বাস্তুশাস্ত্র নিয়ে আলোচনায় জ্যোতিষশাস্ত্রবিদ ডাঃ সোহিনী শাস্ত্রী
স্বপ্নের বাড়ি গড়ার ইচ্ছে সকলের থাকে। সেই সপ্নের বাড়ি তৈরির সময় সেটাকে বিশেষ ধরনের শক্তিতে সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে। বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, প্রতিটা বাড়িতে কিছু পরিমাণে মহাজাগতিক শক্তি অবস্থান করে, তা শুভ বা অশুভ দুই-ই হতে পারে। এই শক্তিগুলো নানা রকম ভাবে সেই বাড়ির বাসিন্দাদের জীবনকে প্রভাবিত করে। তাই বাস্তু এবং ব্যক্তির বাসস্থানের মধ্যে যোগসূত্র বোঝা অপরিহার্য। সঠিক বাস্তুর ইতিবাচক কম্পন বাড়ির নেতিবাচক কম্পনগুলোকে দূর করে।
তা হলে বাস্তুশাস্ত্র কী? এটা কীভাবে তার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করে?
এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট জ্যোতিষশাস্ত্রবিদ ডাঃ সোহিনী শাস্ত্রীর থেকে।
বাস্তুশাস্ত্র হল একটা প্রাচীন শব্দ যা আক্ষরিক অর্থে “স্থাপত্য বিজ্ঞান” বোঝায়। এটা নকশা, বিন্যাস, পরিমাপ, স্থল প্রস্তুতি এবং স্থানিক জ্যামিতির উপাদানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা পরবর্তীকালে বাসিন্দাদের শান্তি, মঙ্গল এবং সমৃদ্ধির প্রচারের জন্য গৃহ নির্মাণের সময় প্রয়োগ করা হয়।
প্রকৃতিতে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য জল, পৃথিবী, বায়ু, আগুন এবং আকাশের মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া থাকে, যা এই পৃথিবীতে বসবাসকারী মানবজাতি ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই উপাদানগুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়াকেই একরকম বাস্তু বলা হয়।
বাস্তুশাস্ত্রের উৎপত্তি:
ভারতে বৈদিক যুগে বাস্তুশাস্ত্রের উদ্ভব ঘটে। বাস্তু শিল্পের উৎপত্তি অথর্ববেদের একটা অংশ -স্থপত্য বেদ থেকে, যা ব্যক্তি এবং তার গৃহের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে।
বাস্তুশাস্ত্র জীবনযাপন, নকশা, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্মাণ এবং ইতিবাচক শক্তিকে উদ্দীপিত করার শিল্প শেখানোর জন্য উদ্ভূত হয়। স্থপত্য বেদ তত্ত্বের বাস্তুগত প্রয়োগই হল “স্থাপত্য বিজ্ঞান”।
বাস্তুশাস্ত্রের পাঁচ উপাদান:
বাস্তুশাস্ত্র পাঁচটি অপরিহার্য উপাদান— পৃথ্বী (পৃথিবী), অগ্নি (আগুন), তেজ (আলো), বায়ু (বায়ু) এবং আকাশ (ইথার), যা পঞ্চভূত নামে পরিচিত। পৃথিবী এবং মানবদেহ সহ সমগ্র মহাবিশ্বকে এই পাঁচটি উপাদানে তৈরি বলে মনে করা হয় যা মহাজাগতিক শক্তি এবং শক্তির রূপগুলোকে প্রভাবিত করে।
বাস্তু পুরুষ মণ্ডলের মতে, মহাবিশ্ব উপকারী শক্তিতে পূর্ণ এবং এই সমস্ত উপাদানগুলি আদর্শ দিকনির্দেশের সঙ্গে মিলিত হয়ে একটা ভারসাম্যপূর্ণ এবং সুরেলা জীবনযাপনের পরিবেশ তৈরি করে।
বাস্তু শাস্ত্রের দিক নির্দেশনা:
একটা বাড়ির স্থিতি বোধ কেমন হবে তা জানা যায় সেই গৃহের নকশা থেকে। এই বাস্তু নকশাই বাড়ির ইতিবাচক শক্তিকে বজায় রাখে এবং নেতিবাচকতাকে বাতিল করে। তবেই সেই গৃহের অধিবাসীদের সম্পূর্ণ সাফল্য, সম্প্রীতি, প্রশান্তি এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।
গৃহের জন্য বাস্তু নীতি:
আধুনিক যুগের বাস্তুশাস্ত্র কিন্তু একেবারেই প্রাচীন যুগে প্রচলিত বাস্তুশাস্ত্রের অনুরূপ। বর্তমান সময়ের প্রয়োজন অনুসারে প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতির পরিবর্তন করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও, বাস্তু-সম্মত গৃহগুলির কেন্দ্রীয় ধারণা বৈদিক কাহিনী থেকেই এসেছে। বাস্তুর দুটো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কাঠামো এবং দিকনির্দেশের আকৃতি।
গৃহের জন্য বাস্তু হল সঠিক অভিযোজন এবং স্থান নির্ধারণের সমষ্টি ক্রিয়াকলাপের জন্য যা মূল দিকনির্দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত (উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম) ।
একটা বিল্ডিং এবং এর নকশা হল বাস্তুশাস্ত্র স্থাপত্যের মূল বিষয়। একটা গৃহের বাইরের অংশ ইতিবাচক স্পন্দনগুলিকে গ্রহন করতে সাহায্য করে এবং কোনও আগত নেতিবাচক শক্তিকে প্রতিরোধ করতে পারে।
বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, বাড়ির যে কোনও দিক—পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর বা দক্ষিণকে ভাল বলে মনে করা হয়, যদি তারা কিছু নীতি মেনে চলে। বাস্তু অনুযায়ী, ৩২টা দরজা বা পদ রয়েছে যার মধ্যে ৯টা (মুখা, ভল্লাট, সোম, জয়ন্ত, ইন্দ্র, বিথথ, গৃহরক্ষিতা, সুগ্রীব, পুষ্পদন্ত) গৃহ প্রবেশের জন্য শুভ বলে মনে করা হয়।
মানবজীবনে বাস্তুর গুরুত্ব:
বিশ্বের প্রথম পণ্ডিত স্থপতি বিশ্বকর্মার মতে, ধর্মগ্রন্থ অনুসারে নির্মিত একটা ভবন বিশ্বকে সম্পূর্ণ সুখ, ধর্ম, অর্থ, কর্ম এবং মোক্ষ দেয়। বাস্তুশিল্প শাস্ত্রের জ্ঞান মৃত্যুকেও জয় করে পৃথিবীতে আনন্দের সৃষ্টি করে, তাই বাস্তুশিল্প জ্ঞানকে ব্যাতী রেখে জীবন অতিবাহিত করা গুরুত্বহীন কারণ পৃথিবী এবং স্থাপত্য প্রায় সমার্থক।
বাস্তু একটা অতি প্রাচীন বিজ্ঞান। আমাদের চারপাশের মহাবিশ্বে বিরাজমান অশুভ শক্তি থেকে আমাদের রক্ষা করার জন্য আমাদের ঋষিরা এই বিজ্ঞানের বিকাশ করেছিলেন। বাস্তু স্থাপত্য বেদ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা অথর্ব বেদের একটা অংশ। এই সৃষ্টির পাশাপাশি, মানবদেহও পৃথিবী, জল, আগুন, বায়ু এবং আকাশ দ্বারা গঠিত এবং বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, এই উপাদানগুলি জীবন ও জগতকে প্রভাবিত করার প্রধান কারণ। ভবন নির্মাণের প্লট ও এর আশেপাশের স্থানের গুরুত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আশেপাশের জিনিস দেখেই স্থপতিরা প্লটের শুভ ও অশুভ অবস্থা অনুমান করেন। প্রতিটা মানুষেরই কামনা থাকে যে তার ঘর সুন্দর ও মনোরম হোক, সেখানে ইতিবাচক শক্তি বাস করুক এবং যেখানে বাসিন্দাদের জীবন সুখী হোক। এর জন্য বাড়ি অবশ্যই বাস্তু নীতি মেনে তৈরি করতে হবে। এতে কোনও বাস্তু ত্রুটি থাকলে তা বাস্তু অনুযায়ী সংশোধন করতে হবে। বাড়ি বা জমির দিক দিয়ে ত্রুটি থাকলে বাড়ি তৈরিতে যতই খরচ করা হোক না কেন, তাতে বসবাসকারী মানুষের জীবন সুখের হয় না।
বাস্তুর প্রভাব চিরস্থায়ী, কারণ এটা চিরন্তন, এটা মহাবিশ্বের গ্রহ প্রভৃতির চৌম্বকীয় শক্তির মৌলিক নীতির উপর নির্ভরশীল। এটা সমগ্র বিশ্বে প্রচলিতঅ এর নিয়মগুলিও চিরন্তন, নীতি-ভিত্তিক ও সর্বজনীন। যৌক্তিকতা, ব্যবহারযোগ্যতা, স্থায়ীত্ব, নীতি এবং লাভজনকতা হল বাস্তুর স্থায়ী গুণাবলী। যে কোনও বিজ্ঞানের সমস্ত অপরিহার্য গুণ এতে বিদ্যমান তাই বিনা দ্বিধায় বাস্তুকে বাস্তু বিজ্ঞান বলা যায়।
একজন মানুষ যেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বদা সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে, তেমন ভাবেই প্রতিটা মানুষই বাস্তুশাস্ত্রের নীতি অনুযায়ী একটা বাড়ি নির্মাণ করে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে চায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে যেমন একজন ডাক্তার সঠিক ওষুধ ও অপারেশন করে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগীকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচান, ঠিক তেমন ভাবেই বাস্তুশাস্ত্রের নীতি অনুযায়ী, আগে তৈরি বাড়িগুলো মেরামত করে রোগ, অশান্তি, মানসিক চাপ দূর করে মানব জীবনে স্বাস্থ্য, শান্তি, এবং সমৃদ্ধি অর্জন করতে সাহায্য করে।
বাড়ির বাস্তু এতে বসবাসকারী সকল সদস্যকেই প্রভাবিত করে, সে বাড়িওয়ালা হোক বা ভাড়াটে। বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির যুগে বাড়ি তৈরি করা একটা বড় সমস্যা। মানুষ কোনো না কোনোভাবে উপায়ে বাড়ি তৈরির জন্য প্লট কিনে নেয়। তাড়াহুড়ো করে বা সস্তা জমির সন্ধানে, তারা কোনও বাস্তু তদন্ত ছাড়াই জমি কিনে নিতে বাধ্য হয় এবং এইভাবে কেনা জমি তাদের জন্য কখনও কখনও অশুভ প্রমাণিত হয়। এতে ঐ গৃহে অবস্থিত ব্যাক্তির পুরো পরিবারের জীবনই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
বাস্তুর নীতি অনুসারে গৃহ তৈরি হওয়ার ফলে এবং বাস্তুর নির্দেশানুসারে সঠিক বস্তু সঠিক জায়গায় প্রতিস্থাপন করলে, বসবাসকারী মানুষের জীবন শান্তিময় ও সুখের হয়। সেজন্য সবসময় একজন স্থপতির সঙ্গে পরামর্শ করে বাস্তু নীতি অনুযায়ী ভবনের নির্মাণ করা উচিত। এতে বসবাসকারীদের জীবন হয়ে ওঠে সুখের। অন্যদিকে, পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রতিটি কাজে সাফল্য পান। এবিষয়ে সঠিক নির্দেশিকা পেতে হলে অবশ্যই কোনও অভিজ্ঞ জ্যোতিশশাস্ত্রবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ ও তা মেনে চলা উচিত।
দেশের প্রখ্যাত জ্যোতিষশাস্ত্রবিদদের অন্যতম ডা: সোহিনী শাস্ত্রী।
ডা: সোহিনী শাস্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের দূরভাষ নম্বর: +91 91635 32538 / +91 90381 36660
ওয়েবসাইট: sohinisastri.com
ফেসবুক: facebook.com/drsohinisastri
ইউটিউব: youtube.com/@dr.sohinisastribestastrolo2355/
ডিসক্লেইমার: এটি একটি বিজ্ঞাপন প্রতিবেদন এবং বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত। প্রতিবেদনে প্রকাশিত সমস্ত বক্তব্য / মন্তব্য একান্তই বিজ্ঞাপনদাতার নিজস্ব। এর সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের সম্পাদকীয় দফতরের কোনও সম্পর্ক নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিন।