দু’দিনেই হাজার পয়েন্টের বেশি ঘরে তুলল সেনসেক্স। বাজেটের পরে মঙ্গল ও বুধবারের লেনদেনেই সূচক ১২৪০.৯৮ পয়েন্ট বেড়ে গিয়েছে। আগের দিন ৭৭৭.৩৫ পয়েন্ট বাড়ার পরে বুধবার ফের সেনসেক্স বাড়ল ৪৬৩.৬৩ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক থিতু হল ২৪,২৪২.৯৮ অঙ্কে।
উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে টাকার দামও। আগের দিন ৫৭ পয়সা বাড়ার পরে এ দিন ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম বেড়েছে আরও ৩১ পয়সা। ফলে বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৭.৫৪ টাকা।
বাজেটের পরে আপাতত উল্কার গতিতে বাড়ছে শেয়ার বাজার। এর মূল কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
• ২০১৬-’১৭ সালে রাজকোষ ঘাটতি জাতীয় আয়ের ৩.৫ শতাংশেই বেঁধে রাখতে অরুণ জেটলির প্রতিশ্রুতি।
• ব্যাঙ্কের মূলধন সমস্যা কিছুটা লাঘব করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপ।
• বিশ্ব বাজারে চাঙ্গা ভাব।
বাজেটে আগামী আর্থিক বছরে রাজকোষ ঘাটতি ৩.৫ শতাংশে বেঁধে রাখার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কথা দেওয়ায় শেয়ার বাজারের পথে ফের ফিরে এসেছেন লগ্নিকারীরা। বিশেষ করে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। ওই সব সংস্থা গত দু’দিনেই ৪৩৫০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে। এ দিন তারা লগ্নি করেছে ১৪৩৭ কোটি টাকা। বাজার বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অধিকাংশেরই ধারণা, ভারতের বাজারের প্রতি আস্থা ফিরে পেয়েছে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি। রাজকোষ ঘাটতি ৩.৫ শতাংশে মধ্যে ধরে রাখার প্রতিশ্রুতির মধ্যে তারা ভারতের আর্থির অবস্থা ক্রমে আরও উন্নতির পথে এগোনোর গন্ধ পাচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই দিন বিশেষ করে ব্যাঙ্ক শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। আগের মতো বেশ কিছু খাতে ব্যাঙ্কগুলিকে এখন আর মূলধন আটকে রাখতে হবে না বলে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এতে ব্যাঙ্কগুলির মূলধনের সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ওই নির্দেশ জারি করার ফলে ব্যাঙ্কগুলির হাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকার মূলধন এসে গিয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর। যা তারা ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ওই নির্দেশ জারি করার পরেই এ দিন ব্যাঙ্কের শেয়ারের চাহিদা দ্রুত বেড়ে যায়। যার ফলে সেনসেক্সের আওতায় থাকা ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে সব থেকে বাড়ে স্টেট ব্যাঙ্কের শেয়ার দর (১১.৫০ শতাংশ)। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সূচকের বাইরে থাকা কর্পোরেশন ব্যাঙ্কের শেয়ার দর (১২.৫৬ শতাংশ)। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য ভাবে যে-সব ব্যাঙ্কের শেয়ারের দাম বেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব বরোদা, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক ইত্যাদি।
এ দিন অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও শেয়ার বাজারগুলি তেজী ছিল, বিশেষ করে এশিয়ার শেয়ার বাজার। ইউরোপের বাজারগুলিতেও এ দিন লেনদেন শুরু হওয়ার পরে সূচকের মুখ ছিল উপরের দিকে। যার ইতিবাচক প্রভাব ভারতের শেয়ার বাজারেও পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
তবে শেয়ার বাজারে খুব শীঘ্রই দামে একটা সংশোধন আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই। বাজার বিশেষজ্ঞ এবং ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক বলেন, ‘‘আমি মনে করি সূচকের এই রকেট গতিতে উত্থান শেয়ার বাজারের ‘অত্যুৎসাহী’ প্রতিক্রিয়া। তাই আমার ধারণা, খুব শীঘ্রই বাজারে একটা কারেকশন আসবে।’’
অবশ্য শুধু কৌশিক নন, বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, মুনাফার টাকা তুলে নেওয়ার জন্য শেয়ার বিক্রির একটা হিড়িক খুব শীঘ্রই দেখা যাবে লগ্নিকারীদের মধ্যে, যা সূচকের পারাকে কিছুটা নামিয়ে আনতে পারে। তবে তেমন কোনও অঘটন না-ঘটলে মাঝেমধ্যে কিছুটা পড়লেও বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় শেয়ার সূচকের গতি আপাতত উপরের দিকেই থাকবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।