Interest Rates

জমায় বাড়ছে সুদ, বহু দিন বাদে ৮ শতাংশ পার

বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষের মতে, দেশে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি এখন ৬.৪৪%। বহু দিন পরে ব্যাঙ্কের সুদ তার থেকে বেশি। ফলে গ্রাহকেরা স্থায়ী আমানতে প্রকৃত আয়ের মুখ দেখছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ ০৫:৫৭
Share:

বেসরকারি ব্যাঙ্কেই সুদ পৌঁছেছে ৮-৮.৫ শতাংশে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ঘোরাফেরা করছে ৭-৮ শতাংশের আশেপাশে। প্রতীকী ছবি।

কিছু দিন আগেও ব্যাঙ্কে টাকা রেখে লাভ হচ্ছিল না। মূল্যবৃদ্ধির হার সুদকে ছাপিয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছিল সাধারণ রোজগেরে বহু মানুষ, বিশেষত প্রবীণ এবং সুদ নির্ভরদের। কারণ বর্ধিত সংসার খরচের ধাক্কায় স্থায়ী আমানত-সহ জমা প্রকল্পগুলির আয় কমছিল। মূল্যবৃদ্ধিকে রুখতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক গত মে মাস থেকে নাগাড়ে সুদ বাড়ানোয় পরিস্থিতি বদলেছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, আর্থিক কর্মকাণ্ড খোলায় ঋণের চাহিদা বাড়ছে। তাই পুঁজি জোগাড়ের দৌড়ে ব্যাঙ্কগুলি আমানতে সুদ বাড়িয়ে গ্রাহক টানছে। ফলে দীর্ঘ দিন পরে আমানতকারীরা লাভ দেখছেন। অনেক বেসরকারি ব্যাঙ্কেই সুদ পৌঁছেছে ৮-৮.৫ শতাংশে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ঘোরাফেরা করছে ৭-৮ শতাংশের আশেপাশে। যা এক সময়ে প্রায় ৫ শতাংশে তলিয়ে গিয়েছিল।

Advertisement

ব্যাঙ্ক কর্তাদের বার্তা, বেশি দিন এই সুযোগ থাকবে না। কারণ ঋণেও সুদ বাড়ছে। যা লগ্নির খরচ বাড়িয়ে চাহিদায় ধাক্কা দিচ্ছে। গতি রোধ করছে আর্থিক বৃদ্ধির। ফলে মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামালেই ঋণের খরচ কমিয়ে লগ্নি এবং চাহিদাকে ঠেলে তুলতে সুদ ছাঁটবে আরবিআই। একাংশের ধারণা, সেটা হতে পারে আগামী জুন থেকেই।

বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষের মতে, দেশে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি এখন ৬.৪৪%। বহু দিন পরে ব্যাঙ্কের সুদ তার থেকে বেশি। ফলে গ্রাহকেরা স্থায়ী আমানতে প্রকৃত আয়ের মুখ দেখছেন। বস্তুত, পণ্যের দামে লাগাম পরাতে মাত্র ১০ মাসে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট (তারা যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) ২৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬.৫০% করেছে। যা ঋণের পাশাপাশি আমানতের সুদকেও টেনে তুলেছে। যদিও তাঁর কথায়, যে হারে ঋণের চাহিদা বাড়ছে, সেই হারে আমানত বাড়ছে না। ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ঋণের চাহিদা বেড়েছে ১৫-১৬%। কিন্তু আমানত বৃদ্ধি ১০.৬%। মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনতে নগদ জমার অনুপাতও (বাধ্যতামূলক ভাবে আমানতের যে অংশ বিনা সুদে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে জমা রাখতে হয় ব্যাঙ্ককে) ৩% থেকে বাড়িয়ে ৩.৫% করেছে আরবিআই। ফলে আমানত সে ভাবে বাড়েনি। অথচ বাজারে নগদের জোগানে টান পড়েছে। তাই ঋণের চাহিদা মেটাতে তহবিল জোগাড়ের জন্য আমানত বৃদ্ধিতে উৎসাহ দিতে সুদ বাড়াতে বাধ্য হয়েছে ব্যাঙ্কগুলি।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক কর্তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের লক্ষ্যই হল সুদের হার কমানোর পরিবেশ তৈরি করা। যাতে আর্থিক বৃদ্ধির চাকায় গতি আসে। ব্যাঙ্ক অব বরোদার পূর্বাঞ্চলের কর্তা দেবেব্রত দাস বলেন, “আমার ধারণা, জুন থেকে ঋণ এবং আমানতে সুদের হার কমতে শুরু করবে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে মূল্যবৃদ্ধি এবং এ ব্যাপারে আরবিআইয়ের দৃষ্টিভঙ্গির উপর। সেই অনুসারে তারা সুদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’’ ব্যাঙ্ক কর্তাদের অনেকের ধারণা, মূলত চড়া সুদের কারণে অমেরিকার দুই ব্যাঙ্ক (সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক এবং সিগনেচার ব্যাঙ্ক) দেউলিয়া হওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। সুদ বাড়ায় ঋণগ্রহীতাদের বড় অংশ যে কিস্তির টাকা না মেটাতে পারার জায়গায় চলে যাচ্ছেন, সেটাও ভাবনায় রয়েছে। ফলে মানুষকে আমানতে সুদ বৃদ্ধির সুযোগ নিতে হবে দ্রুত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement