প্রতীকী চিত্র
দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকতে ব্যায়াম একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। ব্যায়ামের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের কমবেশি জ্ঞান থাকলেও আমরা অনেকেই এই বিষয়ে এখনও বেশ অনেকটাই অনীহা দেখিয়ে ফেলি কিংবা আলসেমি করি। যার কারণে দেখা দিতে থাকে বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ। সঙ্গে বৃদ্ধি পেতে থাকে ওজনও। শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে এবং শরীরের ওজনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে ব্যায়ামের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ ছাড়াও হাড়ের দৃঢ়তা বজায় রাখা, মাংসপেশীর সবলতা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের স্বাভাবিক চলন ক্ষমতা বজায় রাখতে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই।
ব্যায়ামের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করলেই প্রথমেই আসে ওজন নিয়ন্ত্রণের কথা। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোজ কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। যদি প্রতিদিন শরীর চর্চা করা সম্ভব না হয়, তা হলে সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন সময় বার করে ব্যায়াম করা অবশ্যই উচিত। নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে চর্বিযুক্ত খাবার কম খেলে ধীরে ধীরে ওজনও কমতে শুরু করবে। তবে ব্যায়াম করার জন্য নিয়মিত জিমে গিয়ে শরীরচর্চার প্রয়োজন পড়ে না কিন্তু। বেশ কিছু সহজ ব্যায়াম আছে, যা ঘরে বসেই খুব সহজে করা যায়।
তবে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে নানা ধরনের ব্যায়াম করে থাকেন। এতে ভালর চেয়ে খারাপ হয় বেশি। কারণ না বুঝে ব্যায়াম করলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা পেতে পারেন। যা এক সময়ে মারাত্মক আকারও ধারণ করতে পারে। তাই ওজন কমানোর আগে জানা উচিত কোন ব্যায়ামগুলো দ্রুত ওজন কমাবে।
সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা: অনেকের ঘরেই শরীরচর্চার সরঞ্জাম না থাকায় তাঁরা ব্যায়াম করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সিঁড়িতে ওঠানামা করার মাধ্যমেও ওজন কমাতে পারবেন। এ ছাড়াও সিঁড়িতে ওঠানামা করলে রক্তে ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে। সেই সঙ্গে তা জয়েন্ট, পেশি এবং হাড়কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
লাফ দড়ি: দড়ি লাফের মাধ্যমে দ্রুত ক্যালোরি বার্ন করা যায়। গবেষণা বলছে, ১০ মিনিট হাঁটার চেয়ে দৈনিক ১০ মিনিট দড়ি লাফ দিলে বেশি ক্যালোরি বার্ন করা সম্ভব। এতে পেশিও শক্তিশালী হয়।
সূর্য নমস্কার: এটি সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাসনগুলির একটি। এটি আপনার শরীরকে প্রসারিত এবং শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এই যোগাসনটি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, হজমে সাহায্য করে, রক্তের প্রবাহ বাড়াতে পারে এবং চাপের মাত্রা কমাতে পারে।
সর্বাঙ্গাসন: সর্বাঙ্গাসনকে বলা চলে সমস্ত আসনের নিরিখে শীর্ষস্থানীয়। এটি হাত এবং কাঁধে, পিঠের উপরে এবং মাঝের দিকে, ঘাড় এবং অভ্যন্তরীণ অংশে কাজ করে। এটি পেট, নিতম্ব, এবং উরু থেকে চর্বি কমাতেও সহায়তা করে।
পশ্চিমোত্তনাসন: পশ্চিমোত্তনাসন একটি মেরুদণ্ড-নির্ভর যোগব্যায়াম, যা পুরো পিঠ, ঘাড়, নিতম্বের উপরে প্রভাব ফেলে। এটি পেটের চর্বি কমানোর সেরা যোগব্যায়ামগুলির মধ্যে একটি।
কপালভাতি: ওজন কমানোর জন্য কপালভাতি একটি সহজ অথচ কার্যকরী আসন। বিপাক বাড়িয়ে তুলতে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে এটি। এ ছাড়াও এই যোগাসনটি রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে, ফুসফুসের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং মনকে শান্ত করে।
পুশ আপ: পুশ আপ-এর অনেক উপকারিতা আছে। ওজন কমানো থেকে শুরু করে হাড় শক্তিশালী করা পর্যন্ত অনেক কিছুই এই ব্যায়ামের মাধ্যমে হয়।
চক্রাসন: প্রথমে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। আস্তে আস্তে হাঁটু দুটি ভাঁজ করে দুই হাতের জোরে কোমর-সহ শরীর উপরে তুলুন। হাঁটু যথাসম্ভব ভাঁজ করে গোড়ালিকে হাল্কা স্পর্শ করুন হাত দিয়ে। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। এ ভাবে ৩০ সেকেন্ড রেখে পুনরায় শবাসনে চলে আসুন। এ ভাবে পাঁচ বার করুন। চক্রাসন ওজন কমাতে খুবই কার্যকরী।
শুধু ওজন কমানোই নয়, শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ব্যায়াম ছাড়াও ওজন কমানোর জন্যে খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। তা হলে ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব হবে।