জো বাইডেন। ফাইল চিত্র।
রাশিয়া থেকে ভারতের সস্তায় তেল কেনাকে যে আমেরিকা ভাল চোখে দেখছে না, সেই বার্তা আগেই দিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। এ বার এল মস্কোর বিকল্প খুঁজে দিতে সরাসরি সাহায্যের আশ্বাস। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা চায় না ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য যে দেশ নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে, তাদের থেকে জ্বালানি বা অন্যান্য পণ্য কেনা বাড়াক নয়াদিল্লি। তাই অন্য জায়গা থেকে আমদানির চেষ্টা করলে এ দেশের পাশে থাকতে তৈরি আমেরিকা।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, ‘‘আমাদের মনে হয় না ভারতের রাশিয়া থেকে জ্বালানি এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি বাড়ানো উচিত। যদিও এটা সংশ্লিষ্ট দেশের একেবারে নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’’ তার পরেই তিনি আমদানি বিকল্প জায়গা খুঁজতে সাহায্য করার বার্তা দেন। এটাও বলেন, ‘‘...ভরসাযোগ্য রফতানিকারী হিসেবে পাশে থাকবে আমেরিকাও। কারণ, ভারত অশোধিত তেলের মাত্র ১%-২% রাশিয়া থেকে কেনে।’’
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, ‘‘এ ব্যাপারে বিদেশমন্ত্রী বুধবার লোকসভায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেই সূত্র ধরেই বলতে চাই, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য সেই সম্পর্ককে স্থিতিশীল করা।’’ লোকসভায় রাশিয়ার নাম না নিলেও, তাদের আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তবে একই সঙ্গে জানিয়েছিলেন, রাশিয়া ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার রাষ্ট্র’। কূটনীতি এবং সংলাপের মাধ্যমেই সংঘাত মেটানোর সওয়াল করে তাঁর দাবি ছিল, ‘‘ভারতকে কোনও পক্ষ বেছে নিতে হলে, শান্তির পক্ষকেই বেছে নেওয়া হবে। অবিলম্বে হিংসা বন্ধের পক্ষপাতী আমরা।’’
মস্কো ভারতকে সস্তায় তেল দিচ্ছে। আর মস্কোর উপরে চাপানো আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করার ফল যে ভাল হবে না, তা বিভিন্ন মাধ্যম সূত্রে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে ওয়াশিংটন। সাকিও কূটনৈতিক স্তরে যোগাযোগ প্রসঙ্গে ফের মনে করিয়েছেন।
তবে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, এখনও পর্যন্ত ভারত কোনও ভাবেই সেই চাপের মুখে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে না। আইওসি-র মতো বিপিসিএল-ও এই টানাপড়েনের মধ্যেই ২০ লক্ষ ব্যারেল তেল কিনেছে।
বাগচীর যুক্তি, ‘‘রাশিয়া থেকে ইউরোপে জ্বালানি এবং সারের জোগান অব্যাহত। সুতরাং বিদেশমন্ত্রী যা বলেছেন, সেটাই বলতে চাই। বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং না দেওয়াই ভাল।’’ ভারতের উপরে আমেরিকার চাপ তৈরির কথাও উড়িয়ে দিতে চেয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। মুখপাত্রের কথায়, ‘‘বাণিজ্য নিয়ে আমাদের উপরে কোনও চাপ নেই। কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে ঠিকই। কিন্তু তা সামগ্রিক বাণিজ্যিক আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে নয়। অশোধিত তেলের বাণিজ্য তো চলছে। সামান্য কিছু সমস্যা থাকতেই পারে।’’ মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ‘স্থিতিশীল’ করার প্রসঙ্গটিকে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য তাদের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কে কিছু অস্থিরতা এসেছে। আপাতত সেটাকে স্থিতিশীল করাই লক্ষ্য।
এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার সঙ্গে বিদেশ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে আগামী ১১-১২ তারিখ। ওয়াশিংটন যাবেন যথাক্রমে জয়শঙ্কর এবং রাজনাথ সিংহ। সেখানে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে কথা হবেই। মুখোমুখি আলোচনায় যে চাপ আসবে, সেটা ভারত কতটা ধরে রাখতে পারবে, এখন সেটাই দেখার।