প্রতীকী ছবি।
সারা বছর ব্যবসায় যত মন্দা যাক, উৎসবের মরসুমে বরাবর বিক্রি বাড়তে দেখেছে গাড়ি শিল্প। এমনকি গত বছর করোনার প্রথম হানা, দীর্ঘ দিনের লকডাউন, রুজি-রোজগার, উদ্বৃত্ত, সঞ্চয়— সব কিছুতে ধাক্কা লাগার পরেও সেই দস্তুর ভাঙেনি (তিন চাকার গাড়ি বাদে)। এ বছর ভাঙল। শুধু গত বারের থেকে নয়, কোভিডের আগের (২০১৯) থেকেও পাইকারি বাজারে গাড়ি বিক্রি কম হল এই অক্টোবরে। যাত্রিবাহী, দু’চাকা ও তিন চাকা— প্রতিটি ক্ষেত্রেই। এই আশঙ্কাজনক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে এই শিল্পের সংগঠন সিয়াম বলেছে, এমন অবস্থা হওয়ার প্রধান কারণ গাড়ি তৈরির উপাদানগুলির চড়া দাম এবং সেমিকনডাক্টরের মতো বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশ তৈরির অন্যতম পণ্যের ঘাটতি। রিপোর্ট বলছে, যাত্রিবাহী, দু’চাকা ও তিন চাকা মিলিয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরে দেশে জন্য ডিলারদের মোট প্রায় ২১ লক্ষ গাড়ি বিক্রি করেছিল সংস্থাগুলি। এ বারে তা প্রায় ১৮ লক্ষ।
পাইকারি বাজার মানে, ক্রেতাকে বিক্রির জন্য যেখানে সংস্থাগুলির থেকে গাড়ি কেনে ডিলাররা। তারা কম সংখ্যায় কিনলে ধরেই নেওয়া যায় বাজারে বিক্রি হচ্ছে কম। ফলে পাইকারি বাজারের বিক্রি স্বস্তি বা অস্বস্তি বাড়ায়। শুক্রবার সিয়ামের প্রকাশিত ব্যবসার খতিয়ানে দেখা গিয়েছে, গত মাসে উৎসবের মরসুম হওয়া সত্ত্বেও ডিলারদের কাছে গাড়ি বিক্রি হয়েছে কম। এমনকি তার সংখ্যা ২০১৯ সালের থেকেও নীচে। তবে শুধু বিক্রি নয়, অক্টোবরে গাড়ি তৈরিও ধাক্কা খেয়েছে সেমিকনডাক্টর চিপের অভাবে। সংশ্লিষ্ট মহলের আক্ষেপ, করোনা চাহিদায় কোপ বসিয়েছিল। পরে সেই চাহিদা কিছুটা বাড়লেও যন্ত্রাংশের সরবরাহ সঙ্কটে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। গাড়ি শিল্পের আর্থিক স্বাস্থ্যের পক্ষে যা বেশ বিপজ্জনক।
সিয়ামের ডিজি বিষ্ণু মাথুর জানান, ২০২০ সালের অক্টোবরের তুলনায় গত মাসে যাত্রী গাড়ির বিক্রি কমেছে প্রায় ২৭.১৫%। দু’চাকার প্রায় ২৫%। অথচ করোনার প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পরে প্রথমে ওই দু’ধরনের গাড়ির চাহিদাই বেড়েছিল। বিষ্ণুর কথায়, ‘‘চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ভাগে (যখন কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে ভারতে) সংস্থাগুলির বিক্রিতে যে ধাক্কা লেগেছিল, তা পুনরুদ্ধার করতে উৎসবের মরসুমের দিকেই তাকিয়ে ছিল সবাই। কিন্তু সেমিকনডাক্টরের অভাব এবং কাঁচামালের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি শিল্পকে বড় ধাক্কা দিয়েছে।’’
সিয়ামের পরিসংখ্যান বলেছে, অক্টোবরে গত বছরের তুলনায় তিন চাকার গাড়ির বিক্রি সামান্য বেড়েছে। কিন্তু ২০১৯ সালের অর্ধেকের চেয়েও এ বারের বিক্রি কম। বস্তুত, করোনার আগের বছর দেড়েক দেশে অর্থনীতির ঝিমুনির জন্য এমনিতেই গাড্ডায় পড়েছিল গাড়ি ব্যবসার চাকা। কিন্তু সেই সময়কার বিক্রির হিসেবও এখনও ডিঙোতে পারছে না সংস্থাগুলি।
বস্তুত, যন্ত্রাংশের জোগানের সঙ্কট কতটা তীব্র তা গাড়ির তৈরির পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। যেমন, ২০২০-র অক্টোবরে যাত্রিবাহী এবং দু’চাকার গাড়ি তৈরি হয়েছিল যথাক্রমে ৩.৪১ লক্ষ এবং ২৪ লক্ষের কিছু বেশি। গত মাসে ওই সংখ্যা যথাক্রমে কমে হয়েছে ২.৫৭ লক্ষ, ২২ লক্ষ। তিন চাকার ক্ষেত্রে সামান্য বেড়েছে। শিল্পের বক্তব্য, গাড়ি তৈরিই যদি কম হয়, বাজারে চাহিদা থাকলেও লাভ কী?