আয় তলানিতে ঠেকায় ঠিকা কর্মীদের বেতন কয়েক মাস ধরেই অনিয়মিত। স্থায়ী কর্মীদের বেতনেও টালবাহানা হয়েছে এক মাস। এ সবের পরে এখন খরচে লাগাম টানতে বিপুল ব্যয়ের তুলনায় নগণ্য আয়ের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ বন্ধ করার প্রস্তাব প্রায় পাকা বিএসএনএলে। পাশাপাশি মূলধনী খরচের আগে আগাম সায় নিতে হবে বলেও সার্কল বা শাখাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে সংস্থার কর্পোরেট অফিস।
বছর খানেক ধরে আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত টেলি সংস্থাটি। কখনও বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ায় এক্সচেঞ্জের লাইন কাটা পড়েছিল, তো কখনও বেতন-সঙ্কট। এই পরিস্থিতিতে খরচে রাশ টানতে সম্প্রতি বিভিন্ন সার্কলের সিজিএম-সহ পদস্থ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন ডিরেক্টর (অর্থ)-সহ কর্পোরেট অফিসের কর্তারা।
সূত্রের খবর, সেখানেই নগণ্য আয়ের এক্সচেঞ্জগুলি প্রয়োজনে বন্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ ধরনের এক্সচেঞ্জের বেশিরভাগই গ্রামীণ বা প্রত্যন্ত এলাকায়। সংস্থা সূত্রের খবর, তা বন্ধ হলে ও সেখানকার গ্রাহকদের নিকটবর্তী অন্য এক্সচেঞ্জের আওতায় কোনও ভাবেই স্থানান্তর করা সম্ভব না হলে, পরিষেবা বন্ধ করা হবে।
প্রস্তাব
• ব্যয়ের তুলনায় আয় খুব কম, এমন এক্সচেঞ্জ চিহ্নিত করা। কিছুতেই আয় না বাড়লে তা বন্ধ করা।
• বন্ধ হওয়া এক্সচেঞ্জের গ্রাহকদের লাইন কাছাকাছি থাকা বেশি আয়ের এক্সচেঞ্জের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া।
• কোন কোন টাওয়ারের সঙ্গে মোবাইল গ্রাহকের সংযোগ কম, তা চিহ্নিত করা। চেষ্টা সত্ত্বেও গ্রাহক না বাড়লে বন্ধ হবে টাওয়ারও।
• ঠিকা কর্মীদের কাজের দিনের সংখ্যা কমিয়ে সপ্তাহে ৫ দিন করা।
নির্দেশিকা
• কর্পোরেট অফিসের আগাম অনুমোদন নিতে হবে যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ কিনতে দরপত্র আহ্বানের আগে।
• তা লাগবে ‘সেরা’ দরপত্র বাছাইয়ের পরে যন্ত্রের চূড়ান্ত বরাত দেওয়ার আগেও।
• সদর দফতরের লিখিত সায় ছাড়া কাজ বা পরিষেবায় মূলধনী খরচ নয়।
• গাড়ির খরচে রাশ টানতে সিজিএম-সহ কিছু কর্তা ছাড়া বাকি সকলেরই বাহন অ্যাপ-ক্যাব। যেখানে তা নেই, সেখানেও অর্ধেক করতে হবে গাড়ির সংখ্যা।
• অ্যাপ-ট্যাক্সির ভরসায় কোনও কাজ না হলে, তার জন্য গাড়ি পেতেও লাগবে সদর দফতরের সবুজ সঙ্কেত।
সার্কলের ডিজিএম, জিএম থেকে সিজিএম পর্যন্ত বিভিন্ন অফিসারদের পদমর্যাদা অনুযায়ী বেশ কিছু টাকার কাজ করানোর ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু নতুন নির্দেশে সব ক্ষেত্রেই কর্পোরেট অফিসের আগাম অনুমোদন এখন বাধ্যতামূলক। গাড়ির খরচেও কাটছাঁট করতে বলেছে সংস্থাটির সদর দফতর।
বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি স্বপন চক্রবর্তীর দাবি, কম আয়ের এক্সচেঞ্জ বন্ধ করা, গাড়ির খরচ কমানোর মতো প্রস্তাব তাঁরাই আগে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘হয়তো একটি এক্সচেঞ্জের আয় ২০ হাজার টাকা। কিন্তু ব্যয় প্রায় চার লক্ষ। কেন্দ্র যখন ভর্তুকি দেয় না, তখন তা চালু রেখে কী লাভ? এই পদক্ষেপ আগেই করা উচিত ছিল।’’ তবে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের বিরোধিতা করে তাঁর দাবি, বেতন সংশোধন, ৪জি স্পেকট্রাম বরাদ্দের মতো দাবিদাওয়াগুলি এ বার পূরণ করুক কেন্দ্র।