শ্রী মণি ভাস্কর
'যো দেবো অগ্নৌ যোহপসু যো বিশ্বং ভুবনমাবিবেশ। য ওষধীষু যো বনস্পতিষু তস্মৈ দেবায় নমো নমঃ'(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ, অধ্যায় ২/১৭) -অর্থাৎ যে জ্যোর্তিময় পরমাত্মা অগ্নিতে, জলে (যোহ-অপ-সু), সমগ্র বিশ্বে পরিব্যপ্ত (যো বিশ্বং ভুবনমাবিবেশ), যিনি সমস্ত ঔষধি (য ওষধীষু) এবং বিশাল বটবৃক্ষে (যো বনস্পতিষু) রয়েছেন, সেই পরমাত্মাকে বারবার প্রণাম করি (তস্মৈ দেবায় নমো নমঃ)। তৈত্তিরীয় উপনিষদ বলছে, পরমব্রহ্ম পরমাত্মা চরাচর বিশ্বে প্রতিটি কণায়(জৈব অথবা অজৈব, চেতন অথবা অচেতন) প্রকাশিত। তাঁর এই প্রকাশ মাধ্যম পঞ্চভূত বা পঞ্চতত্ত্ব (five elements), ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-ব্যোম অর্থাৎ ভূমি-জল-অগ্নি-বায়ু-আকাশ।
উপনিষদের এই বাণীরই প্রতিধ্বনি অনুরণিত হল কবিগুরুর 'নৈবেদ্য'-এ। রবীন্দ্রনাথ লিখলেন,
'হে সকল ঈশ্বরের পরম ঈশ্বর,
তপোবনতরুচ্ছায়ে মেঘমন্দ্রস্বর
ঘোষণা করিয়াছিল সবার উপরে
অগ্নিতে, জলেতে, এই বিশ্বচরাচরে,
বনস্পতি-ওষধিতে এক দেবতার
অখন্ড অক্ষয় ঐক্য। সে বাক্য উদার
এই ভারতেরই।’
রবীন্দ্রনাথ, পঞ্চতত্ত্বে পরম ঈশ্বরের প্রকাশের কথা তো বললেনই, আরও লিখলেন উদার ভারতই প্রথম এই তত্ত্বের প্রণেতা। কিন্তু সমগ্র বিশ্ব চরাচরে পরম ঈশ্বরের যে সূক্ষ্ম প্রকাশ, তা দৃশ্যগ্রাহ্য স্থূলরূপ পেল কী ভাবে? সেই সূত্র রয়েছে শ্রীমদ্ভগবদগীতায় -
'মহাভূতান্যহঙ্কারো বুদ্ধিরব্যক্তমেব চ। ইন্দ্রিয়াণি দশৈকঞ্চ পঞ্চ চেন্দ্রিয়গোচরাঃ।' (১৩ নং অধ্যায়ের ৬ নং শ্লোক)
উৎপত্তি কালে সর্বপ্রথম ওঙ্কার শব্দগুণ বিশিষ্ট আকাশ নির্মাণ হয়। আকাশ থেকে শব্দ+স্পর্শ গুণ বিশিষ্ট বায়ু, বায়ু থেকে পুনরায় শব্দ+স্পর্শ+রূপ গুণ বিশিষ্ট তেজ/অগ্নি, তার থেকে শব্দ+স্পর্শ+রূপ+রস গুণ বিশিষ্ট জল এবং জল থেকে শব্দ+স্পর্শ+রূপ+রস+গন্ধ গুণ বিশিষ্ট পৃথিবী উৎপন্ন হয়। এদেরকে এককথায় সূক্ষ্ম পঞ্চভূত (five elements) বা পঞ্চ তন্মাত্র বলে। এরা সূক্ষ্ম বলে ব্যবহারের অযোগ্য। অতঃপর আকাশের অর্ধাংশ ও বাকি চারভূতের(remaining four elements) প্রত্যেকের এক অষ্টমাংশ একত্রীভূত হয়ে স্থূল বা পঞ্চীকৃত আকাশ নির্মাণ হয়। এই ভাবে বায়ুর অর্ধাংশ এবং অপর চারভূতের এক অষ্টমাংশ মিলিত হয়ে স্থূল বায়ু নির্মাণ হয়। একইভাবে অন্যান্য ভূতও (elements) পঞ্চীকৃত হয়। এই নিয়মেই সূক্ষ্ম পঞ্চভূত স্থূল বা পঞ্চীকৃত হয়ে ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ বলছে, মানুষ জগৎসংসারে মায়াশক্তি রূপে ভোগাভিমানে পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা রূপ-রস-গন্ধ-শব্দ-স্পর্শ ইত্যাদির ভোক্তাজ্ঞানে এবং কর্মফল অনুসারে নানান যোনিতে পরিভ্রমণ করে (অধ্যায় ৫/১১)।
শ্রীমদ্ভগবদগীতাতেও একাধিকবার এই পঞ্চভূতের উল্লেখ রয়েছে। ৭ নং অধ্যায়ের ৪ নং শ্লোকে, ভগবান বললেন,
'ভূমিরাপোহনলো বায়ুঃ খং মনো বুদ্ধিরেব চ। অহঙ্কার ইতীয়ং মে ভিন্না প্রকৃতিরষ্টধা।'
অর্থাৎ 'ভূমি, জল, বায়ু, অগ্নি, আকাশ, মন, বুদ্ধি এবং অহঙ্কার এই অষ্ট প্রকারে আমার ঐশ্বরী মায়াশক্তি বিভক্ত।'পঞ্চতত্ত্বের সঙ্গে এবার যুক্ত হল মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার। ঐশ্বরীয় দ্যোতনার সঙ্গে মিলে গেল আমাদের ভাবনা-চিন্তন। আগেই বলা হয়েছে, তেমনই ভাবনা যেমন ভবন, সেকারণে আমাদের বাস্তুগৃহেও এই আটপ্রকার শক্তি বিদ্যমান। যেমন, বাস্তুর উত্তর অংশে জল তত্ত্ব, পূর্ব অংশে বায়ু তত্ত্ব, দক্ষিণ অংশে অগ্নি তত্ত্ব, দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে ভূমি তত্ত্ব, পশ্চিম অংশে আকাশ তত্ত্ব, উত্তর-পূর্ব অংশে মন+বুদ্ধি এবং অহঙ্কার/self identity অবস্থিত বাস্তুর কেন্দ্রে/মধ্যস্থলে।
কিন্তু যখনই অগ্নি তত্ত্বে (বাস্তুর দক্ষিণ অংশে) জল(রিজার্ভার, সাবমার্সিবল, টয়লেট, কুয়ো, ওয়াশিং মেশিন, নীল-কালো রং ইত্যাদি....) থাকে বা জল তত্ত্বে (উত্তর অংশে) অগ্নি (মিটার বক্স, রান্নাঘর, মাইক্রোওয়েভ, ইনভার্টার, লাল রঙের বিভিন্ন শেড) থাকে এক কথায় বাস্তুর নির্মাণবিধি লঙ্ঘিত হয় তখনই বাস্তু ভারসাম্য হারায়। ফলতঃ আমাদের গৃহে দৈবশক্তি ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে, আসুরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। যার প্রভাবে সেই বাস্তুতে দুঃখ-কষ্ট-আর্থিক অনটন-সম্মানহানি-নানাবিধ প্রতিকূল পরিস্থিতি আকর্ষিত হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত মিউজিক সিস্টেম, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ওয়াইফাই, স্টোরেজ, গ্যারেজ, পুজোর স্থান, বিভিন্ন দেবদেবীর ছবি বা প্রতিমা, খাট, আলমারি, সিঁড়ি, লোহার জিনিস, তামার জিনিস, ধারালো দ্রব্য(ছুরি,কাঁচি, সেলাই মেশিন ইত্যাদি), দেওয়াল ঘড়ি, বাসনপত্র, ওষুধ, মৃত ব্যক্তিদের ছবি, গাছপালা বা সবুজ রং, ডাস্টবিন প্রভৃতি বস্তুগুলির মধ্যে কোনওটি জল, কোনওটি বায়ু, অগ্নি, ভূমি বা আকাশ তত্ত্ব। এই দ্রব্যগুলি ভুল জায়গায় থাকলে বাস্তুতে নেতিবাচক প্রভাব পরে। বাস্তু সম্মত নির্মাণ বা বাস্তুর প্রকৃত সংস্কার এক্ষেত্রে শুভ পরিবর্তন আনতে পারে। বাস্তু বিষয়ক পরামর্শ পেতে যোগাযোগ করুন এই নম্বরে —
WhatsApp - 86173 72545/98306 83986 (Payable & Non-Refundable)
ডিসক্লেইমার: এটি একটি বিজ্ঞাপন প্রতিবেদন এবং বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত। প্রতিবেদনে প্রকাশিত সমস্ত বক্তব্য / মন্তব্য একান্তই বিজ্ঞাপনদাতার নিজস্ব। এর সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের সম্পাদকীয় দফতরের কোনও সম্পর্ক নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিন।