প্রতীকী চিত্র
এটি একটি গবেষণা ভিত্তিক রিপোর্ট। ভারতের জয়পুরে অবস্থিত আইআইএইচএমআর বিশ্ববিদ্যালয়, এবং ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে অবস্থিত জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এই যৌথ গবেষণাটি ভারতের ৩৬টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে ৬ লক্ষ ৩৬ হাজার৬৯৯ টি পরিবারের, ৭ লক্ষ ২৪ হাজার ১১৫ জন মহিলা এবং ১ লক্ষ ১ হাজার ৮৩৯ জন পুরুষের থেকে সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
এই গবেষণা অনুযায়ী ভারতে মহিলাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ এবং পুরুষদের মধ্যে ১২ শতাংশ অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটির স্বীকার। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩০-৪৯ বছর বয়সীদের ১০ জনের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় জন মহিলার অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটি রয়েছে।
এই সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে মোটা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। শহরে বসবাসকারী, বয়স্ক, আর্থিক ভাবে সচ্ছল এবং আমিষভোজী মহিলাদের অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটির ধাত বেশি বলেই মত গবেষকদের৷
সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলির মধ্যে কেরালায় ৬৫.৪ শতাংশ এবং তামিলনাড়ুতে ৫৭.৯ শতাংশ, উত্তরের রাজ্যগুলির মধ্যে পঞ্জাবে ৬২.৫ শতাংশ এবং দিল্লিতে ৫৯ শতাংশ মহিলা অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটির শিকার। তুলনায় ঝাড়খণ্ডে ২৩.৯ শতাংশ এবং মধ্যপ্রদেশে ২৪.৯ শতাংশ মহিলা এতে আক্রান্ত।
সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, ধর্মের নিরিখে বৌদ্ধ এবং জৈন মহিলাদের মধ্যে অ্যাবডোমেনাল ওবিসিটির হার কম। শিখ এবং খ্রিস্টান মহিলাদের মধ্যে তুলনায় তা বেশি। তবে এই পার্থক্য পুরুষদের মধ্যে খুব বেশি দেখা যায়নি।
গবেষকদের মতে, ১৯৯০ সাল থেকে ভারত এবং অন্যান্য দেশে স্থূলতার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ৪৪ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২ কোটির বেশি মানুষ, অতিরিক্ত ওজন বা ওবেসিটিতে আক্রান্ত।
এই সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে যে, মহিলাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ ওবেসিটির তুলনায় অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটিতে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি এবং খুব সহজে তাঁরা অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটিতে আক্রান্ত হন।
১৫-১৯ বছর বয়সের মধ্যে, ১.৭ শতাংশ কিশোরী অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটিতে আক্রান্ত। সেটাই বয়স বাড়ার সঙ্গে ২০-২৯ বছর বয়সের মধ্যে ৩২.২ শতাংশ, ৩০-৩৯ এবং ৪০-৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে যথাক্রমে ৪৯.৩ এবং ৫৬.৭ শতাংশ অবধি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সহজ কথায় ওবেসিটি মানে শরীরে চর্বি জমে যাওয়া। এর সঙ্গে সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলি শরীরে চর্বি বা ফ্যাটের রকমফের এবং বিতরণের উপর নির্ভর করে।
অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটি হল ওবেসিটির এক ধরনের প্রকার, যা সেন্ট্রাল ওবেসিটি বা ভিসারাল ওবেসিটি নামেও পরিচিত।
অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটি শরীরে চর্বি জমার এক গুরুতর রূপ হিসাবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি মানুষের বিভিন্ন বিপাকীয় ব্যাধি এবং অনান্য রোগের জন্য দায়ী৷ গবেষকদের কথায়, ভারতীয়দের মধ্যে পেটের স্থূলতা এবং ভিসারাল চর্বি জমার প্রবণতা বেশি, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।
কিন্তু কী করে বুঝবেন আপনার ওজন বেশি?
স্থূলতার পরিমাপ কোমরের পরিধির ভিত্তিতে করা হয়। মহিলাদের কোমরের পরিধি ৮০ সেন্টিমিটার এবং পুরুষদের ৯৪ সেন্টিমিটারের বেশি হলে তাঁর অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটি আছে বলে মনে করা হয়।
অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটি কার্ডিওভাসকুলার রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য বিপাকীয় ব্যাধির কারণ হয়ে উঠতে পারে। সাধারণত অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটির সঙ্গে যে সব রোগগুলি যুক্ত, তা হল উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ রক্তের কোলেস্টেরল, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, স্ট্রোক, গলব্লাডারের রোগ, অস্টিওআর্থারাইটিস বা হাড়ের বাত, নিদ্রাহীনতা, শ্বাসকষ্ট, ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন, এবং সীমিত শারীরিক কার্যকারিতা।
অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটির হাত থেকে বাঁচতে কী করা উচিত?
স্থূলতার ঝুঁকি কমানোর প্রথম ধাপ হল প্রথমে ওজন কমানো এবং তার জন্য শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকা প্রয়োজন। সঙ্গে অবশ্যই ভাল খাদ্যাভাসের প্রয়োজন রয়েছে।
মানসিক চাপ সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেককে মানসিক চাপ পরিচালনা করতে শিখতে হবে। মানসিক চাপ ওজন কমানোর লক্ষ্যেও বাধা হয়ে উঠতে পারে এবং খিদে কমিয়ে দেয়।
তাই অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটির থেকে বাঁচতে হাঁটা, সাইকেল চালানো, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা এবং সাঁতারের মতো শরীরচর্চা করতে পারেন। টিভি দেখা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করার মতো কার্যকলাপ কমাতে হবে।
খাদ্যতালিকায় সবসময় মরসুমি খাবার বেছে নিন এবং ক্যালোরি গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন হোন। স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন পুরো শস্য (হোল গ্রেন), ফল ও শাকসবজি, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিনের উৎস। পরিশোধিত শস্য এবং মিষ্টি, আলু, লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং চিনিযুক্ত পানীয় খাওয়া কমানো স্থূলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।