Share Market

Share Market: চাঙ্গা বাজারের চোখ ভারতের সুদের হারে

লাগাতার শেয়ার বিক্রি করার পরে জুলাইয়ে তারা লগ্নি করেছে প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার। শুধু গত শুক্রবারই ঢেলেছে ১০৪৬ কোটি।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২২ ০৮:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

বেশ কিছু দিন পরে বাজার ফের বুলদের দখলে। শুধু ভারতে নয়, বিশ্ব জুড়ে শেয়ার সূচক তেতে গিয়েছে আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ সুদের হার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো সত্ত্বেও। আশঙ্কা ছিল, এই দফায় ফেড রেট বাড়ানো হতে পারে ১০০ বেসিস পয়েন্ট। সেটা ধরে নিয়েই গত সপ্তাহের প্রথম দু’দিনে সেনসেক্স নেমে গিয়েছিল ৮০০ পয়েন্ট।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত আমেরিকায় সুদ অতটা বাড়েনি। সেই সঙ্গে ফেড রিজ়ার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল ইঙ্গিত দিয়েছেন আগামী দিনে সুদ বৃদ্ধির গতি শ্লথ হতে পারে। এটাও বলেছেন, তাঁদের দেশে কর্মহীনের সংখ্যা ৫০ বছরের মধ্যে এখন সব থেকে নিচু জায়গায়। ফলে এটা কোনও ভাবেই বলা যায় না যে, আমেরিকার অর্থনীতি মন্দার দিকে ঢলে পড়ছে। পাওয়েলের মন্তব্যে শক্তি ফিরে পায় সারা বিশ্বের বাজার। উদ্দীপনা দেখা যায় ভারতীয় বাজারেও। সপ্তাহের শেষ তিন দিনে সেনসেক্স ২৩০০ পয়েন্টের বেশি উঠে ফের ঢুকে পড়ে ৫৭ হাজারের ঘরে (৫৭,৫৭০)। ১৭ জুন সেনসেক্স নেমে গিয়েছিল ৫১,৩৬০ অঙ্কে। নিফ্‌টি-ও ফের পেরিয়ে গিয়েছে ১৭ হাজারের মাইলফলক (১৭,১৫৮)। এ বার লগ্নিকারীদের নজর ভারতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক কত সুদ বাড়ায় তার উপরে।

প্রায় ন’মাস বাদে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতের বাজারে ক্রেতা হিসেবে ফিরেছে। লাগাতার শেয়ার বিক্রি করার পরে জুলাইয়ে তারা লগ্নি করেছে প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার। শুধু গত শুক্রবারই ঢেলেছে ১০৪৬ কোটি। বাজারে বিদেশি লগ্নিগুলি ফেরায় সূচকও তার শক্তি ধরে রাখতে সফল হয়।

Advertisement

চাঙ্গা শেয়ার বাজার, বিশেষত নতুন করে বিদেশি লগ্নি শক্তি জোগায় ভারতীয় টাকাকেও। শুক্রবার ডলারের নিরিখে তার দাম অনেকখানি বাড়ে। এক ডলার ৫১ পয়সা কমে নেমে যায় ৭৯.২৫ টাকায়। যা মাত্র ক’দিন আগে ৮০ টাকা পার করে ফেলেছিল। শেয়ার বাজার এতটা তেতে ওঠায় বেশ খানিকটা হারানো জমি ফিরে পেয়েছে বেশির ভাগ শেয়ার নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্প। অর্থাৎ সব দিক থেকেই পরিস্থিতি এখন লগ্নিকারীদের পক্ষে।

এখন প্রশ্ন হল, চলতি সপ্তাহে বাজার তার শক্তি ধরে রাখতে পারবে কি না। শুক্রবারও আমেরিকার শেয়ার বাজার তেজী ছিল। আশা করা হচ্ছে, সোমবার এর প্রভাব ভারতীয় বাজারকে আরও উপরে তুলে দিতে পারে। তবে লগ্নিকারীদের চোখ এখন ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেই দিকে রয়েছে। সেটা জানা যাবে অবশ্য সপ্তাহ শেষে, আগামী শুক্রবার। রেপো রেট (যে সুদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক) ৩৫ বেসিস পয়েন্টের কম বাড়লে বাজার উল্লসিত হবে, নয়তো সাময়িক মুষড়ে পড়তে পারে।

অর্থনীতির দিক থেকেও পরিবেশ এখন অনেকটাই বাজারের অনুকূলে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থা প্রত্যাশার তুলনায় ভাল ফল প্রকাশ করছে। এপ্রিল-জুনে লগ্নিকারীদের পছন্দ হওয়ার মতো আয়-মুনাফার হিসাব দেখা গিয়েছে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের বেশিরভাগ ব্যাঙ্কের। কমেছে ঘাড়ে চেপে থাকা অনুৎপাদক সম্পদের অনুপাত। বেড়ে উঠেছে ঋণ বণ্টনের পরিমাণ। বিক্রি বেড়েছে গাড়ি শিল্পে। চাহিদা বাড়ছে ফ্ল্যাট ও বাড়ির। এই সব তথ্য ইঙ্গিত দেয় অর্থনীতির চাকা ঘুরছে। যে কারণে বাজারে ক্রেতা হিসেবে ফিরে আসছে বিদেশ লগ্নিকারী সংস্থাগুলি।

ঋণে ফের ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে গৃহঋণ সংস্থা এইচডিএফসি এবং তা করা হয়েছে শনিবার। সুদ সম্পর্কে শীর্ষ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত ঘোষণার মাত্র ক’দিন আগে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ বাড়ালে আশা করা যায় ঋণের পাশাপাশি জমাতেও কিছুটা সুদ বাড়াবে ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসিগুলি। জমায় সুদ বাড়লে উপকৃত হবেন সুদ নির্ভর সাধারণ মানুষ এবং প্রবীণ নাগরিকেরা। বাজার খানিকটা ভাল হয়ে ওঠায় হারানো জমির অনেকটাই ফিরে পেয়েছে একুইটি বা শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডগুলি। এর ফলে ওই ফান্ড এবং তা বেয়ে শেয়ার বাজারে সাধারণ মানুষের লগ্নি বহাল থাকবে বলে আশা করা যায়।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement