প্রতীকী ছবি।
এক দিকে রক্ষীহীন এটিএম। অন্য দিকে ব্যাঙ্ককর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্র, রাজ্য ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লাগাতার দরবার করেও সাড়া না-পাওয়া। করোনা সংক্রমণ ঘিরে এই জোড়া অভিযোগে সরব হল ব্যাঙ্কের কর্মী ইউনিয়নগুলি।
অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় অ্যাসোসিয়েশনের (এআইবিইএ) অভিযোগ, ব্যাঙ্কের রক্ষীহীন এটিএম থেকে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা প্রবল। কারণ, এক জন টাকা তুলে বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে মেশিন জীবাণুমুক্ত করার লোক থাকে না। অথচ হেলদোল নেই ব্যাঙ্ক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তাদের বক্তব্য, সংক্রমণ রুখতে এটিএমে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা অত্যন্ত জরুরি। যদিও একাংশের প্রশ্ন, যেখানে রক্ষী আছে, সেখানেও যে এই স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে, তার নিশ্চয়তা কোথায়? কর্মী ইউনিয়নগুলির তরফে রাজ্যের সমস্ত এটিএমে রক্ষী বহালের সঙ্গে প্রতিটিতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় কড়া নজরদারির দাবি জানানো হয়েছে।
অনেক ব্যাঙ্ক অবশ্য বলছে, এ জন্যই কনট্যাক্টলেস টাকা তোলার ব্যবস্থা আনার কথা ভাবা হচ্ছে। যেমন আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক বা স্টেট ব্যাঙ্কের আছে। এতে এটিএম মেশিনে কার্ড ঢোকাতে হয় না। পুরো প্রক্রিয়াটা মোবাইলেই হয়। মেশিনে ফোনে আসা ওটিপি লিখলেই টাকা মেলে।
এটিএম নিয়ে ক্ষোভের পাশাপাশি কর্মী-অফিসারদের সংগঠনগুলির দাবি, ব্যাঙ্ককর্মীরাও ভয়ে আছেন। তাদের হিসেব, করোনায় এ পর্যন্ত রাজ্যে প্রায় ৫০ জন কর্মী মারা গিয়েছেন। সংক্রমণের কারণে অনেক শাখা বন্ধ হয়েছে। এআইবিইএর সভাপতি রাজেন নাগরের অভিযোগ, সংক্রমণ রুখতে অঞ্চল ধরে ধরে লকডাউন করছে রাজ্য। অথচ ব্যাঙ্ককর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে সব পক্ষই উদাসীন। যাঁরা অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে সর্বক্ষণ ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজ করেন। তাঁর দাবি, এ নিয়ে তিন মাস ধরে সমস্ত ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ, কেন্দ্র ও রাজ্যের কাছে দরবার করছে। কিন্তু লাভ হয়নি। এই আর্জিতে এপ্রিল থেকে সব পক্ষকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে, জানান ব্যাঙ্ক অফিসারদের সংগঠন আইবকের রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় দাস।
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, ইতিমধ্যেই এনআই অ্যাক্টে ব্যাঙ্কে প্রতি শনিবার ছুটি দিয়েছে কর্নাটক। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে কাজের সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো হয়েছে। যাতে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কিছুই হয়নি। রাজেনবাবুর আক্ষেপ, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ-সহ যাঁরা বিপদকে উপেক্ষা করে কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে ব্যাঙ্ককর্মীও রয়েছেন। কিন্তু সরকারের তরফে প্রশংসাসূচক একটা শব্দও জোটেনি তাঁদের কপালে।’’ সঞ্জয়বাবুর আবার অভিযোগ, রেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের কর্মীদের আনতে যে ট্রেন চালাচ্ছে, তাতে ওঠার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। কিন্তু ব্যাঙ্ককর্মীদের চড়তে দেওয়ার অনুরোধ রাখেননি। অথচ হস্তক্ষেপ করে এই সমস্যার সমাধান করেছে মহারাষ্ট্র।
তোপ দেগে ইউনাইটেড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন্সের আহ্বায়ক সিদ্ধার্থ খান বলছেন, ‘‘বেশ কিছু ব্যাঙ্কের শাখায় এক জন করোনা পজিটিভ হওয়ার পরেও বাকিদের পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ১৪ দিনের কোয়রেন্টিনে না-পাঠিয়েই কাজে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। কোনও শাখায় তাড়াহুড়ো করে বিধি না-মেনে স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে।’’ তাঁদের দাবি, হু-এর নির্দেশ এ ভাবে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে কী করে? মানুষের স্বার্থে এই সমস্যায় হস্তক্ষেপ করুক রাজ্য। কড়া হোক পুরসভা।