বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।—নিজস্ব চিত্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া রিজার্ভের বাকি ৬৬ মিলিয়ন (৬ কোটি ৬ লক্ষ) ডলারের পুরোটাই ফিলিপিন্স থেকে ফেরত পাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ফিলিপিন্স সফর থেকে ফেরার পর বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের আইনমন্ত্রী বলেন, “ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশনক (আরসিবিসি)-কে অবশ্যই পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে। মোট রিজার্ভের ৬৬ মিলিয়ন ডলার এখনও উদ্ধারের বাকি আছে। সেই টাকা দেবে রিজাল ব্যাংক।”
সম্প্রতি রিজাল ব্যাংক ওই টাকা দিতে অস্বীকার করেছিল। সে প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী বলেন, “ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশনের অর্থ ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানানো অনৈতিক। কারণ তারা এ ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে। এখন অর্থ ফেরত দিতে না চাওয়া অগ্রহণযোগ্য। তাদের অর্থ ফেরত দিতেই হবে।”
চার দিনের ফিলিপিন্স সফর সেরে ফিরেছেন মন্ত্রী। সাংবাদিকদের বলেন, “ফিলিপিন্সের আদালতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি ওই দেশের সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”
আনিসুল হক জানান, “ফিলিপিন্সের আদালতে আমরা একটি রায় পেয়েছি। আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় আছি। ওই দেশের আইন প্রতিমন্ত্রী ও চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা তাঁদের সহযোগিতা চেয়েছি, এবং তাঁরা আমাদের সহযোগিতা করে চলেছেন।”
কবে নাগাদ এই টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব হবে, এই প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। পুরো আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই আমরা টাকা ফেরত পাব।”
গত ২৭ নভেম্বর আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরতের বিষয়ে ফিলিপিন্স সফরে যায়। এ সময় প্রতিনিধিদলটি ফিলিপিন্স সেনেটের প্রেসিডেন্ট, অর্থমন্ত্রী ও আইন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সফরের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, পাচার হওয়া রিজার্ভের পুরো অর্থই ফিলিপিন্স সরকার ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ বিষয়ে ফিলিপাইন সরকার যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ বিষয়ে জড়িতদের চিহ্নিত করতে ফিলিপাইন সরকার আবারও শুনানি শুরু করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়েছিল গত ৫ ফেব্রুয়ারি। হ্যাকাররা সুইফট কোড জালিয়াতির মাধ্যমে এই চুরু করেছিল। তদন্তে ধরা পড়ে এই সাইবার চুরির ঘটনা ঘটেছে ফিলিপিন্স থেকে। তার প্রায় ১০ মাস পর, গত ১২ নভেম্বর ফিলিপিন্স থেকে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত পেয়েছিল বাংলাদেশ। ওই দিন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ‘বাংকো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপিনাস’ মারফত মোট ১ কোটি ৫২ লক্ষ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার ফেরত পাওয়া গিয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা রাজি হাসান তখন বলেছিলেন, “বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের একটি প্রতিনিধিদল ফিলিপাইন থেকে ১ কোটি ৫২ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার গ্রহণ করেছে। এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে।”
চুরি যাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানান্তরিত হয়েছিল ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কে (আরসিবিসি)। আর শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়ান ব্যাঙ্কে যায় ২ কোটি ডলার।
সুইফট কোডের মাধ্যমে অভিনব এই চুরির পরপরই শ্রীলঙ্কার অর্থ ফেরত পাওয়া গেলেও, ফিলিপিন্সে আসা সব অর্থ উদ্ধার করা যায়নি। আট কোটি ১০ লাখ ডলারের অধিকাংশই রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে দেশটির বিভিন্ন স্থানের জুয়ার টেবিলে চলে যায়। এ ভাবেই ওই টাকা আইনগতভাবে বৈধ টাকায় (সাদা টাকা) পরিণত করেছিল চোররা।
পরবর্তীকালে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটির শুনানিতে অর্থ পাচারে সম্পৃক্ত ক্যাসিনো মালিক কিম অং দেড় কোটি ডলার ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিন ধাপে তিনি ওই টাকা দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছে জমা দেন। পরে এই অর্থ ফেরত পেতে ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাঙ্ককে একটি আইনি নথি ও প্রতিবেদন লিপিবদ্ধ করতে পরামর্শ দিয়েছিল।
এর আগে চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ‘বাংকো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপিনাসকে’ (বিএসপি) বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি হওয়া টাকার ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশটির একটি আঞ্চলিক আদালত।