আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা
ফুলের মেলা পাখির খেলা,
আকাশ জুড়ে তারার মেলা
রোজ সকালে রঙের মেলা
সাত সাগরে ঢেউয়ের মেলা
— মেলা নিয়ে প্রখ্যাত কবি আহসান হাবীবের এই কবিতা বহুচর্চিত। মেলা মানেই নানা রঙের মিশ্রণ, নানা মানুষের আনাগোনা। শীতকাল এলেই শহর জুড়ে যে মেলাগুলি বসে, সেখানে সাত সাগরের ঢেউ এসে কতটা মেশে তা বলা মুশকিল। তবে, কলকাতার সায়েন্স সিটি প্রাঙ্গনের এই মেলায় প্রতি বছরই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। সৌজন্যে ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেগা ট্রেড ফেয়ার’ অর্থাৎ ‘আইআইএমটিএফ’২০২২।
চলতি বছরে ২১তম বছরে পা দিল এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এ বছর মেলার কেন্দ্রীয় আকর্ষণ (ফোকাস কান্ট্রি) বাংলাদেশ ও ইরান। সহকারী দেশ হিসেবে রয়েছে আফগানিস্তান ও তাইল্যান্ড। প্রায় ৬৫০টিরও বেশি স্টলে নিজেদের পসার সাজিয়ে বসেছেন দূর-দূরান্তের বিক্রেতারা। দুবাই থেকে লেবানন, ইজিপ্ট থেকে মায়ানমার, চিন থেকে তাইওয়ান, নেদারল্যান্ড, আমেরিকা — কে নেই সেই তালিকায়। রয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের স্টলও।
ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেগা ট্রেড ফেয়ার
এই প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে আয়োজক কমিটির তরফ থেকে চিদ্রুপ শাহ বলেন, “কলকাতাকে শিল্প ও বাণিজ্যের পীঠস্থান হিসাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরাই এই বাণিজ্য মেলার মূল লক্ষ্য। খুচরো ব্যবসার ক্ষেত্রেও কলকাতার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলাম আমরা। ধীরে ধীরে এই মেলার ব্যপ্তি বেড়েছে। আজ আমাদের সঙ্গে দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন মানুষ যুক্ত হয়েছেন। কলকাতার মানুষ অধীর আগ্রহে বছরভর অপেক্ষা করে থাকে এই মেলার জন্য।”
যদিও শুরুটা এমন ছিল না। প্রাথমিক পর্বে নির্দিষ্ট কোনও একটি বিভাগ (যেমন আসবাবপত্র, প্রসাধন, মশলা ইত্যাদি) নিয়ে মেলার আয়োজন করা হত। কিন্তু সময় পাল্টেছে। এমন মেলার প্রয়োজনীয়তার কথা বুঝতে পেরেছিলেন উদ্যোক্তারা। সেই মতো ১৩ বছর আগে বিভিন্ন বিভাগকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়। এর পরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
সায়েন্স সিটি প্রাঙ্গনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা
উদ্য়োক্তা কমিটির তরফ থেকে চিদ্রুপ শাহ বলেন, “এই মেলা শুরু হয়েছিল জিএস মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েটস-এর তৎকালীন প্রধান প্রকাশ শাহ ও এস.ডি. গুপ্তের হাত ধরে। যে সংস্থার মূল লক্ষ্য ছিল — অন্য ব্যবসার উন্নতি। এই মেলাও শুরু হয় একই উদ্দেশ্য নিয়ে — অংশগ্রহণকারীদের ব্যবসার প্রসারণ। আগে ময়দানে এই বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হত। পরে সায়েন্স সিটি প্রাঙ্গনে এই মেলাকে নিয়ে আসা হয়। যে সময় আমরা এখানে মেলার আয়োজন করেছিলাম, সেই সময় এই এলাকা পুরো জঙ্গল ছিল। আমরা এসে এই জায়গা পরিষ্কার করে মেলার শুরু করি। এখন তো সারা বছর ধরেই এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে আমরাই প্রথম।”
কলকাতার বুকে আরও বেশ কয়েকটি বাণিজ্য মেলা হয়। কিন্তু সেগুলির থেকে কেন আলাদা এটি? উদ্যোক্তাদের কাছে উত্তরটা খুবই সহজ — মেলার বহুমুখিতা। এই মেলায় বিদেশ ও দেশের স্টলগুলি যে সামগ্রী সম্ভার নিয়ে সাজানো রয়েছে, সেগুলি সাধারণ বাজারে পাওয়া দুস্কর। তা ছাড়াও, মশলা, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্রসাধন ইত্যাদির স্টলগুলিতে যে সামগ্রীগুলি রয়েছে, সেগুলির দামও কিন্তু বাজারের তুলনায় কম। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, ‘এমন বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা সারা বছর ধরে পয়সা জমান এই মেলা থেকে সামগ্রী কিনবেন বলে! কারণ এই সামগ্রীগুলি বাইরের খোলা বাজারে পাওয়া মুশকিল।’
পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক দিক থেকেও এই মেলার প্রাসঙ্গিকতা অনেক। শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষ এই বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। তাই এখানে ব্যবসার সুযোগও রয়েছে অফুরন্ত। সব মিলিয়ে এই বছর ৩০০-৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা।
বর্তমানে দেশজুড়ে ১০টি রাজ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়। ব্যপ্তির নিরিখে আইআইএমটিএফ–কে পূর্ব ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য মেলা। দেশের মধ্যে এর স্থান দ্বিতীয়।
তা হলে আর দেরি কেন? ঘুরে আসুন ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেগা ট্রেড ফেয়ার’ থেকে। মেলা চলবে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এই প্রতিবেদনটি ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেগা ট্রেড ফেয়ার’-এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।