ডেঙ্গি এখন কেবলমাত্র বর্ষাকালেই সীমাবদ্ধ থাকে না। গ্রীষ্মকাল এবং শীতকালেও এই রোগ হয়। এ বছর পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে ১৭৩ টি ডেঙ্গি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে এবং বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিটি শহরে অন্তত পক্ষে এমন ২৮ টি ঘটনার রেকর্ড আছে। সাধারনত গ্রীষ্মকালে ডেঙ্গি সংক্রমণের নিরিখে অনেকগুলি কারণ রয়েছে যে কারনে বছরের এই সময়টা সবচেয়ে বেশি মাত্রায় এই রোগ তীব্র বেগে ছড়িয়ে পরে, যেমন - ওয়াটারকুলারে জল সঞ্চয়, গ্রীষ্মকালে পাখি বা অন্যান্য প্রাণীদের জন্য বিভিন্ন পাত্রে রাখা জল। তবে শীতকালেও বেশ কিছু সংখ্যক ডেঙ্গি সংক্রমণের ঘটনা শোনা যায়, যা থেকে একথা স্পষ্ট যে ডেঙ্গি এখন শুধুমাত্র একটি মরশুমেই সীমাবদ্ধ নেই।
এখন এই বিষয়েই কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে।
গ্রীষ্মকালে কেন ডেঙ্গি সর্বত্র ছড়িয়ে পরে?
গ্রীষ্ম এবং শীতকালে ডেঙ্গির প্রকোপ প্রকৃতির মধ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তবে বর্ষাকালে যে পরিমানে এর স্থায়িত্ব থাকে, তেমনটা নয়। গরমকালে ডেঙ্গি হওয়ার কারণ হল ওয়াটারকুলারে জল সঞ্চয়, যা এডিস মশাদের বাসস্থান হয়ে ওঠে এবং সেখানেই তারা প্রজনন করে। আর শীতকালে এই মশারাই বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন কোনাকে তাদের বাসস্থান হিসেবে বেছে নেয়, যার ফলে এই রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে আরও দু থেকে তিনগুন বেশি। সুতরাং, কেবলমাত্র বর্ষাকালেই যে মশারা রোগ বিস্তার করে তা নয়, বছরের প্রায় সমস্ত সময়টাই তারা বংশবৃদ্ধি করে চলে।
আবওহাওয়া বদলে যাওয়াও কি ডেঙ্গি রোগ সংক্রমণের আরেকটি কারণ?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্ষার সময় ডেঙ্গির প্রকোপ উল্লেখ করা হলেও, ডেঙ্গি এখন বছরব্যাপী সংক্রমিত হয়ে চলেছে। আবওহাওয়ার বদল তাই এক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না। জমানো জল এবং তা পরিষ্কার না করাই পরবর্তীকালে মশার আঁতুর ঘরে পরিণত হয়। যা বংশবৃদ্ধি করার জন্য উপযুক্ত। জলের ট্যাঙ্কিতে জমে থাকা জল,বাসনপত্র রাখার জায়গা, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণীদের জন্য বিভিন্ন পাত্রে রাখা জল, এইসমস্ত জায়গাই মশাদের ডিম পাড়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি দিন এই জমা জল পরিষ্কার করা খুবই জরুরি এবং প্রতিটি পাত্র শুকনো অবস্থায় আছে কি না তাও খেয়াল রাখা দরকার। মশাদের কামড় থেকে বাঁচার জন্য এবং ডেঙ্গি থেকে নিজেকে সাবধানে রাখার জন্য এটিই সবচেয়ে ভালো উপায়।
এই বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য সম্ভাব্য সমাধানগুলি কি কি?
স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে এই রোগ সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। তবে নিজের চারপাশকে পরিষ্কার করার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকেরই। ডেঙ্গির হাত থেকে বাঁচার জন্য সারাবছরই এই বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। প্রতিটি অন্ধকারচ্ছন্ন জায়গা, প্রতিটি কোনা যদি ভালেভাবে পরিষ্কার করা যায়, তাহলেই মশাদের তাড়ানো সম্ভব। বর্তমান সময় এডিস এজিপ্টি মশার দাপট বেড়েছে প্রচন্ড পরিমানে। এই সময় নিজেদের উচিত ঢিলে জামাকাপড় পরা এবং যতটা সম্ভব নিজেদেরকে ঢেকে রাখা। পাশাপাশি বিকেল বেলা বাড়ির দরজা-জানালাও বন্ধ করে রাখা উচিত কারণ এই সময়টাই মশাদের বাড়িতে প্রবেশ করার উপযুক্ত সময়। এছাড়াও স্টেইনলেস স্টিলের মাধ্যমে দরজা জানালা ঢেকে দেওয়া যেতে পারে বা দরজা জানালায় জালও লাগিয়ে মশাদের বাড়িতে প্রবেশ করা থেকে আটকানো যেতে পারে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে বাতাস যেমন চারিদিকে ছড়িয়ে পরবে, ঠিক তেমনই মশারাও বাড়িতে আর প্রবেশ করতে পারবে না। তবে একথাও সত্যি যে যাই করা হোক না কেন, এই রোগবাহী মশাদের হাত থেকে বাঁচার সবথেকে ভালো উপায় হল, এদেরকে মেরে ফেলা। আর তার জন্য সবচেয়ে ভালো হল, মশা মারা স্প্রে। এই স্প্রে ব্যবহারের মাধ্যমে মশাদেরকে পুরোপুরি বিনাশ করা সম্ভব।
ডেঙ্গির থেকে মুক্তির উপায়
সর্বপ্রথম, আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনার বাড়িতে মশার বংশবৃদ্ধি করার মতো এমন কোনও স্থান নেই। শুধুমাত্র চারপাশটা পরিষ্কার করে, জীবণুনুক্ত করলেই হবে না, তার সঙ্গে নিজের বাড়িকে মশাদের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য কালা হিটের মতো মশা মারা স্প্রেই একমাত্র ওষুধ যা সমস্ত মশাদের একবারে মেরে ফেলতে সক্ষম।
মনে রাখবেন, একটিমাত্র মশাও আপনার পক্ষে ক্ষতিকারক। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের মেরে ফেলা উচিত।