প্রতীকী ছবি।
তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যে লগ্নি টানার বার্তা দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। শিল্পায়নের গতি বাড়াতে এবং লগ্নি সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা মেটাতে শিল্পোন্নয়ন পর্ষদও (ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোমোশন বোর্ড) গড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর সেই পর্ষদের প্রথম বৈঠক হতে চলেছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে বৈঠকের জন্য প্রস্তাবপত্র তৈরি করে ফেলবে শিল্প দফতর। তার ভিত্তিতে বৈঠকে পৌরহিত্য করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোমোশন বোর্ডের চেয়ারপার্সন। এ দিকে, বৃহস্পতিবার নবান্নে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, রাজ্যে ঢালাই শিল্পে (ফাউন্ড্রি) আগামী পাঁচ বছরে ২০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা। কয়েক হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগও রয়েছে। ঢালাই শিল্পের দাবি, কাজ পাবেন প্রায় ৩৫,০০০ জন।
এ দিন পার্থবাবু বলেন, ‘‘বিগত ১০ বছরে রাজ্যে শিল্পের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পরিকাঠামো-সহ দক্ষ শ্রমিক রয়েছে রাজ্যে।’’ তার আগে সকালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফাউন্ড্রিমেনের (আইআইএফ) সম্মেলনের উদ্বোধনে এসেও তিনি জানান, রাজ্যে ঢালাই শিল্পের প্রসারের প্রচুর সম্ভাবনা। লগ্নিকারীদের সেই সুযোগ গ্রহণ করা উচিত।
পানাগড় শিল্পতালুকে দাঁড়িয়ে বুধবারই প্রতিটি লগ্নিতে শিল্পের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি সূত্রের দাবি, পৃথক বোর্ড গঠনের উদ্দেশ্য শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি দফতরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো। সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরের উপস্থিতিতে আলোচনা করে জট কাটানোর চেষ্টা হবে। এতে যেমন সময় কম লাগবে, তেমনই মুখ্যমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থাকায় সিদ্ধান্ত নিতেও সুবিধা হবে সরকারের। ফলে বিনিয়োগ সম্ভাবনা তৈরি হলে তাকে বাস্তবায়িত করতে লাল ফিতের ফাঁসে আটকাতে হবে না বিনিয়োগকারীকে।
অন্য দিকে, বৃহস্পতিবারই রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইথানল এবং ডেটা-নীতি তৈরির প্রস্তাবে অনুমোদন মিলেছে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের আবেদনকারীদের অনেকেই বিদ্যুৎ, জল, ছাড় ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে জানতে চায়। তাই এই নীতি তৈরিতে জোর দিচ্ছে নবান্ন। শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘‘অনেকগুলি প্রস্তাব মউ-স্তরে রয়েছে। কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা। কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে। দ্রুত গাইডলাইন (রূপরেখা) তৈরি হবে।’’
রাজ্যের শিল্প সম্মেলনে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে তৃণমূল সরকারের দাবি সম্পর্কে সম্প্রতি তথ্য জানতে চেয়েছেন রাজ্যপাল। সে ব্যাপারে এ দিন পার্থ বলেন, ‘‘কেন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করতে বলুন, তাদের বিনিয়োগ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা রাজ্যে ৪০% বেকারত্ব কমিয়েছি। ৪৫ বছরে কেন্দ্র বেকারত্ব শীর্ষে নিয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করছে। শিল্পের নামে লুঠতরাজ চলছে।’’
এ দিন ঢালাই শিল্পের অনুষ্ঠানে গিয়ে পার্থবাবু জানান, ভারতে ১.১০ কোটি টন ঢালাই পণ্য উৎপন্ন হয়। অথচ চিনে হয় প্রায় ৫ কোটি টন। রাজ্যে ঢালাই পার্ক-সহ ওই শিল্পের পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই তৈরি রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ঢালাই সংস্থাগুলির হাতে এই মুহূর্তে প্রচুর রফতানির বরাত রয়েছে বলে জানান আইআইএফের সভাপতি বিজয় বেরিওয়াল। কিন্তু তাঁর দাবি, জাহাজে পণ্য পাঠানোর সমস্যার জন্য ওই সব বরাত কার্যকর করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কন্টেনারের অভাবই এর প্রধান কারণ। আর সেই অভাবের অন্যতম কারণ চিন থেকে আমদানি কমে যাওয়া।