ধনতেরাসে লাভের আশায় গয়না ব্যবসায়ীরা। ফাইল চিত্র।
এ বার ধনতেরসে লাভের মুখ দেখা যাবে বলে আশায় বুক বাঁধছে গয়না শিল্প। বিশেষত বড় ব্যবসায়ীরা। তাঁদের ধারণা, শনিবারের বিকেল থেকে দোকানে ক্রেতাদের ঢল নামতে পারে। রবিবার ছুটির দিন হওয়াতেও অনেকে বাজারমুখো হতে পারেন। তবে ছোট ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ। তাঁদের আশঙ্কা, সাধারণ রোজগেরে ক্রেতাদের অনেকেই হাত গুটিয়ে থাকতে পারেন। কারণ, সাধ থাকলেও জিনিসের চড়া দামে বাড়তে থাকা সংসার খরচ সাধ্য কেড়েছে একাংশের। ফলে পাড়ার ছোট দোকানে ভিড় হওয়া কঠিন।
বড় গয়না ব্যবসায়ীদের মতে, তাঁদের ভরসা জোগাচ্ছে অনেকগুলি বিষয়। প্রথমত, সোনার দাম যেখানে উঠেছিল হালে তার থেকে কমেছে। দ্বিতীয়ত, বহু সংস্থা গয়না কিনতে ছাড় দিচ্ছেন। তৃতীয়ত, ধনতেরস ও দেওয়ালির কেনাকাটা একসঙ্গে চলছে। চতুর্থত, সামনেই বিয়ের মরসুম।
জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আশিস পেথে বলেন, ‘‘এখন কোভিডের সমস্যা প্রায় নেই। সোনার দামও কিছুটা কম। গয়না বিক্রি অতিমারির আগের জায়গায় ফিরতে পারে। আমরাও সেই মতো তৈরি হচ্ছি।’’ শ্যামসুন্দর জুয়েলার্সের ডিরেক্টর রূপক সাহার দাবি, গত দু’বছর যাঁরা কিছু কেনেননি, তাঁরা কাল-পরশু হয়তো দোকানে আসবেন। সেনকো গ্লোল্ডের কর্ণধার শুভঙ্কর সেনও বলছেন, ‘‘ধনতেরসের দিন ডেলিভারি নিতে গয়নার বরাত দিয়ে রেখেছেন অনেকেই।’’ কেনাকাটা বৃদ্ধির আভাস পাচ্ছেন উত্তর কলকাতায় গয়নার পাইকারি বিক্রেতা চিত্তরঞ্জন পাঁজাও। তিনি জানান, ‘‘বহু শো-রুমের মালিক পাইকারি কেনাকাটার অঙ্ক বাড়াচ্ছেন।’’
ধনতেরসে হিরের গয়নার চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, দাবি দ্য ডি বিয়ার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট অমিত প্রতিহারির। আর স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি সমর দে-র মতে, তাঁদের বড় ভরসা রুপো। সোনায় হাত ছোঁয়াতে না পেরে রুপোর গয়নার পাশাপাশি থালা, বাটি, গ্লাস বা কয়েনের চাহিদা বাড়ছে। যদিও হালে রুপোর দামও দ্রুত বেড়েছে। তবে তিনি মনে করেন, চড়া মূল্যবৃদ্ধির আবহে অনেকে ভবিষ্যতের কথা ভেবে পাকা সোনাও ঘরে তুলবেন। কারণ, ধনতেরসে অনেক কিছুতেই ছাড় থাকে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ধনতেরসে সাধারণত হাল্কা গয়না কেনেন ক্রেতারা। তবে এ বার যেহেতু বিয়ের বাজারও এর সঙ্গে মিশছে, তাই ভারি গয়না বিকোতে পারে বেশি। অঞ্জলি জুয়েলার্সের ডিরেক্টর অনর্ঘ উত্তীয় চৌধুরী বলছেন, ‘‘রুপো এবং মিশ্র ধাতু দিয়ে তৈরি পোষাকের সঙ্গে খাপ খায় এমন কস্টিউম জুয়েলারির চাহিদা বাড়ছে। ধনতেরসে তা ভাল বিকোবে মনে হচ্ছে।’’ আর এতেই চিন্তিত ছোট গয়না ব্যবসায়ীরা। বলছেন, সোনার বাজার কমাচ্ছে সেগুলি। তাঁদেরই এক জন কৌশিক পোদ্দারের দাবি, ‘‘বহু মানুষের হাতে টাকা নেই। গয়না কিনবেন কোত্থেকে? তা তেমন জরুরিও নয়। তা ছাড়া, সোনার দাম কমলেও অনেকেই আরও কমার অপেক্ষায়।’’