতম বেতন ঠিক করতে হবে বলে এক মামলায় রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। পুরো বিষয়টি মাথায় রেখে সপ্তম বেতন কমিশনে সর্বনিম্ন বেতন ঠিক করা হয় ১৮,০০০ টাকা। আইএলসি-র ওই ফর্মুলা নতুন বেতন বিধিতেও গ্রহণ করা হয়েছে। তাই এখন দরকার সেই অনুযায়ী অঙ্ক কষে ন্যূনতম বেতন স্থির করা। কিন্তু তা না-করে একই বিষয়ে ফের কমিটি গঠনের যুক্তি বোঝা যাচ্ছে না।’’
কমিটিতে শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিকে কেন রাখা হয়নি, সেই প্রশ্নও তুলেছে সংগঠনগুলি। আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা না-বলে শ্রমিকদের বিষয়ে সব সিদ্ধান্তই একতরফা ভাবে নিচ্ছে কেন্দ্র। পুরো প্রক্রিয়াটিই অস্বচ্ছ।’’ ইনটাকের রাজ্য সভাপতি কামারুজ্জামান কামার বলেন, ‘‘আইএলসির সুপারিশ এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের থেকে ন্যূনতম মজুরি বেশি হয় কি না এবং কত দ্রুত তা ঘোষণা করা হয়, সেটাই দেখার।’’