ফাইল চিত্র।
মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় বুধবার ভারতীয় সময় গভীর রাতে এক লাফে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়াল আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ। বৃহস্পতিবার যার ধাক্কা এসে লাগল ভারত তথা বিশ্বের শেয়ার বাজারে। এ দিন সেনসেক্স ও নিফ্টি নেমেছে যথাক্রমে ১০৪৫.৬০ পয়েন্ট এবং ৩৩১.৫৫ পয়েন্ট। দিনের শেষে প্রথমটি থেমেছে ৫১,৪৯৫.৭৯ অঙ্কে এবং দ্বিতীয়টি ১৫,৩৬০.৬০ অঙ্কে। দুই সূচকই নেমেছে গত এক বছরের মধ্যে সব চেয়ে নীচে। এ নিয়ে টানা পাঁচ দিনের পতনে বিএসই-র লগ্নিকারীরা হারিয়েছেন ১৫.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা।
এমনিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মূল্যবৃদ্ধি, আকাশছোঁয়া তেলের দামের প্রভাব সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে অর্থনীতি। যা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে শেয়ার বাজারে। তার উপর ফেড সুদ বাড়াতে থাকায় ক্রমশ আকর্ষণ বাড়ছে বন্ডের। যার জন্য ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে লগ্নি আমেরিকার মতো উন্নত দেশের বন্ডে চলে যাচ্ছে। এ বার সেখানেই একলপ্তে এতটা সুদ বৃদ্ধি সেই গতি বাড়াবে বলেই ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের। বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দী বলেন, “চার দশকে সর্বাধিক মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পড়াতে সুদ বৃদ্ধির দাওয়াইকেই কাজে লাগাতে চাইছে ফেডারাল রিজার্ভ। মাত্র ক’মাসে তারা তা বাড়িয়ে ১.৭৫% করেছে। এ ছাড়াও স্পষ্ট জানিয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে সুদ বাড়িয়ে ৩.৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়াই তাদের লক্ষ্য। সেটা হলে ভারতের বাজার থেকে পুঁজি যাওয়ার গতি আরও বাড়বে।’’ এ দিনই বিদেশি লগ্নিকারীরা ৩২৫৭.৬৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। তবে ভারতীয় লগ্নিকারী সংস্থাগুলি কিনেছে ১৯২৯.১৪ কোটি টাকার শেয়ার।
একই আশঙ্কা প্রকাশ করে আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্তও বলেন, “১৯৯৪ সালের পরে সুদ একলপ্তে এতটা বাড়ায়নি ফেড। ফলে সে দেশে বন্ডের টাকা ঢালার জন্য বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতে শেয়ার বিক্রি করে তা ডলারে রূপান্তরিত করতে থাকলে এখানে ডলারের চাহিদা বাড়বে, ফলে আরও পড়তে পারে টাকা। তবে মন্দার কারণ আছে বলে মনে করি না।’’ এ দিন অবশ্য ডলারের সাপেক্ষে টাকার দর বেড়েছে। প্রতি ডলারের দাম ১২ পয়সা কমে হয়েছে ৭৮.১০ টাকা।
তার উপরে দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণ ১২,০০০ ছাড়িয়ে যাওয়াতেও অশনি সঙ্কেত দেখছেন অনেকে। তাঁদের মতে, এই ধারা বজায় থাকলে ফের কড়াকড়ি চাপতে পারে। যা শুধু আর্থিক কর্মকাণ্ডই স্তব্ধ করবে না, চাহিদাকেও রুখতে পারে। সেটা হলে আদতে ক্ষতি হবে অর্থনীতির।
লগ্নি পরিষেবা সংস্থা মোতিলাল অসওয়ালের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর গৌরব মণিহারও মনে করেন, “আগামী কিছু দিন বাজার বেয়ারদের দখলে থাকবে। সূচক পড়বে।’’ তবে তাঁর এবং অনির্বাণের মতে, “এখনও দেশের বাজারের মৌলিক উপাদানগুলি যথেষ্ট মজবুত। তাই যুদ্ধ, মূল্যবৃদ্ধি বা তেলের দামের মতো সমস্যাগুলির মধ্যে একটির হাল ফিরলেও সূচকের দৌড় দেখা যাবে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।