প্রতীকী ছবি
প্রধান দাবি বেতন বাড়ানো। সঙ্গে রয়েছে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ, পুরনো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনা, পেনশনের টাকা বাড়ানোর মতো আরও ১২টির তালিকা। সব মিলিয়ে নিজেদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ বার বড় মাপের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির কর্মী-অফিসারদের ইউনিয়ন, ইউনাইটেড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন্স (ইউএফবিইউ)। যাদের ছাতার তলায় রয়েছে ব্যাঙ্ক শিল্পের অফিসার এবং সাধারণ কর্মীদের ৯টি ইউনিয়ন। ওই কর্মসূচির আওতায় তিন দফায় ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা। প্রথম দফায় ৩১ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় দফায় ১১ থেকে ১৩ মার্চ। আর সব শেষে ১ এপ্রিল থেকে লাগাতার ব্যাঙ্ক ধর্মঘট।
৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি শুক্র ও শনিবার। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ওই শনিবারই বাজেট পেশ করবে কেন্দ্র। যে কারণে সে দিন লেনদেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের শেয়ার বাজারগুলি। কিন্তু মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে কাজকর্ম হবে না বলেই আশঙ্কা। ধাক্কা খেতে পারে এটিএম পরিষেবাও। ওই দফায় রবিবার জুড়ে গিয়ে ব্যাঙ্কের কাজ বন্ধ থাকবে টানা তিন দিন। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, মাসের একেবারে শুরুতে ব্যাঙ্কের কাজ করা না-গেলে ভোগান্তি হতে পারে সাধারণ মানুষের। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১ থেকে ১৩ মার্চ, বুধ থেকে শুক্র পড়ছে। তবে সে বারও ব্যাঙ্কিং পরিষেবা বন্ধ থাকবে শনি ও রবি নিয়ে টানা পাঁচ দিন।
ইউএফবিইউ-র আহ্বায়ক সিদ্ধার্থ খান বলেন, ‘‘আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী-অফিসারদের জন্য ২০% বেতন বৃদ্ধির দাবি করেছি। গতবার ১৫% হয়েছিল। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস ইউনিয়ন (আইবিএ) এ বার জানিয়ে দিয়েছে, সরকার তা ১২.২৫ শতাংশের বেশি বাড়াতে রাজি নয়। তার কারণ হিসেবে বলেছে, কেন্দ্রের আশঙ্কা চলতি অর্থবর্ষে সার্বিক ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির নিট মুনাফা কমবে।’’
ধর্মঘট কবে
• প্রথম দফায় ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি।
• দ্বিতীয় দফায় ১১ থেকে ১৩ মার্চ।
• প্রথম দু’দফায় বেতন সংশোধনের দাবি পূরণ না-হলে, তৃতীয় দফায় ১ এপ্রিল থেকে শুরু লাগাতার ধর্মঘট।
ধর্মঘটীদের দাবি
• বেতন বাড়ানো হোক ২০%।
• প্রতি শনি ও রবিবার ছুটি দিয়ে সপ্তাহে কাজের দিন করা হোক পাঁচটি। এখন মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনিবার ছুটি থাকে।
• নির্দিষ্ট করা হোক অফিসারেরা সপ্তাহে কত ঘণ্টা কাজ করবেন।
• ঠিকা কর্মী ও গ্রামাঞ্চল-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত ব্যাঙ্ক প্রতিনিধিদের (বিজনেস করেসপন্ডেট) সমান হারে বেতন দেওয়া হোক।
• নিউ পেনশন ব্যবস্থা (এনপিএস) বাতিল করে ফের চালু হোক সরকারের পুরনো পেনশন প্রকল্প।
• বাড়ানো হোক পেনশনের অঙ্ক।
• পেনশনভোগীর মৃত্যুর পরে পরিবারকে সেই টাকা পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।
অভিযোগ
• ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী-অফিসারদের বেতন বাড়ছে না।
• বেতন সংশোধন নিয়ে ২৭ মাসে ৩৩টি বৈঠক হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
• ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, সরকার ১২.২৫ শতাংশের বেশি বেতন বাড়াতে রাজি নয়।
• অন্যান্য দাবি-দাওয়া মানার ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না।
এআইবিইএ-র সভাপতি রাজেন নাগর এবং আইবকের রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘আইবিএ-র যুক্তি মানছি না। কর্মীরা কাজ করে ব্যাঙ্কের মোট মুনাফা বাড়াচ্ছেন। কিন্তু অনুৎপাদক সম্পদ খাতে আর্থিক সংস্থান করতে গিয়ে কমছে নিট মুনাফা। সে জন্য কর্মীরা দায়ী নন। তাই ওই অজুহাতে বেতন কম বাড়ানোর যুক্তি মানা যায় না।’’ রাজেনবাবুর হুঁশিয়ারি, ‘‘২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে বেতন সংশোধন আটকে। ২৭ মাসে আইবিএ-র সঙ্গে ৩৩টি বৈঠক হয়েছে। আমাদের দাবি না-মানা নিয়ে আইবিএ-র অযৌক্তিক মনোভাবের জন্য এ বার বড় মাপের ধমর্ঘটে যাচ্ছি। প্রথম দু’দফার ধর্মঘটের পরেও দাবি না-মানা হলে ১ এপ্রিল থেকে লাগাতার ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হব।’’