খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে নির্বাচন নয়— শুক্রবার জানিয়ে দিল বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।—ছবি পিটিআই
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে নির্বাচন নয়— শুক্রবার জানিয়ে দিল বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশে নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছেন। এর পরে শনিবার থেকে মনোনয়ন পত্র বিক্রি শুরু করে দিয়েছে শাসক আওয়ামি লিগ। প্রথম মনোনয়ন পত্রটি কেনা হয়েছে নেত্রী শেখ হাসিনার নামে।
তবে বিরোধী বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির কাল রাতেই বলেছিলেন, সরকার একতরফা নির্বাচনের যে পরিকল্পনা ছকেছে, ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ঘোষণায় তার প্রতিফলন ধরা পড়েছে। কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি-র জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এ দিন জনসভা ডেকেছিল রাজশাহিতে। ফখরুল সেখানে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সব দলের সমান সুযোগ ছাড়া নির্বাচন এবং নির্বাচনের নির্ঘণ্ট গ্রহণযোগ্য হবে না।’’ সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় নির্বাচনী সরকার গঠনের দাবিও তোলেন তিনি। ফ্রন্টের বিভিন্ন নেতা বক্তৃতায় ইঙ্গিত দেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে দাবি আদায়ের পথই তাঁরা বেছে নিচ্ছেন। যদিও জনসভার পরে আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেছেন, ‘‘সুর দেখে তো মনে হচ্ছে, বিএনপি নির্বাচনে আসবে।’’
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নে বিএনপি নেতৃত্ব কার্যত আড়াআড়ি দু’ভাগ। একটি অংশ মনে করেন, ২০১৪-র নির্বাচনে অংশ না-নিয়ে মস্ত বড় রাজনৈতিক ভুল করেছে দলটি। তার ফলে সরকার তাদের ‘হামলা-মামলায়’ দমন করার সুযোগ পেয়েছে। বিএনপি-র সংগঠনের আজ এমন হাল, দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হওয়ার পরেও তারা তেমন কোনও আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। ওই অংশের মতে, এ বার আবার সেই ভুল করলে বিএনপি-র অস্তিত্বই বিলুপ্ত হবে।
অন্য অংশের বক্তব্য, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সেই নির্বাচন বৈধতা পেয়ে যাবে। সংগঠনের যা অবস্থা, এই নির্বাচনে ক্ষমতায় ফেরার কোনও আশা নেই। সুতরাং আওয়ামি লিগের জয়ও বৈধ হয়ে যাবে। ওই অংশের নেতা গয়েশ্বর রায় এ দিনও রাজশাহির সভায় বলেন, ‘‘এ অবস্থায় নির্বাচনে গেলে শেখ হাসিনা সারা জীবন প্রধানমন্ত্রী থেকে যাবেন। খালেদা জিয়াকেও সারা জীবন কারাগারে কাটাতে হবে। তারেক রহমানও জীবনে দেশে ফিরতে পারবেন না।’’
বিরোধী আর একটি জোট বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও বিএনপি-র সুরে নির্বাচনী নির্ঘণ্টকে প্রত্যাখান করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামি লিগকে খালি মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্যই নির্বাচন কমিশন এই নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছেন।’’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মহম্মদ এরশাদ অবশ্য নির্ঘণ্টকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর দল শনিবার থেকে মনোনয়ন পত্র বিলি শুরু করছে।