বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
বাংলায় শিল্পায়নের ভাবনার সঙ্গে বরাবর জড়িয়ে থাকবে বুদ্ধবাবুর নাম— প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রসঙ্গে এমনই মতের শরিক রাজ্যের শিল্পমহল। বামপন্থায় বিশ্বাসী হয়েও পুঁজি টানতে তাঁর আলাদা পথে হাঁটার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি শিল্পকর্তারা মনে করাচ্ছেন শিল্প-লগ্নির বাইরে সাহিত্যমনস্ক আড্ডাবাজ বাঙালি বুদ্ধবাবুকেও।
সেই জমানায় রাজ্যে লগ্নি শুরু করা অনাবাসী শিল্পপতি তথা ইউনিভার্সাল সাকসেস এন্টারপ্রাইজ়েস-এর কর্ণধার প্রসূন মুখোপাধ্যায় এ দিন সুদূর লন্ডন থেকে বলেন, ‘‘বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী হয়েও বুদ্ধবাবু বাংলার জন্য যা করেছিলেন, তা অসাধারণ। কার্যত তাঁরই অনুরোধে আমি রাজ্যে লগ্নি শুরু করি। ২০০৩-এর এক দুপুরে মহাকরণে তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে আমার পথ চলা শুরু।’’ তবে তাঁর সঙ্গে বৈঠক কিংবা আড্ডা যে শুধু শিল্প বিনিয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তা-ও বলছেন তিনি। প্রসূনের কথায়, ‘‘সিনেমা, রবীন্দ্রনাথ, কবিতা সবই থাকত আলোচনায়। একই সঙ্গে তিনি বলতেন বাংলার উন্নতির কথা। সেই লক্ষ্যেই আমায় বাঙালি হিসেবে রাজ্যে লগ্নি করতে কার্যত বাধ্য করান।’’ বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বেশ কিছু নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছিল হর্ষ নেওটিয়ার অম্বুজা নেওটিয়া গোষ্ঠীও। শোকপ্রকাশ করে হর্ষ বলেন, ‘‘আমি বুদ্ধবাবুকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনতাম। শুধু শিল্পের পুঁজি টানাই নয়, শিল্প-সংস্কৃতিতেও তাঁর সহজ যাতায়াত ছিল। তিনি রাজ্যে শিল্প স্থাপনের জন্য বহু পদক্ষেপ করেছেন, যার জন্য ইতিহাসে রয়ে যাবেন।’’ সিইএসসি-র কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েন্কার কথায়, ‘‘তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা করতাম। অত্যন্ত মানবিক ছিলেন। বাংলা একজন প্রথম সারির নেতাকে হারাল।’’
নিজের আমলে নিয়মিত বিভিন্ন বণিকসভার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন বুদ্ধদেব— বৃহস্পতিবার এ নিয়ে স্মৃতিচারণ করে মার্চেন্টস চেম্বারের সভাপতি নমিত বাজোরিয়ার বক্তব্য, ‘‘নিজে স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তা সফল হয়নি, সেটা বাস্তব। তবে রাজ্যে লগ্নি আনার ব্যাপারে দেশের মধ্যে অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিল তাঁর।’’ বাজোরিয়ার আরও বক্তব্য, রাজ্যে বৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে আনার ব্যাপারেও প্রধান মুখ ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। টিসিএস, উইপ্রো, ইনফোসিস, কগনিজেন্টের মতো প্রায় প্রথম সারির সংস্থাই বুদ্ধদেবের আমলেই রাজ্যে আসে। সর্বভারতীয় বণিকসভা সিআইআই-এর পশ্চিমবঙ্গ চ্যাপ্টারের সহ-সভাপতি দেবাশিস দত্তের দাবি, ‘‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁর আগের জমানার চেয়ে অনেকটাই আলাদা এবং উদার পথে হেঁটেছিলেন। বামপন্থী হয়েও তিনি প্রথাগত রাস্তা ধরেননি। সেটাই শিল্পমহল মনে রেখেছে।’’ শিল্পকর্তা সঞ্জয় বুধিয়াও তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানিয়েছেন, রাজ্যের উন্নয়নের জন্যই কাজ করে গিয়েছেন তিনি। ভারত চেম্বারের সভাপতি এন জি খেতান বলেন, ‘‘আমি বুদ্ধদেব বাবুকে স্মরণ করি, বিশেষত টাটার মতো বড় সংস্থাকে এখানে কারখানা গড়তে নিয়ে আসার জন্য। সাহসী সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা ছিলেন না।’’