মোবাইল ফোনের একচেটিয়া দাপটে এমনিতেই হাল খারাপ ল্যান্ডলাইন ব্যবসার। গোদের উপর বিষফোড়া সেই পরিষেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি। দু’য়ের জেরে দ্রুত কমছে বিএসএনএল ল্যান্ডলাইনের সংযোগ সংখ্যা। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ল্যান্ডলাইন থেকে রাতভর নিখরচায় ফোন করার মতো সুবিধা দিতে শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। এ বার হারানো জমি পুনরুদ্ধারের মরিয়া চেষ্টা হিসেবে ‘ক্লোজড্ ইউজার গ্রুপ’ (সিইউজি) পরিষেবায় মোবাইলের সঙ্গে ল্যান্ডলাইনকেও যুক্ত করার সুবিধা আনছে তারা। তা চালু করছে বিএসএনএলের পশ্চিমবঙ্গ সার্কেল। যদিও এ ধরনের বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ ল্যান্ডলাইন ব্যবসা বাঁচাতে কতটা সহায়ক হবে, সে প্রশ্ন তুলেছে শিল্পমহল।
যে-সব নম্বরে গ্রাহক (ব্যক্তি বা কর্পোরেট) বেশি ফোন করেন (বাড়ি, বন্ধু, অফিসের সহকর্মী ইত্যাদি), সেগুলি নিয়ে একটি গোষ্ঠী বা গ্রুপ তৈরি করতে পারেন তিনি। মোবাইল পরিষেবা সংস্থার কাছে তা নথিবদ্ধ থাকে। সিইউজি পরিষেবায় ওই সমস্ত নম্বরে মাসে একটি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে যত বার খুশি ফোন করতে পারেন গোষ্ঠীর সদস্যরা। আলাদা ভাবে প্রতি বারের ফোন কলের চার্জ আর সেখানে লাগে না। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি এই পরিষেবা মেলে বিএসএনএলের কাছেও। এত দিন এই সুবিধা শুধু মোবাইলের ক্ষেত্রে পাওয়া যেত। এ বার ওই গ্রুপে ল্যান্ডলাইন নম্বরও রাখতে পারবেন বিএসএনএল গ্রাহক। সিইউজি-র বাইরের কোনও নম্বরে ফোন করতে অবশ্য মাসুল গুনতে হবে সংশ্লিষ্ট হারে। যেমনটা এখন হয়।
বিএসএনএলের পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) অসীম কুমার সিন্হা জানান, তাঁরা রাজ্যের সেচ ও জলপথ পরিবহণ দফতরের কাছে এ রকম সিইউজি-র প্রস্তাব পেয়েছেন। বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। দফতরের ৫০০টি মোবাইল (প্রি-পেড) ও ৫০০টি ল্যান্ডলাইন ফোন সিইউজিতে যুক্ত হবে। তিনি বলেন, ‘‘আশা করি অক্টোবর থেকেই ওই ব্যবস্থা চালু করা যাবে।’’ সিইউজি-র মধ্যে ল্যান্ডলাইন যুক্ত করার এ ধরনের উদ্যোগ পূর্ব ভারতে এই প্রথম বলেও তাঁর দাবি।
মোবাইলের রমরমায় ল্যান্ডলাইনের কদর যে-ক্রমশ কমছে, টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাইয়ের পরিসংখ্যান থেকেই তা স্পষ্ট। ২০১০ সালের মার্চে যেখানে দেশে ৫৮.৪৩ কোটি মোবাইল গ্রাহক ছিলেন, সেখানে ২০১৪ সালের মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ৯০.৪৫ কোটি। কিন্তু ওই একই সময়ে ল্যান্ডলাইন গ্রাহক সংখ্যা ৩.৬৯ কোটি থেকে কমে হয়েছে ২.৮৫ কোটি।
শুধু আধুনিক জীবনে অভ্যস্ত শহরে নয়, গ্রামেও এই একই ছবি স্পষ্ট। ট্রাইয়ের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৩ সালের মার্চ মাসে গ্রামে বিএসএনএল ল্যান্ডলাইনের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২.০৪ কোটি। ২০১৪-এর মার্চে তা হয়েছে ১.৮৪ কোটি। অথচ বিএসএনএলের মোট ব্যবসার সিংহভাগ এখনও আসে ল্যান্ডলাইন থেকে। ফলে তার সংযোগ সংখ্যা এ ভাবে কমায় সমস্যা বাড়ছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির।
ল্যান্ডলাইনে গ্রাহক টানতে মে মাসে রাত ৯টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ল্যান্ডলাইনে নিখরচায় ফোনের সুযোগ চালু করেছে সংস্থাটি। কলকাতা-সহ সারা রাজ্যেই এর ফলে ওই সময়ে ফোন করা ও নতুন ল্যান্ডলাইন নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে বলে সংস্থার দাবি। তবে এ ধরনের বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ ল্যান্ডলাইনের জমি উদ্ধারে কতটা সহায়ক হবে তা নিয়ে প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট মহলেই।
সিইউজি পরিষেবায় ল্যান্ডলাইন যুক্ত হলে, তার বাজার ধরে রাখায় কিছুটা সুবিধা হবে বলে মানছে সংস্থা। কিন্তু অসীমবাবুর দাবি, সেই জন্য এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আগে সিইউজিতে মোবাইলের সঙ্গে ল্যান্ডলাইন যুক্ত করা সম্ভব ছিল না। আধুনিক প্রযুক্তির জন্য এখন তা সম্ভব। তাই নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা বাস্তবায়িত করতেই এই উদ্যোগ।’’