জিডিপি মাপার ফিতে বদলানো থেকে শুরু করে বেকারত্বের হিসেব ধামাচাপা দিয়ে রাখা— মোদী সরকারের জমানায় তথ্য-পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। তথ্যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন ১০৮ জন অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানী। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন বিরোধীরা। এই সমস্ত অভিযোগের মুখে শেষ পর্যন্ত তথ্যের মান উন্নত করতে ২৮ সদস্যের স্থায়ী কমিটি তৈরি করল পরিসংখ্যান মন্ত্রক। যার নেতৃত্বে থাকবেন প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন। যিনি নিজেও এর আগে তথ্যের স্বচ্ছতা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
শনিবার প্রণববাবু বলেন, ‘‘কমিটি তৈরির বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। ৬ জানুয়ারি প্রথম বৈঠক হবে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ নিয়ে এখনই এর বেশি কিছু জানি না। তখনই বোঝা যাবে কমিটির কাজ কী হবে।’’ তিনি জানান, কমিটির বাকি সদস্য কারা, তা-ও তাঁর জানা নেই। দেখতে হবে প্রথম বৈঠকে কত জন সদস্য উপস্থিত থাকেন।
যে পরিসংখ্যান কেন্দ্রের মনমতো নয়, তা-ই বিভিন্ন মাপকাঠি দেখিয়ে হয় ধামাচাপা দেওয়া বা বদলানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ছিল অর্থনীতিবিদদের। মার্চে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন বলেছিলেন, ‘‘বৃদ্ধির নতুন পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি কোথায়, তা খুঁজে বের করা জরুরি। বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে আলাদা কমিটি তৈরি করা হোক, তারাই পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখুক। বিশ্বকে বোঝানো জরুরি যে আমরা তথ্যে কোনও কারচুপি করছি না।’’ ঘাটতির ঠিক অঙ্ক জানানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
একই ভাবে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বলেছিলেন, ভারতের পরিসংখ্যানে আরও স্বচ্ছতা জরুরি। যেখানে সারা দুনিয়া ভারতের দিকে তাকিয়ে, সেখানে দেশের বৃদ্ধির পরিসংখ্যান পরিষ্কার হওয়া উচিত। অর্থাৎ, সংখ্যায় জিডিপি বা শতাংশে বৃদ্ধির মাপ ঘোষণায় যেন আলো-আঁধারি না থাকে। ২০১১-১২ থেকে ২০১৬-১৭ সালে বৃদ্ধির গড় হার ৭ শতাংশের চেয়ে বাস্তবে ২.৫% কম ছিল, অভিযোগ প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনেরও।
তার পরে ৪৫ বছরে সর্বাধিক বেকারত্ব নিয়ে এনএসএসও-র রিপোর্ট মানলেও, নভেম্বরে আমজনতার ব্যয় সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেনি কেন্দ্র। দাবি ছিল, তথ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকাতেই এই সিদ্ধান্ত। অনেকের মতে, শেষ পর্যন্ত তাই এই কমিটি তৈরির সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।