তাঁরা কাজ করেন, কিন্তু বিনিময়ে পারিশ্রমিক পান না। কারণ শ্রমের ‘বাজারে’ নেই তাঁরা।
বিশ্বব্যাঙ্কের সমীক্ষা বলছে, কলেজের ডিগ্রি রয়েছে, এমন ৬৫% ভারতীয় মেয়েই অর্থকরী কাজের দুনিয়ায় অনুপস্থিত। মাধ্যমিকের চেয়ে বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে, এমন মেয়েদের মাত্র ৩৪% রয়েছেন কর্মজগতে, এমনকী তাঁরা কাজ খুঁজছেনও না। আর মেয়েদের বেকার থাকার এই প্রবণতা দমিয়ে রাখছে আর্থিক বৃদ্ধিকেও, বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে দারিদ্র কমানোর পথে।
ভারতের উন্নয়ন নিয়ে ২০১৭-র মে মাসে বিশ্বব্যাঙ্কের সমীক্ষা ইন্ডিয়া ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অর্থনীতির এই ছবিই তুলে ধরে উদ্বেগ জানিয়েছে। পাশাপাশি মেয়েদের জন্য নিরাপদ ও ভাল বেতনের কাজের সুযোগ বাড়ানোর দাওয়াই বাতলেছে। যার জেরে পুরো ১০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়তে পারে বৃদ্ধিও। শুধু তাই নয়, ভারতে বিশ্বব্যাঙ্কের কান্ট্রি ডিরেক্টর জুনেদ আহমেদ বলেছেন, বৃদ্ধি ছুঁতে পারে ১০%। অথচ, কাজে মেয়েদের যোগ দেওয়া নিয়ে যে ১৩১টি দেশ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে, সেগুলির মধ্যে ভারতের স্থান ১২০। আরও উদ্বেগের বিষয় হল, ২০০৫ থেকে নামছে তাদের কাজে আসার হার।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিভাগ্য ফেরাতে ভরসা নিম্নচাপই
ভারতের বৃদ্ধির পথে আর যে-সব কাঁটা চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাঙ্ক, তার মধ্যে মূলত রয়েছে, লগ্নি ঢিমেতালে বাড়া, যার জন্য কিছুটা দায়ী করা হয়েছে ব্যাঙ্কিং শিল্পের অনাদায়ী ঋণের বোঝাকে। তবে ভারতে বৃদ্ধির হার বিশ্বে দ্রুততম। তার আর্থিক ভিতও শক্তিশালী। তার উপর পণ্য-পরিষেবা কর জিএসটি সময় মতো চালু হলে কর ব্যবস্থার দক্ষতা ও রাজস্ব, দুই-ই বাড়বে বলে ইঙ্গিত মিলেছে সমীক্ষায়। নোট বাতিল দরিদ্র পরিবারগুলিতে ছাপ ফেলেছিল। তবে দীর্ঘ মেয়াদে তা অর্থনীতিকে নিয়মে বাঁধার পথ করে দেবে, আশা সমীক্ষায়।
অর্থনীতির এই উজ্জ্বল ছবির পাশাপাশি মেয়েদের অর্থকরী কাজে পিছিয়ে থাকা নিয়ে পরিসংখ্যান দাখিল করেছে বিশ্বব্যাঙ্ক। ভারতে ২০০৫-২০১২ সালের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মাত্র ০.৯ শতাংশের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। নিয়মিত বেতন মেলে, এমন কাজের বেশির ভাগই পেয়েছেন পুরুষরা। বাংলাদেশে শিল্পে মোট শ্রমিকের ৩৩% মহিলা। ভারতে তা ১৭%। স্নাতকদের মধ্যে দেশে ৬৫% বেকার। বাংলাদেশে যা ৪১%, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিলে ২৫%। বিশ্বব্যাঙ্কের দাবি, বাংলাদেশ বা ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে এই ফারাক অর্ধেকও কমাৈনো গেলে বৃদ্ধি ১০০ বেসিস পয়েন্ট ওঠা সম্ভব।
এখনও বাধা
• ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সের মাত্র ২৭ শতাংশ মেয়ে কাজ করছেন বা চাকরি খুঁজছেন
• সক্রিয় ভাবে কাজ করার বয়সে (২৬-৪৫) প্রতি পাঁচ জন মহিলার মধ্যে তিন জনই বেকার। তাঁরা অর্থকরী কাজের সঙ্গে যুক্ত নন, যার মানে তাঁরা কৃষি, ব্যবসা বা চাকরি, কোনও ক্ষেত্রেই নেই
• মেয়েদের কাজে এগিয়ে আসার দিক থেকে ১৩১টি দেশের মধ্যে ভারত ১২০ তম স্থানে
• স্নাতক মহিলাদের মধ্যে ভারতে ৬৫% বেকার, বাংলাদেশে যা ৪১%, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিলে ২৫%
সুবিধা যেখানে
• ভারতের আর্থিক ভিত শক্তিশালী
• পণ্য-পরিষেবা কর সময় মতোই চালু হওয়ার পথে
• চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৭.২% ছোঁয়ার আশা, ২০১৯-’২০ সালের মধ্যে ৭.৭%