শ্রেয়সী ভৌমিক ও কেয়ার নাও পলিক্লিনিক
কোনও ব্যক্তির রোজকার জীবনযাপনে পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা, তা বোধ হয় নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, দৈনিক কর্মব্যস্ততার চাপে এখনও অধিকাংশ মানুষই সঠিক উপায়ে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারেন না। শ্রেয়সী ভৌমিক সিংহ প্রতিনিয়ত বহু মানুষের জীবনে এই চাহিদাই পূরণ করে চলেছেন।
শ্রেয়সী পেশায় পুষ্টিবিদ এবং লাইফস্টাইল কাউন্সিলর। কাজ করেছেন একাধিক সংস্থায়। কলকাতার পিয়ারলেস হসপিটাল এবং দুর্গাপুরের বিবেকানন্দ হসপিটালে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। যুক্ত ছিলেন ওয়েলনেস সংস্থা ভিএলসিসি-র সঙ্গেও। যোধপুর পার্কে তাঁর একটি ক্লিনিক রয়েছে। নাম ‘কেয়ার নাও’।
অ্যাপোলো ২৪*৭–এর সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করে এই ক্লিনিকটি। তা ছাড়া বাডি ব্যাক হোম, মানিক টেলিকনসালটেন্সি এবং সুবিধা –এর মতো বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তিনি। এমনকী হেলদিফাইমি, কাল্ট ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ডিজিটাল ফিটনেস সংস্থাতেও পরামর্শদাতার কাজ করছেন শ্রেয়সী।
কর্মজীবন বেশ ঝলমলে শ্রেয়সীর। পুষ্টি সম্পর্কিত আলোচনায় অতিথি বক্তা হিসেবে বিভিন্ন আলোচনাসভায় উপস্থিত থেকেছেন। যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন চ্যানেল ও পোর্টালের আলোচনা চক্রে। এ ছাড়াও একটি বেসরকারি চ্যানেলে টলি পাড়ার তারকাদের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় তাঁকে দেখা গিয়েছে। কোভিড পরবর্তী সময়ে সাগর গ্রুপ অফ ইনস্টিটিউশন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ডায়েট নিয়ে একটি আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য মন কেড়েছিল শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংবাদপত্রে তাঁর লেখা পুষ্টি সংক্রান্ত লেখাগুলি বহু মানুষের নজর কেড়েছে।
শ্রেয়সী ভৌমিক
শুধু তাই নয়, একাধিক জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো–তে বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ হিসাবে উপস্থিত থাকেন শ্রেয়সী। তালিকায় রয়েছে ‘দিদি নং ১’, জি বাংলার রান্নাঘর, স্টার জলসায় রান্নাবান্না এবং জোশ টকসের মতো শো। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সম্মেলনেও তাঁর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা প্রথম বই ‘ইউএমএ’। যেখানে শ্রেয়সী তাঁর কর্মজীবন পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বর্ণনা করেছেন। খুব কম সময়েই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে তাঁর বইটি।
দেশ পেরিয়ে বিদেশেও শ্রেয়সীর আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন অ্যাসোসিয়েশন –এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন তিনি। এই অনুষ্ঠানে মোট ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে দ্য বেঙ্গল আইকনিক অ্যাওয়ার্ড ২০২২ – ‘বেস্ট ক্লিনিকাল নিউট্রিশনিস্ট অফ দ্য ইয়ার’ও।
পুষ্টি নিয়ে শ্রেয়সীর ধারণা অত্যন্ত স্পষ্ট। তাঁর মতে, “এমন কোনও সাপ্লিমেন্ট নেই, যা জাদুবলে আপনার খাবারের পরিপূরক হয়ে উঠবে। বরং খাদ্যের সু-অভ্যাস এবং সঠিক জীবনযাত্রার ফলেই শরীরে সঠিক পুষ্টি বজায় থাকে। পাশাপাশি সঠিক শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।” তিনি বলছেন, “একটু ভাল করে ভেবে দেখুন এই পরিবর্তনগুলি কার্যকর করতে কোনও টাকা লাগে না কিন্তু। প্রয়োজন শুধুমাত্র প্রচেষ্টা এবং ধারাবাহিকতার। আর এ ভাবেই রোগব্যাধিকে দূরে রাখতে পারি আমরা। মোট কথা স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এগুলি অত্যন্ত জরুরি।”
নারী দিবসে পুষ্টি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিচ্ছেন শ্রেয়সী:
১। সহজ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন। আমাদের সব থেকে বড় ভুল হল ঘুমের প্রতি অবহেলা। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমে যায়।
২। খাওয়া-দাওয়া চলুক সচেতনতার সঙ্গে। ওজন কমানোর জন্য খালি পেটে থাকা উচিত নয়। এতে অ্যাসিডিটি, হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যাওয়া, স্থূলতা ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
শ্রেয়সী ভৌমিক
৩। আপনি প্রতিনিয়ত যে খাবার খাচ্ছেন, তার উপাদানগুলি দেখে নেওয়া জরুরি। উপযুক্ত প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার থাকুক তালিকায়। বাজারজাত কোনও খাদ্যদ্রব্য কেনার সময়ে অবশ্যই এফএসএসএআই অর্থাৎ ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এবং অন্যান্য শংসাপত্র দেখে নেবেন।
৪। নিয়মিত সঠিক শরীরচর্চার প্রয়োজন। আন্ডারট্রেনিং বা ওভারট্রেনিং এড়িয়ে চলুন। এবং শরীরকে বিশ্রাম দিন। ব্যায়াম এমন হওয়া উচিত নয়, যা আপনার শরীরে আঘাতের কারণ হয়ে উঠবে। এবং শরীরচর্চার ক্ষেত্রে অবশ্যই ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন।
৫। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ ও চাপের মধ্যে থাকেন, তা হলে শরীর থেকে ভিটামিন এবং মিনারেল ক্ষয় হতে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয় এতে। তাই মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে ধ্যান করার চেষ্টা করুন।
শ্রেয়সীর এই পরামর্শগুলি অনেককেই শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার দিকে পরিচালিত করেছে। পুষ্টিবিদ্যায় তাঁর পারদর্শিতা তাঁকে দিয়েছে এক অনন্য পরিচিতি। বহু মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে পেরে প্রকৃতপক্ষেই শ্রেয়সী আজ হয়ে উঠেছেন ‘সর্বজয়া’।
এই প্রতিবেদনটি 'উই মেক আস' -এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।